মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি বেরোবি ছাত্রলীগের কমিটি

লোগো
লোগো  © ফাইল ছবি

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ হয়েছে আরও দুই মাসে আগেই। তবে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী। তাদের অনেকের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় পদে আসার সুযোগ হয়নি।

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই পোমেল বড়ুয়াকে সভাপতি ও মো. মাহফুজুর রহমান শামীমকে সাধারণ সম্পাদক করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছরের জন্য ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্য এই কমিটির অনুমোদন দেন।

কমিটি গঠনের জন্য সিভি জমা নেওয়া হয়েছে। সিভি যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করা যায় চলতি অক্টোবরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি চলে আসবে। -মাহফুজুর রহমান শামীম, সাধারণ সম্পাদক, বেরোবি ছাত্রলীগ

সর্বশেষ কমিটি মেয়াদ শেষ হয় গেল ৩১ জুলাই। এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা থাকলেও বছর পেরিয়ে দুই মাস শেষ হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। তবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে একাধিক উদ্যোগ দেখা গেছে শাখা ছাত্রলীগের। তবুও কমিটি কেন পূর্ণাঙ্গ হয়নি সে বিষয়ে দায়িত্বশীল কারো থেকে পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি।

গেল ২১ মে সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শাখা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আগ্রহী পদ-প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত জমা নেয় সংগঠনটি। এসময় বিভিন্ন বর্ষের প্রায় ৫০০ আগ্রহী কর্মীর সিভি জমা হয়।

জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার অনুসারীদের পদে আনা নিয়ে এক ধরনের নীরব দ্বন্দ্ব রয়েছে। তারা নিজ নিজ অনুসারীদের কমিটিতে স্থান দিয়ে নিজের আধিপত্য নিশ্চিত করতে চান। কমিটি নিয়ে তারা নিজেরা প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে না জড়ালেও তাদের অনুসারীদের মধ্যে সম্প্রতি কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন: স্মার্ট পদ্ধতিতে নৌকার নিরঙ্কুশ বিজয়ে ভূমিকা রাখবে ছাত্রলীগ

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদপ্রত্যাশী একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তারা অনেকে ৫-৬ বছর ধরে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি করছেন। কিন্তু আজও কোনো পদ পাননি। তাদের অনেকেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা ও ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পথে।

পদপ্রত্যাশারী কর্মীরা বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ এক বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কোনো ধরনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বায়োডাটা জমা নেওয়ার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তা কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়নি। এতে করে সাধারণ ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

সিভি জমা দেওয়া এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। দীর্ঘ দিনেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতৃত্বশূন্য হওয়ার পথে। আগামী কাউন্সিলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হাল ধরার মত যোগ্য কোনো নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ছাত্রলীগের সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মী বাবুল হোসেন বলেন, আমরা যারা কর্মী, তারা কর্মী পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে অবশ্যই দায়িত্ব পাওয়া যেকোনো কর্মীর জন্য সংগঠনের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সে জন্য বেরোবি ছাত্রলীগ আমাদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান শামীম বলেন, কমিটি গঠনের জন্য জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা নেওয়া হয়েছে। সিভি যাচাই-বাছাই চলছে। হুট করে তো কাউকে কমিটিতে নিয়ে আসা যায় না। যাচাই-বাছাই প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করা যায় চলতি অক্টোবরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি চলে আসবে।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। দীর্ঘ দিনেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতৃত্বশূন্য হওয়ার পথে। -পদপ্রত্যাশী কর্মী, বেরোবি ছাত্রলীগ

শাখা ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি পোমেল বড়ুয়া মেয়াদ উত্তীর্ণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটির না হওয়ার ব্যর্থতা আমাদেরই। আমাদের কমিটি মেয়াদ অনুয়ায়ী এক বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এটাকে ব্যর্থতা হিসেবে নিচ্ছি না।

কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও এর দায় না নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যারা কমিটিতে আসবে, সবার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক মতাদর্শ আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করছি। যাতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আমাদের কমিটিতে ঢুকতে না পারেন। এই কারণে একটু সময় লাগছে। আগ্রহী কর্মীদের সিভি জমা নেওয়া আছে। কেন্দ্রে পাঠালেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেয়ে যাবো।


সর্বশেষ সংবাদ