সুযোগ পেয়েও অনিশ্চিত মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১২:৫৬ PM , আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ০১:১৩ PM
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান। কিন্তু সুযোগ পেলেও লালমনিরহাটের দুর্গম চরাঞ্চলের মেধাবী এই শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে দারিদ্র্য।
মিজানুর সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চরকুলাঘাট গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে। গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের চরকুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও লালমনিরহাট সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি। ইউনিয়নে মিজানুরই প্রথম ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।
পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, ২০১২ সালে মারা যান মিজানের দিনমজুর বাবা মফিজ উদ্দিন। তখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন মিজান। ছয় সন্তানকে নিয়ে চরম অর্থাভাবে পড়েন মা জোবেদা বেগম। সম্বল বলতে আট শতক জায়গার ওপর ছোট একটা বসতভিটা। বড় ভাই মজিদুল এসএসসির গণ্ডি পেরোতে পারলেও অন্যরা রয়ে যায় অন্ধকারে। নবম শ্রেণি থেকে টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালান মিজান। ধার-দেনা, মায়ের মুষ্টির চাল আর অন্যের সহযোগিতায় এতদূর এগোতে পারলেও এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তিনি।
ভর্তি ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ প্রায় এক লাখ টাকার প্রয়োজন তার। আর তাই আনন্দের মাঝেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তার ছায়া। মিজান লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবেন কিনা এমন চিন্তায় মুষড়ে পড়েছে পুরো পরিবার।
এতদিন মানুষের বাড়িতে কাজ করে ও মুষ্টির চাল বিক্রি করে ছেলেকে পড়ালেখার খরচ দিয়েছেন জানিয়ে মিজানুরের মা জোবেদা বেগম বলেন, আমরা কিছু নেই। অনেক কষ্ট করে এতিম ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে এতদূর নিয়ে এসেছি। ভর্তি, প্রতি মাসের টাকা কীভাবে জোগাড় হবে সে চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে তার। সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা চান তিনি।
চিকিৎসক হয়ে তার বন্যাপীড়িত এলাকার দরিদ্র মানুষদের সেবার করার স্বপ্ন দেখেন জানিয়ে মিজানুর বলেন, ভর্তি ফি, পড়ালেখার উপকরণ ও কঙ্কাল, পোশাক এবং আনুষঙ্গিক খরচসহ প্রায় এক লাখ টাকা দরকার।
মিজানের প্রতিবেশি নাসিমা বেগম বলেন, ছোট থেকেই মিজানুর খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করে যাচ্ছে। পড়াশোনায় সে খুব ভাল। সরকারের কাছে আমরা মিজানুরের জন্য সহযোগিতা চাই। সে যেন পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হয়ে আসে।
সবার সহযোগিতা ও নিজের চেষ্টায় মিজানুর এত দূর এসেছে বলে জানান কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চর কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, মেডিকেলে পড়তে যে অর্থের প্রয়োজন তার যোগান দেওয়া তার ও পরিবারের পক্ষে খুবই কষ্টকর। এই ইউনিয়নে মিজানুরই প্রথম ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে বলেও তিনি জানান।