যেকোনো সময়ে ছাত্রদলের কমিটি, আলোচনায় যারা

ছাত্রদলের কমিটি
ছাত্রদলের কমিটি  © সংগৃহীত

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়া হচ্ছে। যে কোনো সময়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। পদপ্রত্যাশীরা লবিং-তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীও চূড়ান্ত করেছেন তিনি।

ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন শ্যামল। খোকন-শ্যামল কমিটির সমন্বয়নহীনতা ও ব্যর্থতার কারণে এবার কাউন্সিল করে কমিটি গঠনের পক্ষে নন বিএনপির শীর্ষ নের্তৃত্ব। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সমন্বয় করে তারা যোগ্য ও পরীক্ষিতদের হাতে ছাত্রদলের দায়িত্ব তুলে দিতে চান।

গত ১২ এপ্রিল ছাত্রদলের ৬০ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে তিনি সংগঠনের সুপার ফাইভদের বাদ দিয়ে উপস্থিত বাকী ৪৩ জনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। তারেক রহমান ছাত্রদলের নেতাদের কাছ থেকে বর্তমান কমিটির বিষয়ে কী করা উচিত, নতুন কমিটি করলে কী ধরনের নেতা নির্বাচন করা উচিত ও জেলা কমিটির বিষয়ে প্রশ্ন করেন। নেতাদের অধিকাংশই বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটির পক্ষে মত দেন। অল্প কয়েকজন কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে তারপর নতুন কমিটি গঠনের কথা বলেন। মতামত দেয়া সব নেতাই বলেন, তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই চূড়ান্ত।

এই বৈঠকে সুপার ফাইভের নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান কথা না বলায় বর্তমান কমিটির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে বলে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা দাবি করেন।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছাত্রদলের দেখভাল করেন। তিনি বর্তমান কমিটির ওপর অসন্তুষ্ট। নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি না দেয়া এবং ঢাকার কলেজগুলোর কমিটি না করায় ক্ষুব্ধ ছিলেন তারেক রহমান।

আরও পড়ুন- এক দশক রাজনীতি করেও ছাত্রদলে পদহীন ওরা

নেতারা আরও বলেন, ছাত্রদলের ১২৩টি সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর মধ্যে জেলা সমপর্যায়ের ২৮টিতে তারা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে পেরেছেন। এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের আর্থিক লেনদেনের বিষয় আলোচিত ছিলো। বিশেষ করে নরসিংদী, কুমিল্লা উত্তর কমিটি নিয়ে বেশি ক্ষুব্ধ ছিলেন তারেক রহমান। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্রাহ্মবাড়িয়ার কমিটি দিতে বললেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গড়িমসি করেন। পরে বাধ্য হয়ে কমিটি দেন তারা।

অন্যবারের মতো ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে একক ক্ষমতায় ছিলেন না সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারেক রহমান সমানভাবে সুপার ফাইভকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী কমিটি গঠনের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্বও বন্টন করে দেন। কিন্তু তারপরও ৯৫টি ইউনিটে কমিটি গঠন করতে পারেনি ছাত্রদল। দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হস্তক্ষেপ করেছেন। তারা নিজেদের পছন্দের লোকদের কমিটিতে আনতে চাপ প্রয়োগ করেন। দেখা যাচ্ছে, তারা যাদের কমিটিতে আনতে চাপ দিচ্ছেন তাদের চেয়েও যোগ্য নেতা ছিলেন। যার কারণে আমরা কমিটি করতে পারিনি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব বিষয়ে অবগত আছেন।

এদিকে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর গতকাল তারেক রহমান ছাত্রদলের শীর্ষ পাঁচ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, তারেক রহমান নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্রদল নিয়ে তিনি নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চান। সেক্ষেত্রে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে তিনি কিছু করতে চান না। তিনি যদি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে তাদের কোন আপত্তি আছে কিনা জানতে চান। জবাবে নেতারা, তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মেনে নেবেন বলে জানান। বৈঠকে নেতারা সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি করে থাকলে তার জন্য তারেক রহমানের কাছে ক্ষমা চান। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে তার স্নেহ থেকে তাদের বঞ্চিত না করার অনুরোধ জানান।

আরও পড়ুন- পদের রাজনীতিতে ভাগ্যবান ওরা

সূত্র জানায়, ছাত্রদলের এবারের কমিটি গ্রুপগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে করা হবে। এর আগে, কমিটির পর পদবঞ্চিতদের বিদ্রোহী হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এবার যাতে সে ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে তার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবার সঙ্গে বারবার করে কথা বলে নিচ্ছেন। এছাড়া কমিটিও তিনি অনেকটাই চূড়ান্ত করেছেন। শীঘ্রই নতুন কমিটি প্রকাশ করা হবে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে স্মারকলিপি

কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবিতে বিএনপির দপ্তর শাখার মাধ্যমে তারেক রহমান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ছাত্রদলের ৯৩ জন পদপ্রত্যাশী। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে পদহীন রয়েছেন। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি ৬০ সদস্যের। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই প্রথম কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা ছাড়া মেয়াদ শেষ করেছে সংগঠনটি। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য তারেক রহমানের বারবার তাগাদা থাকলেও সেটি মানেননি বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পরে শীর্ষ পাঁচ নেতাকে দ্রুত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দেন তিনি। কয়েকটি বৈঠক করলেও তারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যর্থ হন।

স্মারকলিপিতে পদবঞ্চিতরা বলেন, আমরা ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসময় থেকে শুরু করে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছি। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতিকেই আমরা আমাদের জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছি। বারংবার জেল-জুলুম ও নিপীড়নের শিকার হয়েও রাজপথ ছাড়িনি। এরপর ২০১৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের আন্দোলন, ২০১৫ সালের আন্দোলনসহ দলীয় সকল ঝুঁকিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমরা সক্রিয় থেকেছি। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

তারা আরও বলেন, বিদ্যমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হলে আমাদের অনেক সহযোদ্ধাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিপন্ন হতে পারে। পরবর্তী কমিটির বয়সের বিধিনিষেধের জটিলতায় অনেকেই বাদ পড়তে পারেন। দুঃসময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেকেই দীর্ঘদিনের ত্যাগ ও পরিশ্রমের কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন না পেয়েই সংগঠন থেকে বিদায় হবার আশঙ্কা করছেন। এমতাবস্থায় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উদাসীনতায় আমাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিপন্ন হবার আশঙ্কায় আমাদের আশা-ভরসা ও ন্যায্যতা প্রাপ্তির চূড়ান্ত ভরসাস্থল হিসেবে আমরা একান্তই বাধ্য হয়ে আপনার দ্বারস্থ হলাম। আপনার সকল সিদ্ধান্তের ওপর আমরা শতভাগ আস্থা রাখি।

নতুন কমিটিতে আলোচনায় যারা

ছাত্রদলের নতুন কমিটি কেমন হবে সেটি নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনো সেটি স্পষ্ট করেননি। তবে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে খোঁজ-খবর রাখেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন, তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে আগ্রহী। সে অনুযায়ী তিনি সম্ভাব্য বেশ কয়েকজন প্রার্থীর বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। খোঁজ নেয়ার ক্ষেত্রে পদপ্রত্যাশীদের পারিবারিক অবস্থান, বিগত দিনের আন্দোলনে অবদান, দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিটে কেমন দায়িত্ব পালন করেছেন ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। তারা আরও জানান, এবার অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে কমিটি গঠন করা হবে।

নতুন কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নাওয়াজ, তানজিল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ মো. ইকবাল হোসেন, নিজাম উদ্দিন রিপন, মাহবুব মিয়া, মারুফ এলাহি রনি, করিম প্রধান রনি, শ্যামল মালুম, সহ সাধারণ সম্পাদক রাশেদ ইকবাল খান, আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান।


সর্বশেষ সংবাদ