আলোচনার মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতির সহাবস্থান চান জাবি উপাচার্য
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৩ AM , আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৮ AM
বিতর্ক নয় আলোচনার মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতির সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড মোহাম্মদ কামরুল আহসান। ‘ছাত্ররাজনীতি সংস্কার: প্রসঙ্গ ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চাকসু’ শীর্ষক গঠনমূলক জাতীয় সংলাপে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটরিয়ামের সেমিনার কক্ষে এ আয়োজন করা হয়।
সহাবস্থান নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে উপাচার্য বলেন, দেশকে গণতন্ত্রের পথে ধাবিত করতে হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংজম রেখে ভুল জায়গাগুলোতে পরস্পরের মধ্যে বেশি বেশি আলোচনা করতে হবে। যতদিন জাকসু নেই, ততদিন ছাত্র প্রতিনিধি নেই গঠনতন্ত্র বলে। আমি জাকসুর সভাপতি। আমি কেন জাকসু দেব না, তা খুঁজে পাই না। এ সময় জাকসু বিলম্বিত হওয়ার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
জাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, জাকসু সফল করতে হবে টিম ওয়ার্কের মধ্য দিয়ে। এটা একক কোন ব্যক্তির দ্বারা সম্ভব নয়। এজন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে আলেচনা হওয়া উচিত। আমরা চাই, ডিবেটের বদলে ডায়ালগ চালু হোক। তবে ছাত্র সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসানোর এখতিয়ার আমি রাখি না। কারণ এটা প্রশাসনিক বিষয় নয়, রাজনৈতিক বিষয়। এ ছাড়া জাকসু নিয়ে শিক্ষার্থীরা যে আস্থা রেখেছে, তা বাস্তবায়নে তিনি সবার সহযোগিতা চান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সব সংস্কারের আগে রাজনৈতিক সংস্থার দরকার। কেননা অন্য সংস্কার হবে রাজনীতিবিদদের হাতে। এ ছাড়া ছাত্ররাজনীতি সংস্কারের সবচেয়ে বড় নিয়ামক হচ্ছে ছাত্র সংসদ। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সংস্কার দরকার।
শিবির ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ কম, কিন্তু অন্যান্য ছাত্র সংগঠন যারা ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে, তাদের মধ্যে এই প্রবনতা বেশি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এই দাবিতে ছাত্রদের কঠোর হওয়া উচিত। এখন যদি এই ট্রেন চালু হয়, তাহলে পরবর্তীতে অব্যাহত রাখা সম্ভব। অন্যথায় সম্ভব নয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের ৯ দফার মধ্যে ৭ নম্বর দফাটি ছিল ক্যাম্পাসগুলোতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা। কিন্তু এখন এটা নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। নব্বইয়ের অভ্যুত্থান ও চব্বিশের অভ্যুত্থানে ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল লেজুড়বৃত্তির বাইরে। ফলে এখানে সাধারণের অংশগ্রহণ ছিল ও সফল হয়েছে। কিন্তু নব্বুইয়ে ছাত্রদের মাইনাস করা হয়েছে। এজন্য আকাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য সফল হয়নি।।
তিনি আরো বলেন, গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার। আর এজন্য দরকার জাতীয় রাজনীতি সংস্কার। তা না করলে ছাত্র রাজনীতি সংস্কার হবে না। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে ছাত্রনেতারা তৈরি হবে, তারা হবে গণতন্ত্রের সেফ গার্ড। এ ব্যাপারে গড়িমসি মানে গণতন্ত্রের পথে পায়তারা।
আরো পড়ুন: ৩৪তম বিসিএসে ৬৭২ প্রার্থীকে নিয়োগ বঞ্চিত করেছিল আওয়ামী সরকার
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্র রাজনীতি হতে হবে দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরে। ছাত্ররাজনীতি হবে শিক্ষার্থী কেন্দ্রীক। যদি ছাত্রনেতারা ছাত্রদের মাধ্যমে নির্বাচিত হন, তাহলে ছাত্ররাজনীতির সোর্স অফ পাওয়ার হতে হবে ছাত্ররা।
তিনি আরো বলেন, বিভাজনের রাজনীতি বাংলাদেশকে কোনো কিছুই উপহার দিতে পারেনি। তাই সবাইকে নিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি চর্চা করা উচিত।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ বলেন, ১৯ শতকে ছাত্ররাজনীতি নতুন মাত্রা যোগ করে। ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৯০ এর অভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ চব্বিশের আন্দোলনে মূল কান্ডারি ছিলেন ছাত্ররা। বিগত সময়ে আমরা দেখে এসেছি, ছাত্ররাজনীতি মানে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলে সিট বানিজ্য। ফলে ছাত্ররা এটাকে ছাত্ররাজনীতি মনে করছে। এজন্য মেধাবীরা ছাত্ররাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই এমন ছাত্ররাজনীতি- দলের নেতার ছবি দিয়ে ব্যানার বানানো হবে না, থাকবে না কমিটি বাণিজ্য, তাদের অফিস হবে জ্ঞান চর্চার জায়গা। থাকবে না ভিন্নমত রোধ। শিক্ষার্থীদের জোর করে মিছিলে নেওয়া হবে না। ছাত্ররাজনীতি হবে ছাত্র সংসদভিত্তিক, সেখানে হবে রাজনৈতিক জ্ঞানের চর্চা, শিক্ষার্থীবান্ধব ও গঠনমূলক।