৪৬তম বিসিএস: শেষ সপ্তাহে যেভাবে প্রস্তুতি নিলে প্রিলিতে ভালো করা সম্ভব

গাজী মিজানুর রহমান
গাজী মিজানুর রহমান   © টিডিসি ফটো

আগামী শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই বিসিএসেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা পদের তুলনায় অনেক বেশি। ৪৬তম বিসিএস প্রিলির আর বাকি আছে ৭ দিন মাত্র। পরীক্ষার আগের ৭ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি বিসিএস পরীক্ষার্থীর জন্য। আপনি এই শেষ ৭ দিন তথা শেষ সময়ে কীভাবে নিজে গুছিয়ে নিচ্ছেন পরীক্ষার জন্য সেটা টার্ম কার্ড হিসেবে কাজ করবে। তবে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার দিনটা।

আরও স্পেসিফিক করে বললে, ২৬ এপ্রিল সকাল ১০টা-১২টা; এই ২ ঘণ্টার সময়টুকু। কারণ, অনেক ভালো প্রস্তুতি নিয়েও অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারেন না। হয়তো নার্ভাস হয়ে যান, অথবা এমসিকিউ দাগাতে গিয়ে কনফিউজড হয়ে যান। অথচ, পরীক্ষার আগের এক সপ্তাহে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এই ধরনের সমস্যা উতরানো সম্ভব অনেকাংশে।

এই শেষ সময়ের চ্যালেঞ্জটুকু ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারলে আপনার জীবন বদলে যেতে পারে। হয়ে যেতে পারেন সরকারি ফার্স্ট ক্লাস অফিসারের একজন পথযাত্রী। যদিও বিসিএস প্রিলি পাশ করলেই আপনি বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাবেন, বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু বিসিএস হওয়ার স্বপ্ন পূরণের এটিই প্রথম ও ক্রিটিক্যাল পার্ট। কারণ এই প্রিলিতে বেশি পরীক্ষার্থী ফেল করবে, আর এই প্রিলি পাশ করতে না পারলে রিটেন, ভাইভা দেয়া যাবে। প্রিলি পাশ করলেই বাকিগুলো পাশ করা তুলনামূলক কিছুটা সহজ।

তো এখন প্রশ্ন হলো, ‘এই মুহূর্তে কি কি পড়া উচিত আর কি কি করা উচিত?’ 

১) আমি বলবো আপনার প্রস্তুতি খারাপ বা অসম্পূর্ণ এই মুহূর্তে এটা মাথায় আনবেন না। নিজের প্রতি নিজে আস্থা রাখুন যে, ‘‘আমি পারবো, আমাকে এই প্রিলি পাশ করতেই হবে।’’ সেজন্য প্রস্তুতি নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা না করে এখন শুধু Important টপিকগুলো বারবার রিভিশন দিন। বিশেষ করে যে টপিকগুলো পরীক্ষায় বারবার আসে কিন্তু ভুল বেশি হয়, এমন কমন টপিকগুলো। যেমন- English Preparation, Phrases & Indioms, সাধারণ ও বাংলায় বিভিন্ন সাল ও নাম ইত্যাদি।

আমি আবারও বলছি, আপনি এই মুহূর্তে শুধু BCS প্রিলির জন্য Important এমন টপিকগুলো বারবার পড়ুন (কোন কোন টপিকগুলো বেশি Important তার জন্য "BCS Preliminary Analysis" বইয়ে প্রদত্ত সাজেশনটি ফলো করলে বেশি উপকৃত হবেন আশা করি)।

Important টপিকগুলো বারবার এজন্য পড়বেন, কেননা এই টপিকগুলো থেকে প্রশ্ন থাকবে নিশ্চিত। কমনও পাবেন অনেক, কিন্তু পরীক্ষার হলে কনফিউজড হয়ে গেলে নেগেটিভ মার্কসই আপনার লালিত স্বপ্নকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।

২) সাম্প্রতিক সব না পড়ে কেবল পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পড়ুন। বাজারে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের অনেক বই পাবেন, কিন্তু সেখানে ভুলের পরিমাণ অনেক বেশি। তার চেয়ে বড় কথা হলো এসব বইয়ে অপ্রয়োজনীয় তারিখ ও ঘটনার বর্ণনা দেয়া। আপনি বুঝতেই পারবেন না যে, কোন তারিখ আর কোন সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার জন্য Important. (সেজন্য BCS Real Model Test  বইয়ের প্রথম অংশে যে সাধারণ জ্ঞান আছে তা পড়ে নিতে পারেন। এই বইয়ে অপ্রয়োজনীয় তারিখ যা পরীক্ষায় আসার মতো না, তা পরিহার করা হয়েছে ও অপ্রয়োজনীয় সাম্প্রতিক তথ্য পরিহার করা হয়েছে।)

৩) চাইলে যে কোনো ভালো একটি মডেল টেস্ট বই থেকে এখন নতুন করে ২টি মডেল টেস্ট ঘড়ি ধরে দিয়ে দেখতে পারেন, কত পান দেখুন। যে সাবজেক্টে কম পান যে সাবজেক্টটি ভালো করে পড়ুন।

৪) ম্যাথ বা ইংলিশ অথবা দুটি বিষয় নিয়ে যাদের চিন্তা বেশি, সেই চিন্তা বাদ দিন। কারণ প্রিলিতে ম্যাথ ১৫ মাত্র, ইংলিশ ৩৫, মানে মোট ৫০। সেখান থেকে মাঝারি মানের পরীক্ষার্থীরা অনায়াসে ২০-২৫ পেয়ে থাকেন সাধারণত। আর বিসিএস প্রিলিতে আলাদাভাবে পাশ করতে হয় না, সবমিলিয়ে ১২০-১২৫ এর মতো পেলেই আপনি সেইফ জোনে থাকবেন, আশা করা যায়। সাধারণ জ্ঞানের ১টি প্রশ্নে জন্য যেমন ১ নম্বর পাবেন, আবার বড় একটি ম্যাথের জন্যও ১ নম্বরই পাবেন। 'BCS Preliminary Analysis' বইয়ের English Language & Literature পার্ট থেকে ৪৫তম বিসিএস প্রিলিতে ৩৫ নম্বরের মধ্যে ৩১ নম্বর কমন ছিল (গ্রামারের নিয়মসহ)। আর English Literature -এ ১টি ছাড়া বাকি সবগুলো প্রশ্ন "BCS Preliminary Analysis" বইয়ের অল্প কয়েক পৃষ্ঠা থেকে কমন ছিল। তাই যারা English Literature নিয়ে বেশি টেনশন করছেন বা ইংলিশ লিটারেচার পড়লে মনে থাকে না তারা শেষ সময়ে "BCS Preliminary Analysis" বই থেকে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। ইংলিশ লিটারেচার মনে রাখার অনেক সহজ কৌশল রয়েছে বইটিতে।

৫) Vocabulary মনে না থাকলে, এখন শুধু বিগত সালে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা Vocabulary গুলো MCQ আকারে পড়ুন, মনে থাকবে বেশি এবং কমনও পাবেন আশা করি।

৬) Mental Ability নিয়ে বেশি টেনশন করার কিছু নেই। কিছু নিয়ম রপ্ত করলে অনায়াসে ১৫ নম্বরের মাঝে ১০-১২ এর উত্তর করতে পারবেন। 'BCS Preliminary Analysis' বইয়ে সেই নিয়মগুলো Analysis করে সহজভাবে দেওয়া। সাথে বিগত সালের বিসিএস প্রিলির Mental Ability প্রশ্নগুলো আলাদাভাবে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।

৭) 'সুশাসন, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ' পড়ে যারা কনফিউজড হয়ে যান তারা 'BCS Preliminary Analysis' বই থেকে এই সংক্রান্ত স্পেশাল টেকনিকগুলো একপলক দেখে নিতে পারেন। ৪৫তম বিসিএস প্রিলিতে 'BCS Preliminary Analysis' বইয়ের 'সুশাসন, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ' পার্ট থেকে হুবহু ৮টি প্রশ্ন ও নিয়ম থেকে ১টি একটি প্রশ্ন কমন ছিল। অর্থাৎ, ১০টি প্রশ্ন থেকে ৯টি প্রশ্ন কমন ছিল অল্প কয়েক পৃষ্ঠা থেকে।

৮) পরীক্ষার আগের দিন অন্তত আপনার মতো যে বিসিএস পরীক্ষার দিবে এমন একজনকে বেছে নিয়ে একজন আরেকজনকে শুধু পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ সাল তারিখ, নামগুলো জিজ্ঞেস করে আলোচনার মাধ্যমে পড়লে ভালো ফল পাবেন পরীক্ষার হলে। কারণ এইভাবে মনে বেশি থাকে। (আমি তাই করতাম আমার রুমমেটের সাথে)

৯) পরীক্ষার হলে আমার মতে সাধারণ জ্ঞান বা বাংলা দিয়ে উত্তর শুরু করা উচিত; সাধারণ গণিত সবার পরে উত্তর করা উচিত । কারণ সাধারণ জ্ঞানে বেশি নাম্বার উঠাতে পারলে কনফিডেন্স বেড়ে যাবে। আর গণিত যত ভালো পারুন না কেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে ২-১ বড় বা ঝামেলাপূর্ণ গণিত থাকেই। গণিত করতে গিয়ে সময় বেশি চলে গেলে পরে সময়ের চিন্তা মাথা গরম হয়ে গেলে পরীক্ষা আর ভালো হবে না।

১০) অপশনে সঠিক উত্তর না থাকে প্রচলিত উত্তরটি করে আসবেন। যেমন দিলো "রঙিন টেলিভিশন থেকে কোন রশ্মি বের হয়?" সঠিক উত্তর: মৃদু রঞ্জন রশ্মি না থাকলে, প্রচলিত উত্তর "গামা রশ্মি" দিবেন।

১১) আপনি দুটি বা ৩ টি উত্তর সঠিক থাকলে সবচেয়ে প্রচলিত উত্তরটি দিবেন। যেমন- প্রশ্ন: নিজের কোন উপজাতিটি পিতৃতান্ত্রিক পরিবার? ক। মারমা গ। খাসিয়া। গ। সাঁওতাল ঘ। গারো। এখানে অপশন (ক) ও (গ) দুটিই সঠিক। কিন্তু বেশি প্রচলিত হলো ‘মারমা’। তাই এখানে ‘মারমা’ উত্তর করাই শ্রেয়।

১২) প্রশ্নে ভুল থাকলে যেমন টাইপিং বা প্রিন্টিং মিস্টেক, সেটা বোঝা গেলে সেই প্রশ্ন ধরে উত্তর করবেন।

১৩) পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম হওয়া আবশ্যক। না হয় পরীক্ষার হলে মাথা কম কাজ করতে পারে।

১৪) পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্তত ১ ঘণ্টা আগে পৌঁছার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে সাথে বই নিয়ে কেন্দ্রে সামনে পড়বেন।

আমি এখানে আমার ৩৪তম-৪০তম টানা ৬টি বিসিএস প্রিলি পাশ করার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেয়ার করলাম। এরা দ্বারা কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হলে আমার পরিশ্রম সার্থক। ধন্যবাদ সবাইকে। সকল বিসিএস প্রত্যাশীর জন্য শুভকামনা রইল।

লেখক: মোটিভেশনাল স্পিকার ও ক্যারিয়ার কনসালটেন্ট

 

সর্বশেষ সংবাদ