বার কাউন্সিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষা দেশের প্রতিটি আইন ছাত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী আইনজীবী হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। একজন পরীক্ষার্থী কীভাবে বার কাউন্সিল পরীক্ষা নিবে; নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সে পরামর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আইনগ্রন্থ লেখক অ্যাডভোকেট রায়হান সোবহান। তার অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ শুনেছেন— শাহ বিলিয়া জুলফিকার।
যে বিষয়ে পরীক্ষা হয়
দেওয়ানি কার্যবিধি আইন ১৯০৮, ফৌজদারি কার্যবিধি আইন ১৮৯৮, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭,দণ্ডবিধি ১৮৬০, সাক্ষ্য আইন ১৮৭২,তামাদি আইন ১৯০৮ এবং বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ এ ৭ টি বিষয় বার কাউন্সিল পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত।
এম.সি.কিউ প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ
পরীক্ষায় পাশ করার জন্য বেয়ারঅ্যাক্ট বা মূল আইন পড়া ছাড়া পাশ করা সম্ভব নয়। আপনাকে অবশ্যই নিয়মিতভাবে বেয়ারঅ্যাক্ট বা মূল বই পড়তে হবে। এক্ষেত্রে বেয়ারআ্যাক্ট পড়ার জন্য বা সহজে রপ্ত করার জন্য প্রিলি মাস্টার বইটি হতে পারে সবচেয়ে সহায়ক। এ বইটি মূল আইনেরই সহজ ভার্সন। যেখানে শুধু ধারা পড়েই সহজে রপ্ত করে নেওয়া সবার জন্য একইরকম সহজ হয় না।
সেক্ষেত্রে বইটিতে প্রত্যেকটি ধারা সহজ ভাষায় লেখাসহ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া আছে এবং প্রত্যেকটি ধারার মূল যে উপজীব্য তা আলাদা করে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও বিগত বছরের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস এবং সেগুলো পড়তে হবে। এ জন্য বাজারে থাকা যেকোনো প্রশ্ন ব্যাংক সংগ্রহ করতে পারেন। তাছাড়াও প্রিলি মাস্টার যেহেতু ধারানুসারে প্রতিটি সাবজেক্ট চ্যাপ্টার অনুযায়ী ভাগ করা। তাই যে সেকশন থেকে আগের বছর প্রশ্ন এসেছে সে সেকশনের নিচেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেওয়া আছে। এতে করে সেকশন পড়েই সহজে বুঝতে পারছে কী কী ধরনের প্রশ্ন আগে এসেছে এবং আসতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘ফরগেটিং কার্ভ’ থিওরিতে পড়াশোনা, প্রথমবারেই জজ হলেন ঢাবির নিশাত
তাছাড়াও নিয়মিত মডেল টেস্ট দিলে প্রস্তুতি গোছানো হবে। প্রিলি পরীক্ষা ১০০ নম্বরের হয়ে থাকে।আর পাস নাম্বার হলো ৫০। নিজেকে যাচাই করতে মিনি ‘ল’ স্কুলের ‘বার মডেলটেস্ট’ বইটি সংগ্রহে রাখা অত্যাবশকীয়। এতে প্রত্যেকটি সাবজেক্ট এর আলাদা টেস্ট এর পাশাপাশি ১০০ নম্বরের মডেল টেস্ট দেওয়া আছে। এতে করে সাবজেক্টিভ আপনার প্রিপারেশন যাচাই করা যেমন সহজ হয় সাথে পুরো সাতটি সাবজেক্ট একসাথে ১০০ নম্বরের মডেল টেস্ট দিয়ে নিজের প্রিপারেশন সম্পর্কে যাচাই করা সহজ হয়।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যেখানে সঠিক প্রস্তুতি এবং কার্যকরী কৌশল ব্যবহার করলে সফল হওয়া সম্ভব। বিগত সালগুলির প্রশ্নের বিশ্লেষণ করে প্রস্তুতি নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাধারণত পরীক্ষায় প্রায় অর্ধেকের বেশি প্রশ্ন বিগত বছরের থেকে কমন থাকে। তাই, ‘লিখিত মাস্টার’ বইটি অত্যন্ত সহায়ক, যেহেতু এতে বিগত বছরের প্রশ্নগুলি চ্যাপ্টার এবং ধারার ধারাবাহিকতা অনুসারে সাজানো হয়েছে। আগে বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষায় বর্ণনামূলক (descriptive) প্রশ্ন আসত, যা অনেক লেখার মাধ্যমে উত্তর দিতে হতো, কিন্তু বর্তমানে প্রশ্নগুলো ছোট এবং ক্রিয়েটিভ হয়ে গেছে, যা অল্প সময় এবং কম লেখায় অধিক নম্বর পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। এর মানে হলো, আপনাকে প্রশ্নের ধরন বুঝে সংক্ষেপে এবং সঠিকভাবে উত্তর দিতে হবে।
আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা পড়া
বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় দেওয়ানি কার্যবিধি আইন ১৯০৮, ফৌজদারি কার্যবিধি আইন ১৮৯৮, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭, দণ্ডবিধি ১৮৬০, সাক্ষ্য আইন ১৮৭২, তামাদি আইন ১৯০৮, এবং বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২-এর গুরুত্বপূর্ণ ধারা ভালোভাবে পড়তে হবে। এসব ধারার মধ্যে যে বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোকে সাজেশন অনুযায়ী অগ্রাধিকার দিয়ে পড়ুন।
সময় ব্যবস্থাপনা
পরীক্ষায় সময়ের প্রতি খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। ৪ ঘণ্টায় (২৪০ মিনিট) ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হতে পারে, অর্থাৎ প্রতি ১ নম্বরের জন্য ২.৪ মিনিট সময় পাবেন। তাই, প্রতিটি প্রশ্নে সঠিক সময়ে উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
সামগ্রিক প্রস্তুতি
লিখিত পরীক্ষায় সফল হতে হলে সময়মতো এবং সঠিকভাবে উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি, বিগত বছরের প্রশ্নের বিশ্লেষণ, প্রয়োজনীয় আইনের ধারাগুলোর গভীর পড়াশোনা এবং সময়ের প্রতি সঠিক মনোযোগ দিতে হবে। কোনো এক বিষয়ের প্রতি অর্ধেক প্রস্তুতি রাখা যাবে না। প্রত্যেকটি বিষয়ই সমান গুরুত্বের দাবিদার। তাই, সকল বিষয়ের পড়াশোনা যথাযথভাবে শেষ করতে হবে।
ভাইভা প্রস্তুতি
বার কাউন্সিলের ভাইভা পরীক্ষাটি মূলত একটি মানসিক পরীক্ষা, যেখানে ঘাবড়ে যাওয়ার কোন জায়গা নেই। বরং এটি মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের জ্ঞান এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে সঠিক উপস্থাপন করার সুযোগ। তাই ভাইভা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।প্রথমত, ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আত্মবিশ্বাস। আপনি যা পড়েছেন তা মনে রাখতে হবে এবং তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ভাইভা শুরু হওয়ার আগে, আগে যারা ভাইভা দিয়েছে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত কার্যকর। তারা কী ধরনের প্রশ্ন পেয়েছিলেন, তাদের উত্তর দেওয়ার কৌশল কী ছিল—এসব জানলে আপনাকে অনেক সাহায্য হবে।
ভাইভাতে সাধারণত মৌলিক প্রশ্ন, যেমন আইনের প্রধান ধারা, গুরুত্বপূর্ণ মামলার নাম এবং সেগুলোর মূল বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। বিশেষভাবে, যে সব মামলার সংখ্যা বেশি বা যেগুলো প্রায়ই আলোচিত হয়, সেখান থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ধরনের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ এবং পূর্ববর্তী পরীক্ষার্থীদের ভাইভা অভিজ্ঞতা শোনা অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। ভাইভা মাস্টার বইটি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক। এতে পূর্ববর্তী ভাইভা পরীক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা, প্রশ্নের ধরন এবং উত্তরের কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়। এটি আপনাকে ভাইভা প্রস্তুতির জন্য একটি কার্যকর নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে।
এছাড়াও, ভাইভার জন্য প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে, নিজের বার অ্যাসোসিয়েশন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বার কাউন্সিলের কাঠামো, সাম্প্রতিক আইনগত বিষয়াদি, এবং আপনার নিজস্ব কেইস ডাইরি সম্পর্কে পুরোপুরি জানাশোনা থাকা উচিত। এতে করে ভাইভা পরীক্ষার সময় আপনার জ্ঞান এবং প্রস্তুতি আরও দৃঢ় হয়ে উঠবে। তবে, ভাইভা শুধু পড়াশোনা নয়, আপনার প্রেজেন্টেশন এবং ব্যক্তিত্বও অনেক বড় ভূমিকা রাখে। আত্মবিশ্বাসী ও পরিষ্কারভাবে উত্তরের মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত দক্ষতা প্রদর্শন করুন এবং সঠিকভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করুন।