আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ, এখন আ’লীগের দলীয় কার্যালয় পোড়ানোর আসামী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৯ AM , আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৯ AM
কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী জাকি তাজওয়ার। সেই জাকি তাজওয়ারকে এবার বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় আসামি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান রানা বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে ১২ নম্বর আসামি করা হয়েছে জাকি তাজওয়ারকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন জাকি তাজওয়ার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধ্যয়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বগুড়া জিলা স্কুলের ২০১৯ সালের এসএসসি ব্যাচ এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজের ২০২১ সালের এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তাঁর বাবা মাহতাব উদ্দিন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ১৬ জুলাই বগুড়া শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন জাকি তাজওয়ার।
আরও পড়ুন: ‘ও আন্দোলন করবে কেন? ও তো মুরগির দোকানে কাজ করে’
জাকি ফেসবুকে লেখেন, ‘... লুকানোর কিছু নেই। ছাত্রলীগের মিছিলে স্লোগানে পেয়েছেন। তারুণ্যের জয়গানে পেয়েছেন। কখনো কি সহিংসতায় দেখেছেন? আক্রান্ত হয়েছেন? আজ আমরা আক্রান্ত, আপনাদের সঙ্গে আক্রান্ত। নীতি আর আদর্শের ভাষা এসব শেখায়নি। আমরা এ দেশের সন্তান। বড় করে বলি সূর্যসন্তান। আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?’
তখন জাকি তাজওয়ার বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। একটা তারুণ্যদীপ্ত প্রজন্মের গণদাবির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিশেষ কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাত্রলীগের আদর্শের সঙ্গে নীতিগতভাবে যায় না। এটা ছাত্রলীগের আদর্শের পরিপন্থী।
জাকি তাজওয়ারকে যে মামলায় আসামি করা হয়েছে, একই মামলার এজাহারে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ ৮৭ জনের নাম আছে।
আরও পড়ুন: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেলের বিশেষ কোটার ভবিষ্যৎ কী?
এর মধ্যে কয়েকজন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া বগুড়ার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (বিআইআইটি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন সৈকত ও ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) পরিচালক সবুর শাহ লোটাসকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এজাহারনামীয় আসামি ছাড়া অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ আসামি দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তাঁরা কার্যালয়ের মালামাল লুট করেন। এ ছাড়া টাউন ক্লাব ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেন।
মামলার আসামি হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা জাকি তাজওয়ার বলেন, ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের কারণেই আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় পোড়ানো মামলার আসামি হয়েছি, এমনটা না–ও হতে পারে। কেউ হয়তো আওয়ামী লীগ নেতাদের ভুল বুঝিয়ে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন।
আরও পড়ুন: চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন: নিহত বেড়ে ১৯৭
জাকি বলেন, ১৬ জুলাই বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেয়। জিলা স্কুলের প্রতীকী ছাত্র সংসদের একাধিকবার ভিপি ছিলাম। এ কারণে কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ওই দিন মিছিলে যোগ দিই। কিন্তু মিছিলে হামলা করা হয়। এতে জিলা স্কুলের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। দ্বিতীয় দফা সাতমাথায় মিছিল নিয়ে যাওয়ার পর আবারও ককটেল হামলা করা হয়।
এতে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হলেও কোনো প্রকার ভাঙচুর কিংবা জ্বালাও–পোড়াও করেনি। সহিংসতা শুরু হলে শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সাতমাথায় বহু সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা উচিত। হামলা ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা নেই। অথচ ওই দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলায় আমাকে আসামি করে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে–জানান তিনি।