‘বিভাজন তৈরি’র অভিযোগ নুরের, রাশেদ বলছেন- অব্যাহতি দিতে পারে না নুর

নুর ও রাশেদ এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের লোগো
নুর ও রাশেদ এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের লোগো  © ফাইল ফটো

সংগঠনের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের’ দুই নেতা নুরুল হক নুর ও মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পর পরস্পরকে দুষছেন তারা। নুর বলছেন, রাশেদ খাঁনের নেতৃত্বে কয়েকজন সংগঠনে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করায় আলোচনা করে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর রাশেদ খাঁনের দাবি, নুর সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক। তিনি আহবায়ককে বহিষ্কার করতে পারে না। তাছাড়া কোন আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে নুর বলেন, “রাশেদ খাঁন নিজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংগঠনের বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়, প্রোপাগান্ডা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে সে যতই আমাদের কাছের হোক, বিশ্বস্ত হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেটাই করা হয়েছে।”

অন্যদিকে রাশেদ বলছেন, “নুর যেটি করেছেন, তা সম্পূর্ণভাবে অসাংগঠনিক আচরণ। তিনি সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক হয়ে আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারে না। তার এই অসাংগঠনিক আচরণকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে মূলত কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আমরা জবাবদিহিতার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে চাই।”

জানা গেছে, রবিবার (৪ জুলাই) ভোর ৩টার দিকে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পাল্টাপাল্টি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন। এর আগে রাত একটায় নুর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কমিটি বিলুপ্তি করেন।

আরও পড়ুন: নুর-রাশেদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে, পাল্টাপাল্টি অ্যাকশন

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ২ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক যৌথ মিটিংয়ে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ এর ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও যুগ্ম আহবায়ক মো. সোহরাব হোসেনকে সাময়িক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।’

একই সময়ে পাল্টা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন রাশেদ খাঁন। এতে বলা হয়, ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের যেখানে কোনো ‘সমন্বয়ক’ পদবি নেই, সেখানে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ নামে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা চরম অসাংগঠনিক কার্যকলাপ। এই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ পদবি ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না সে বিষয়ে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হলো।

তাদের এই দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত ২ তারিখে আমরা তিনটি সিদ্ধান্ত নেই। এর মধ্যে রয়েছে- সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রাশেদ খাঁন এবং যুগ্ম আহবায়ক সোহরাব হোসেনকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক সময়ের জন্য অব্যাহতি দেয়া; বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করা ও ৫ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন এবং ডিসিপ্লিনারি বোর্ড গঠন। 

দুই নেতাকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কমল বড়ুয়া নামে একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে রাশেদ খাঁনের নেতৃত্বে কয়েকজন সংগঠনে বিভাজন তৈরির তথ্য আমাদের কাছে ছিল। সে কারণে আলোচনা করে অভ্যন্তরীণভাবেই একটা সিদ্ধান্ত নেই যে, তাদেরকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক সময়ের জন্য অব্যাহতি দেয়া। একইসাথে আমরা এটাও সিদ্ধান্ত নেই যে, পাবলিকলি প্রেস বিজ্ঞপ্তিটা দিব না; এটা অভ্যন্তরীণভাবে থাকবে। পাবলিকলি দিলে গণমাধ্যমে লেখালেখি হবে এবং এতে অন্যরা সুযোগ নেবে। এ কারণে আমরা এটা সাংগঠনিক নোটিশ আকারেই রেখেছিলাম।

নুর বলেন, “যেহেতু সর্বোচ্চ নেতা আহবায়কই অভিযুক্ত, তাই আমরা কমিটিই বিলুপ্ত করেছি। যেহেতু আমাদের কাউন্সিলও করার কথা রয়েছে। তিন বছরের আহবায়ক কমিটি; সেখানে আমরা ৫ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করে আমরা আমরা কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেই। একইসাথে আমাদের যে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলো রয়েছে, যেহেতু মূল দল না হলেও আমাদের ৪টি অঙ্গসংগঠন তথা ছাত্র, যুব, শ্রমিক, গণ অধিকার পরিষদ আছে। যে কারণে আমরা এই সংগঠনগুলো পরিচালনার জন্য ২১ সদস্যবিশিষ্ ডিসিপ্লিনারি বোর্ড গঠন করি। এগুলো ছিলো আমাদের সামগ্রিক পদক্ষেপ। যেগুলো কারো ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা কারও ইচ্ছামতো নেইনি, প্রত্যেকটা পদক্ষেপের বিষয়ে ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের যৌথ মিটিং হয়েছে, যৌথ মিটিংয়ে সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়েছে।”

নুরের বক্তব্য, রাশেদ খাঁন যখন পাবলিকলি মিটিংয়ের বিরুদ্ধে সংবাদ বিজ্ঞাপ্তি দিল, তখন আমরা তার অব্যাহতির বিষয়টা প্রকাশ করেছি।

সেই বৈঠকে ছাত্র অধিকার পরিষদের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিল কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, অধিকাংশ না, ওই মিটিংয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের সকলেই উপস্থিত ছিল; শুধু ৪ জনের মতো উপস্থিত ছিল না। যে কোনো সাংগঠনিক মিটিংয়ের একটা কোরাম আছে, মিটিং করার ক্ষেত্রে একটা কোরাম মেইনটেইন করা হয়। সংসদেও তো কোনো অধিবেশনে সব মেম্বাররা থাকতে পারে না। ব্যক্তিগত দুয়েকজনের কাজ থাকে, নানা কাজ।

“ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের আলাপটা আমাদের কানে আসায় জরুরি পরিস্থিতিতে আমরা মিটিংটা ডেকেছিলাম, ওই সময়ে হয়তো অনেকে ছিল না অনলাইনে। যে কারণে জয়েন করতে পারেনি। সেটাও সংখ্যাটা হচ্ছে ছাত্র অধিকার পরিষদের ৪ জন, যেখানে প্রায় ২৫ জনের মতো কেন্দ্রীয় নেতা ছিল। নতুন সংগঠন হওয়ায় আমরা যেহেতু যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ছাত্র-যুব-শ্রমিক অধিকারের দায়িত্বশীলরা যৌথ মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি; সেদিনের মিটিংয়েও তারা ছিল।”

চলমান এই দ্বন্দের কোন সমাধান কী হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, রাশেদ খাঁন তার ভুল বুঝতে পেরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় এবং বসতে চায়। আমরা বলেছি, প্রেস রিলিজ দিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে তারপরে আমাদের কাছে আসা যাবে। কারণ আমরা তো কোনো অসাংগাঠনিক সিদ্ধান্ত নেইনি, ছাত্র-যুব-শ্রমিক অধিকারের মতামতের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।

“ছাত্র-যুব-শ্রমিক অধিকারের সবার মতামত না থাকলে আমি তাদের নামে কোনো প্রেস রিলিজ দিতে পারি না। সুতরাং রাশেদ খান নিজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি, কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংগঠনের বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়, প্রোপাগান্ডা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে সে যতই আমাদের কাছের হোক, বিশ্বস্ত হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সে যদি আবার সংগঠনে ফিরতে চায়, দুঃখপ্রকাশ করে প্রেস রিলিজ দিয়ে আসবে তাহলে আমরা তাকে নিয়ে কাজ করবো, অন্যথায় আমরা চাই শুরু থেকেই আমরা যারা একসাথে সংগঠনে ছিলাম, সকলে মিলেমিশেই সংগঠন করি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ খাঁন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নুর ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক। কিন্তু হঠাৎ করে আমাদের নজরে আসল যে, সে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষাণা দিয়েছেন। এটি সম্পূর্ণভাবে অসাংগঠনিক একটি আচরণ। তিনি সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক হয়ে আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারে না। তার এই অসাংগঠনিক আচরণকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে মূলত কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

দুজনের মধ্যে কেন দ্বন্দ্ব- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছিল না। আমর এসব এড়িয়ে সবসময় ভালো ও সুসর্ম্পক বজায় রেখে চলছি এবং এখনও সেটা আছে। কিন্তু হঠাৎ করেই নুর নোটিশটা দেয়ায় তাকে (নুর) জবাবদিহির মধ্যে আনতে সাত দিনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। সাত কর্মদিবসে নোটিশের জবাব না দিলে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’

রাশেদ বলেন, মূলত কমিটি বিলুপ্ত করতেই আমরা কাজ করছি। এজন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আলোচনা চলমান রয়েছে। কিন্তু নুর কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে যারা রয়েছে (ফারুক, রাশেদ, মশিউর প্রমুখ) তাদের বাদ দিয়ে ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের কিছু নেতা নিয়ে মিটিং করেন এবং আমাদের অব্যহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মিটিংয়ের ব্যাপারে আমরা কোন কিছুই জানিনা। এ কারণে মূলত আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence