১৭তম বিজেএস: প্রিলিমিনারি পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

মো. রুহুল আমিন রুবেল
মো. রুহুল আমিন রুবেল  © টিডিসি ফটো

আগামী শনিবার (৪ মে) ১৭তম বিজেএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে একজন পরীক্ষার্থী কীভাবে ভালো করবে, নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সে পরামর্শ দিচ্ছেন ১৬তম বিজেএসে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রুহুল আমিন রুবেল। পরামর্শ নিয়েছেন, শাহ বিলিয়া জুলফিকার-

১) সিলেবাস ও পূর্ববর্তী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করা: সিলেবাসে প্রত্যেক বিষয়ের টপিকগুলো দেখতে হবে এবং যে যে টপিক থেকে বারবার প্রশ্ন এসেছে, সেগুলো বেশি বেশি রিভাইজ দিতে হবে। প্রত্যেক বিষয়ের মানবণ্টন অনুযায়ী গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।

২) সাধারণ বিষয়াবলি ও আইনের বিষয়াবলি উভয়ে গুরুত্ব দেয়া: সাধারণত সাধারণ বিষয়াবলিতে ৪০ নাম্বার আর আইনের বিষয়াবলিতে ৬০ নাম্বার বরাদ্দ থাকে। উভয় বিষয়ে এমনভাবে পড়তে হবে যেন পাস নাম্বার ৫০ নিশ্চিত করা যায়।

৩) নিজের দক্ষতা ও দুর্বলতা নির্ণয় করা: সাধারণ বিষয়াবলি কিংবা আইনের বিষয়াবলি, যে বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা আছে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে, যেন পরীক্ষায় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার তোলা যায়। কোনো বিষয়ে খুব বেশি দুর্বলতা থাকলে সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। তবে তা কাটিয়ে ওঠা না গেলেও খুব ঘাবড়ানোর কিছু নেই, কারণ, প্রিলিতে সব মিলিয়ে ৫০ নাম্বার পেলেই চলবে, সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়ার আবশ্যকতা নেই।

৪) মানবণ্টন দেখে পড়া: সাধারণত যে বিষয়ে প্রিলিতে কম পড়ে বেশি নাম্বার তোলা যায়, সে বিষয়গুলো বিশেষভাবে পড়তে হবে যেন সে বিষয়ে নির্ধারিত মার্কস এর মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার তোলা যায়, কোনোভাবেই যেন নাম্বার মিস না হয়। আমার কাছে মনে হয়, সংবিধান, পারিবারিক আইন, বিশেষ আইন, এগুলো কম পড়েও বেশি নাম্বার তোলা যায়।

৫) সমসাময়িক বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া: দেশে ও বিদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট করে রাখা যেতে পারে যেন পরীক্ষার পূর্বে এক নজরে দেখা যায়।

৬) সাধারণ বিষয়াবলিতে ভালো করার উপায়: বিসিএস, বিজেএসসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পূর্বের প্রশ্নোত্তর পড়া সহ প্রত্যেকটি বিষয়ের বেসিক বা মূল বিষয়গুলো পড়তে হবে। যে যে টপিক থেকে বার বার প্রশ্ন করা হয়ে থাকে, সেগুলো ভালোভাবে রিভাইজ দিতে হবে। কোন আঙ্গিকে প্রশ্ন করা হয়, সে প্যাটার্ন ও স্টাইল খেয়াল করতে হবে। 

বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রে বানান, বিভিন্ন ভাষার শব্দ, পারিভাষিক শব্দ, প্রতিশব্দ, বিপরীত শব্দ, উপসর্গ, প্রকৃতি, প্রত্যয়, সমাস, সন্ধি, কারক ও বিভক্তি, ধবনি পরিবর্তন, বাগ্‌ধারা ভালোভাবে দেখতে হবে। সাহিত্য অংশের জন্য আধুনিক যুগটা ভালোভাবে পড়তে হবে। 

৭) আইনে ভালো করার উপায়: আইনে যাঁরা প্রকৃতভাবে ভাল, তাঁদের জন্য খুব বেশি দুশ্চিন্তা নেই। এ পর্যন্ত যা যা পড়েছেন, আয়ত্ত করেছেন, এখন সেগুলো বারবার রিভাইজ দিন। গুরুত্বপূর্ণ আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা, উপধারা, ব্যাখ্যা, সংখ্যা, শাস্তি, তদন্ত, জামিন ও আপিল ও বিশেষ বিধান ভালোভাবে পড়ে নিন। এক নজরে প্রত্যেক আইনের সেকশন হেডিং ভালোভাবে পড়ে নিন। 

৮) দেওয়ানী আইনে ভাল করার উপায়: সিপিসি'র গুরুত্বপূর্ণ সেকশন, অর্ডার এন্ড রুল ভালোভাবে পড়ুন, এস আর এক্টের ইলাস্ট্রেশনগুলো ভালোভাবে পড়ুন, মোকদ্দমা ট্রান্সফারের বিধান সহ বিভিন্ন জুরিসডিকশন পড়ুন, মোকদ্দমা, আপিল, রিভিশন, রিভিউ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তামাদি স্মরণ রাখুন। সিপিসি, এমএফএলও, পারিবারিক আদালত আইন, শ্রম আইন, অর্থঋণ আদালত আইন ও গ্রাম আদালত আইনে এডিআর সম্বন্ধে ভাল ধারণা রাখুন।

৯) ফৌজদারি আইনে ভাল করার উপায়: বিভিন্ন আদালতের গঠন, জুরিসডিকশন, কগনিজেন্স পাওয়ার, ট্রায়াল ও পানিশমেন্ট দেয়ায় পাওয়ার সহ রিমান্ড, বেইল বিষয়ে ভালোভাবে পড়ুন, মামলা ট্রান্সফার, আপিল, রিভিশন সহ বিশেষ বিধানের বিষয়ে ভাল ধারণা রাখুন। গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত ধারা ভালোভাবে পড়ুন, ইলাস্ট্রেশন, এক্সসেপশন, শাস্তির পরিমাণ ইত্যাদি পড়ুন। সংজ্ঞা, সম্পত্তি ও মানবদেহ বিষয়ে অপরাধ সহ জাল-জালিয়াতি সংক্রান্ত ধারাগুলো ভালোভাবে পড়ুন। সাক্ষ্য আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিধান বিশেষ করে রিলিভেন্ট, ইরিলিভেন্ট, পাবলিক ও প্রাইভেট ডকুমেন্টস, মে প্রিজিউম, শ্যাল প্রিজিউম, কনক্লুসিভ প্রুফ সহ বিভিন্ন স্টেটমেন্ট, প্রমাণের পদ্ধতি, জবানবন্দি, জেরা, করোবোরেশন  সহ সর্বশেষ সংশোধনী ভালোভাবে পড়ুন।

১০) পারিবারিক আইনে ভাল করার উপায়: মুসলিম আইনে বিয়ে, দেনমোহর, ডিভোর্স, হেবা, উইল, গার্ডিয়ানশিপ, কোরানিক শেয়ারারদের বিধান, রাদ, আউল সহ স্পেশাল সিচুয়েশন বিষয়ে ভাল ধারণা রাখতে হবে। হিন্দু ল এর ক্ষেত্রে বিবাহের প্রকারভেদ, দত্তক, দায়ভাগা ও মিতাক্ষরা উত্তরাধিকার আইন, স্ত্রীধন, দান, উইল সহ এমএফএলও, বিয়ে বিচ্ছেদের ডিক্রি, পারিবারিক আইন আদালত বিষয়ে ভালোভাবে পড়তে হবে। 

১১) সাংবিধানিক আইনে ভালো করার উপায়: সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজি পাঠ ভালো ভাবে দেখতে হবে। প্রত্যেকটা আর্টিকেল আলাদা করে পড়তে হবে। উচ্চ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশন, সাংবিধানিক মামলাগুলো, উপমহাদেশ সহ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের রায় পড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ডকট্রিন পড়তে হবে। জি সি এক্টের ব্যাখ্যাগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।

১২) সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনে ভালো করার উপায়: চুক্তির সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উপাদান, বৈধতা, চুক্তিভঙ্গের ফলাফল ভালোভাবে দেখতে হবে। ইনডেমনিটি, গ্যারান্টি, বেইলমেন্ট, প্লেজ, এজেন্সি ভালোভাবে পড়তে হবে।সম্পত্তির সংজ্ঞা, কী কী ট্রান্সফার করা যায় না, কে কে ট্রান্সফার করতে পারে, রুল অ্যাগেইনস্ট পারপিচুইটি, ইলেকশন, লিস পেনডেন্স, পার্ট পারফরম্যান্স, মর্গেজ, লিজ, এক্সচেঞ্জ, গিফট ভালোভাবে পড়তে হবে।বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন, রেজিস্ট্রেশন সময়, স্থান, কারা কারা রেজিস্ট্রেশন জন্য উপস্থাপন করতে পারবে, রেজিস্ট্রেশন করা বা না করার ফলাফল, প্রত্যাখান ও প্রতিকার এবং শাস্তি পড়তে হবে। স্যাট ও ন্যাট এক্টের সংজ্ঞাগুলো পড়তে হবে। খতিয়ান তৈরি ও সংরক্ষণ পদ্ধতি, সাবলেটিং নিষিদ্ধ, প্রিএম্পশন, সম্পত্তির অধিকার বিলুপ্তি, এলুভিয়ন, ডিলুভিয়ন, আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর পদ্ধতি, সর্বোচ্চ জমির মালিকানা, ভূমি জরিপ, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, আপিল ট্রাইব্যুনাল, তামাদি, আপিল, রিভিউ, রিভিশন, খাজনা প্রদান পড়তে হবে। অকৃষি জমি ব্যবহারের উদ্দেশ্য, টিনেন্ট, আন্ডার টিনেন্ট বিষয়ক প্রভিশন, প্রিএম্পশন এন্ড ইম্প্রোভমেন্ট বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে।

১৩) বিশেষ আইনগুলোতে ভাল করার উপায়: লিখিত পরীক্ষায় অপশনাল ২টি বিষয় থেকে যে-কোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকলেও প্রিলিতে উভয় বিষয়ে প্রশ্নোত্তর করতে হয়।তাই সবগুলোতেই গুরুত্ব দিতে হবে।বিশেষ করে সংজ্ঞা, শাস্তি, তদন্ত, বিচার, জামিন, আপিল, রিভিশন, তামাদি, বিশেষ বিধানগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। আর শিশুর সংজ্ঞা, শিশু বিষয়ক ডেস্ক, প্রবেশন কর্মকর্তা, শিশু আদালতের গঠন, জামিন, বিচার, বিকল্প পন্থা, বিভিন্ন শাস্তি ও আপিলের বিধান পড়তে হবে। নারী ও শিশু আইনে সংজ্ঞা, শাস্তি, ট্রাইব্যুনালের গঠন, জবানবন্দি লিপিবদ্ধকরণ, তদন্তের সময়সীমা, বিচার, আপিলের বিধান, মিথ্যা মামলার শাস্তি, ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের, ডিএনএ ও মেডিকেল টেস্ট, শিশুর ভরণপোষণ বিষয়ের বিধানাবলি এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ট্রাইব্যুনালের জবাবদিহিতা পড়তে হবে। আইনগত সহায়তা প্রাপ্তির যোগ্যতা, আবেদন, প্রত্যাখান, আপিল, বিভিন্ন আদালতে কমিটি গঠন পড়তে হবে। স্পেশাল পাওয়ার্স এক্টে সংজ্ঞা, শাস্তি, ট্রাইব্যুনালের গঠন ও ক্ষমতা, বিচার, আপিল, বিশেষ বিধান পড়তে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংজ্ঞা, শাস্তি, তদন্ত, বিচার, আপিল, বিশেষ বিধান পড়তে হবে।দুদকের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সহ অনুসন্ধান, তদন্ত, বিচার, শাস্তি পড়তে হবে। শিডিউল পড়তে হবে। মানি লন্ডারিংয়ের সংজ্ঞা, শাস্তি, তদন্ত, বিচার, অবরুদ্ধ, ক্রোক, বাজেয়াপ্তি, আপিল, বিএফআইই এর গঠন, ক্ষমতা ও রিপোর্টিং এজেন্সি, শাস্তি পড়তে হবে। বিশেষ জজ আদালতের গঠন, ক্ষমতা, তদন্তের বিশেষ সময় সীমা, সাক্ষ্যের বিশেষ নিয়ম, আপিল, রিভিশন, ট্রান্সফার পড়তে হবে। আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ কী কী, শাস্তি, তদন্ত ও বিচারের সময় সীমা, আদালতের গঠন ও ক্ষমতা, আপিল, বিশেষ নিয়ম পড়তে হবে। চেকের সংজ্ঞা, কখন ও কীভাবে চেক ডিজঅনার হয়, চেকের মামলা করার নিয়ম, বিচার, শাস্তি, আপিল, উচ্চ আদালতেরর সিদ্ধান্ত পড়তে হবে। মানব পাচারের সংজ্ঞা, শাস্তি, তদন্ত, বিচার, আপিল পড়তে হবে। সাইবার সিকিউরিটি এক্টে বিভিন্ন সংজ্ঞা, এজেন্সি ও কাউন্সিলের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী, গুরুত্বপূর্ণ ধারায় শাস্তি, তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদি পড়তে হবে।

 

সর্বশেষ সংবাদ