চবির শাকিল এখন উচ্চশিক্ষায় তরুণদের অনুপ্রেরণা

আতিকুল ইসলাম শাকিল
আতিকুল ইসলাম শাকিল  © টিডিসি ফটো

গতবছরের শেষে একটি গবেষণায় দেখা গেছে দেশের ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। সে হিসেবে এখন সংখ্যাটা আরও বেশি। পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন পেশায় বিদেশেই কর্মজীবন শুরু করেন তাদের অনেকে। এমনই একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম শাকিল।

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মোহাম্মদপুরে বেড়ে উঠেন আতিকুল ইসলাম শাকিল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন যথাক্রমে লাকসাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ও কুমিল্লা ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। স্নাতকে পড়ার সুযোগ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে।

সিজিপিএ ৩.৩১ ও ৩.২১ অর্জন করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করলেও উচ্চশিক্ষায় স্বপ্ন বুনেছেন তিনি। বর্তমানে শাকিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টার্ন নিউ ইংল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমএসসি ডিগ্রি করছেন।

তবে শাকিলের এ পথচলা ছিলো বন্ধুর। নিজের যোগ্যতা বিকশিত করতে তিনি ছোট থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি তৎপর ছিলেন সামাজিক ও মানবিক নানা কর্মকাণ্ডে। কাজ করেছেন লীড বাংলাদেশে। ২ বছর সেখানে চাকরির পর ব্যাংকসহ আরও কিছু আইটি প্রতিষ্ঠানেও কাজ করতে হয়েছে তাকে।

জীবনের নানা চড়াই-উতরাইয়ের মাঝে চলতে থাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বনামধন্য ইন্সটিটিউটে কাজ করছেন লেভেল-টু টিচার হিসেবে। রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে সুযোগ পান মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি নিউফাউন্ডল্যান্ডে। শাকিল এখন উচ্চশিক্ষায় তরুণদের অনুপ্রেরণার নাম।

প্রথমে শাকিল এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করেন। তার রিসার্চ টপিক ছিলো নিউফাউন্ডল্যান্ডের কোস্টাল এরিয়ার সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে। এরপর তিনি সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন সাবজেক্টে আবেদন করেন ওয়েস্টার্ন নিউ ইংল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে। যা ছিলো অ্যাপ্লাইড বিহেভিয়ার অ্যানালাইসিস নামে একটি বিষয়।

শাকিল বলেন, এই বিষয়টি পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই অপ্রতুল। এই বিশেষ সাবজেক্টটি পড়ার সুযোগের পাশাপাশি আমি একটি সুনামধন্য রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার সুযোগ পাই। আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এই সুযোগটি করে দেওয়া হয়। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত জটিলতায় আমাকে ২ বছরের মতো অপেক্ষা করতে হয়েছিল। 

তবে নানা বিপত্তি সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি তিনি। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের মে মাসে আমি লেকচারার হিসেবে যোগদান করি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে আমার ভিসা কনফার্ম হয়। ২০ সেপ্টেম্বর আমি আমার কর্মস্থল যোগ দিই এবং পাঁচদিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করি। ৬ মাস হলো সফলতার সাথে আমি শিক্ষকতা এবং নিজের পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

আতিকুল ইসলাম শাকিল বলেন, শুরুর দিকে এ যাত্রা মোটেও প্রশস্ত ছিলো না। কিন্তু কখনোই হাল ছেড়ে দিইনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি চেষ্টা করি ধর্ম মেনে চলার। প্রতিটি সফলতার জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া।

ভবিষ্যতের কথা জানিয়ে শাকিল বলেন, ভবিষ্যৎ চিন্তা এখন একজন Board Certified Behaviour analyst হওয়ার। যাতে দেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং স্পেশাল এডুকেশনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি। যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য ৩টি পরামর্শের কথা বলেছেন এ তরুণ। পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সফলতা।

তিনি বলেন, আপনি যদি গবেষণা ও উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হন তাহলে আপনাকে খুব ভালোভাবে পরিকল্পনা করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই। এরপর আপনার নিতে হবে প্রস্তুতি। কীভাবে আপনার ইংলিশ স্কিল বাড়াবেন, রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করবেন, নির্দিষ্ট টাকা জমানো এবং কীভাবে আপনি প্রফেসরদের অ্যাপ্রোচ করবেন। এই সকল কাজ সুচারুভাবে করার পরেই আপনি আপনার বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবেন।


সর্বশেষ সংবাদ