বেকার-ঋণগ্রস্ত আরাফাতের এখন প্রতিমাসে আয় ১ লাখ টাকা

আরাফাত
আরাফাত  © টিডিসি ফটো

অর্থাভাবে আট বছর আগে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করেছেন আরফাত। কয়েকমাস পর চাকরি ছেড়ে দিতে হয় তাকে। তারপর গ্রামে টিউশনি করা শুরু করেন। একপর্যায়ে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেও লাভ করতে পারেননি । মোটের উপর ২ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তবুও হাল ছাড়েননি। 

২০১৭ সাল, আরাফাত তখন চট্টগ্রাম ইসলামিয়া কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারায় তার ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। 

তবে মানসিকভাবে ভেঙ্গে না পড়ে সেই বিপর্যয়কে শক্তিতে রূপান্তর করেন আরাফাত। নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। শুরু করেন অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজ। কঠোর পরিশ্রম, আর একটু একটু অগ্রগতি আজ তাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে।   

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের গোলাম নবী হাজী পাড়ায়  মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন   আরফাত। বাবা মোহাম্মদ হাছান পেশায় ব্যবসায়ী। ২০১৭ সাথে অনলাইন থেকে আরাফাতের প্রথম আয় ছিল ৫ ডলার। সেই থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪৫ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। বর্তমানে প্রতিমাসে আরাফাতের আয় ১ লাখ টাকা।

আরফাতের  স্বপ্ন- গ্রামের স্বল্প আয়ী পরিবারে বেড়ে ওঠা তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং পেশায় দক্ষ করে তুলে বেকার সমস্যা ঘোচানো। তাই  ২০১৯ সালে লোহাগাড়ায় নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করেন আরাফাত আইটি ইনসটিটিউট। ইতোমধ্যে তিনি গ্রামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পাশাপাশি সেখানে নিয়মিত দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ।

তার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে তিনি নিজেই প্রশিক্ষক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের দেন গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ফ্রিল্যান্সিং এর উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ। ব্যক্তিগত একটি ল্যাপটপ থাকলে যেকোনো শিক্ষার্থী এই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। 

বেকারত্ব নিরসন ও আত্মনির্ভরশীল তরুণ জনগোষ্ঠী সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রজেক্ট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আরাফাত।

পরবর্তীতে নিজ উদ্যোগে ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর নেন বিশেষ প্রশিক্ষণ। 

তার অনুপ্রেরণায় পুরুষের পাশাপাশি সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীরাও ফ্রিল্যান্সিং-এ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ইতিমধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পুলিশ,শিক্ষক ও ব্যাংকারসহ ১৫০ জন নারী-পুরুষ তার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। অনলাইনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন আরো ১০ জন। তাদের মধ্যে সরাসরি আয় করছেন ৪৫ জন,যার মধ্যে ৬ জন নারীও রয়েছেন। আরাফাত জানান, শীঘ্রই বাকিরাও অনলাইনে আয়ের জগতে প্রবেশ করবেন।

আরাফাত আইটি ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আয় করা এমন দুজন শিক্ষার্থী লোহাগাড়ার প্রথম নারী ফ্রিল্যান্সার দাবীদার রিনা আক্তার ও ক্ষুদ্র ফ্রিল্যান্সার দাবীদার ১৫ বছর বয়সী রাকিবুল হাসান জানান, তারা পড়ালেখার পাশাপাশি আরাফাত আইটি ইনস্টিটিউট থেকে ছয় মাস মেয়াদী ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে অনলাইন জগতে কাজ করে আয়ও করছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চান তারা।

আলাপকালে আরফাত বলেন, ইতিমধ্যে আমি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কারস্বরূপ লোহাগাড়ার প্রথম সেরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ল্যাপটপ অর্জন করেছি। স্বপ্ন দেখি আইটি নির্ভর এমন একটি গ্রাম গড়ে তুলতে চাই,  যে গ্রামের প্রতিটি পরিবারে একজন করে ফ্রিল্যান্সার থাকবে। 

নিজের প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন চেয়ে আরাফাত বলেন, গ্রামের  প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফ্রিল্যান্সিং ছড়িয়ে দিতে চাই। এজন্য  একটি ফ্রিল্যান্সিং অঞ্চল গড়ে তুলতে সরকারের সু- দৃষ্টি কামা করছি । একইসাথে অর্থাভাবে ল্যাপটপ কিনতে না পারা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য চাই  সরকারি আর্থিক সহযোগিতা।

লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম. ইব্রাহিম কবির বলেন, আরাফাতের  মতো অনেক তরুণ আছে বলেই সম্ভবনার পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। তার মতো  বেকার তরুণেরা  ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করে গড়ে তুলতে পারবে নিজেদের সুন্দর ক্যারিয়ার। আরাফাত আইটি ইনস্টিটিউট ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকার শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের স্বাবলম্বী করছেন। এটি সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। এই প্রতিষ্ঠানকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা করা হবে।'


সর্বশেষ সংবাদ