তত্ত্বাবধারক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঢাবি সাদা দলের মানববন্ধন

ঢাবি সাদা দলের মানববন্ধন
ঢাবি সাদা দলের মানববন্ধন   © টিডিসি ফটো

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধারক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি-জামাত সমর্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংগঠন সাদা দল। 

আজ সোমবার (৫ জুন) দুপুরে ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে
সাদা দল সমর্থিত শিক্ষকরা এ দাবি জানান। এসময় দ্রব্যমূলের উদ্ধগতি, বিদ্যুৎ সংকট, আমেরিকার ভিসা নীতি, হামলা-মামলার মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদ জানান তারা।

মানববন্ধনে সাদা দলের আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, বিরোধী দলের প্রতি সরকারের যে দমন নিপীড়নীতি সেই নীতির আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলের উপর নিপীড়ন নির্যাতন চালাচ্ছে। আমাদের আজকের এই গণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আমাদের কিছু ছাত্র আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছে। আমরা একটি বড় মহড়াও দেখেছি। আমরা তাদের এই কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের যে দাবি সে দাবির কিছুটা প্রমাণও তারা দিয়েছে। আমি তাদের এ কাজে তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সেজন্য নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারাদেশের মানুষ আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছে। আমরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানাই।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির বিবেক। বাংলাদেশ বা জাতি যখনই কোনো সংকটে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। আজ বাংলাদেশ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকরা একটি দাবিকে কেন্দ্র করে এখানে সমবেত হয়েছে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র। যখনই জাতি কোন ক্রান্তিলগ্নে পরে তখনই শিক্ষকরা জাতিকে নানাভাবে দিক নির্দেশনা দেয়। তারই বহিঃপ্রকাশ আজকের আমাদের এই মানববন্ধন। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিগত কয়েকটি নির্বাচনকালীন সময়ে তাদের আচার-আচরণ কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে বাংলাদেশে কোন দলীয় সরকারের অধীনে সঠিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না, কখনো সম্ভব নয়। এটি দেশের সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে বিধায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে রাজধানী পর্যন্ত সকল মানুষের এখন একটি দাবী ভোটের অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভোটেরও অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠা করার একটি পন্থা সেটি হলো একটি সঠিক নির্বাচন। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে তিনি বলেন, 
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আমাদের অজানা কোন বিষয় নয়, এটি আলোচনারও বিষয় নয়। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেগুলো না হলে আমাদের সংসার চলে না সেগুলোর দাম বাড়ছে। এই দ্রব্যমূল্যের উদ্যগতির জন্য যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সরকার তাদের চিহ্নিত করার কোন চেষ্টাই করছে না অথবা ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ এখানে যে সিন্ডিকেট কাজ করে সেই সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। এই অব্যবস্থাপনার কারণে মার্কেট সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমরা দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। 

সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটা নজিরবিহীন। লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আমরা এর প্রতিবাদও করতে পারব না। আমাদের ওপর নানাভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমেরিকার ভিসানীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে উগান্ডা-নাইজেরিয়ার সমপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে অপমানের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে।

সাদা দলের বাণিজ্য অনুষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, গত মে মাসের ২৪ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে।  যা একইসাথে লজ্জাজনক এবং আশার। ব্যবসা বাণিজ্য, জ্ঞান বিজ্ঞানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমরা আশাবাদী, যে প্রেক্ষিতে ভিসা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে তার মাধ্যমে আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানাই।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন খান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন আহমেদ ও সহযোগী অধ্যাপক এম এ কাউসার।  অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ