বিভিন্ন দেশের ‘ধার করা’ ক্রিকেটার নিয়ে টাইগারদের বিপক্ষে খেলছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ  © সংগৃহীত

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচে হেরেছে সফরকারী বাংলাদেশ। টাইগাররা সেই দলটার কাছে এবার নাস্তানাবুদ হয়েছে যারা মূলত বিভিন্ন দেশের অনেকটা ধার করা ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া যুক্তরাষ্ট্র দল। এই দলের কাছে এমন লজ্জাজনক হার শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশ দলের কাছে। বিভিন্ন দেশের ধার করা ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া দলটির কাছে এমন হার থেকে কি আদ্য শিক্ষা নেবে টাইগাররা?

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ভালোভাবেই প্রস্তুত করছে আয়োজকরা। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বাংলাদেশকে এভাবে ‘শিক্ষা’ দিয়ে চমকে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচ জয়ের নায়ক হারমিত সিং। ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে হারমিত বলেছেন, ‘ভালো লাগছে। এটা আমাদের ঘরের মাঠ, তাই সুযোগটা নিতে মরিয়া ছিলাম। বাংলাদেশকে বোঝাতে চেয়েছি, আমরা এখানে ওয়াকওভার দিতে আসিনি।’

তবে যারা এই দলটির ইতিহাস জানেন, তারা অন্তত অবাক হননি। কেননা, হংকং, স্কটল্যান্ডের মতো দলের কাছেও টি২০ ম্যাচের প্রথম দেখায় হেরেছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তান যখন টেস্ট মর্যাদা পায়নি, তখনও তাদের সঙ্গে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচেও সেই প্রথম দেখায় হার। এখানেই শেষ নয়, কানাডা আর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গেও প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে জিততে পারেনি প্রবল জনসমর্থন নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশ দল। 

এমনিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই ‘মিনোস বাংলাদেশ’ নিশ্চিতভাবেই হেরেছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই, সেই সময় কেনিয়ার সঙ্গেও প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারের তিক্ত অভিজ্ঞতায় মিশে আছে। আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান (তখন সহযোগী সদস্য) তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিতেছিল। এবারে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজের শেষ ম্যাচটি হেরে অধিনায়কের অজুহাত ছিল।

এদিকে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হারের পর বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দাবি করেন, অন্তত আরও ২০ রান করলে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতার মতো পরিস্থিতিতে থাকত। ম্যাচের পরে তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো ব্যাট করিনি। ভালো শুরু করলেও মাঝখানে দ্রুত কিছু উইকেট হারিয়ে ফেলি। যদি আরও ২০ রানের মতো করতে পারতাম তাহলে ভালো টোটাল হত।’ শান্ত বলেন, ‘স্পিনাররা ভালো বল করেছে। শেষ ২-৩ ওভারে পেসাররা পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারিনি। আশা করি পরের ম্যাচে তারা ঘুরে দাঁড়াবে।’

ভিন্ন ভিন্ন দেশের ১৫ ক্রিকেটার নিয়ে গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র দল। অবাক করার বিষয় এই স্কোয়াডের কেউই যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ক্রিকেটার নন। এই স্কোয়াডে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ভারতের আটজন। এছাড়াও, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, বারবাডোজ ও কানাডা থেকেও ক্রিকেটার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপ দলে। পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার আছেন দুইজন। বারবাডোজ, জ্যামাইকা ও কানাডার আছেন একজন করে। 

কেউ জন্মসুত্রে, কেউ বংশভূত, কেউবা প্রবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে এসে হয়ে গেছেন ক্রিকেটার। অর্থাৎ বাংলাদেশ এমন একটি দলের কাছে হারল, যে দলে খাঁটি আমেরিকান একজনও নেই। মূলত বিভিন্ন দেশের অনেকটা উপেক্ষিত ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া যুক্তরাষ্ট্র দলটি। 

বাংলাদেশে ক্রিকেট জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলাধুলায় সেরা দশেও নেই ক্রিকেট। বেসবল, ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি, জিমন্যাস্টিক্স, সাঁতার, অ্যাথলেটিক্সই প্রাধান্য পেয়ে আসছে। এই বিশ্বকাপ দিয়েই দেশটিতে ক্রিকেট প্রসার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির শক্তিশালী অর্থনীতির কারণে তাদের ক্রিকেট উন্নয়নে সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইসিসি।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র দলে নেই কোনো নিজস্ব ক্রিকেটার, খেলছেন বিভিন্ন দেশের বাদপড়ারা

আগামী ২ জুন শুরু হতে যাচ্ছে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০ ওভারের ক্রিকেট উৎসবের যৌথ আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বমঞ্চে ওঠার আগেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে এখন যুক্তরাষ্ট্র। টাইগারদের হারিয়ে ক্রিকেট দুনিয়াকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারা। বিশ্বকাপ ঘিরে হয়তো বড় স্বপ্ন দেখছে না দলটি। কিন্তু যে কারোর স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারে তারা। বাংলাদেশকে ভড়কে দিয়ে অন্যদের সেই বার্তাটাই যেন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশের ওপেনাররা এখনো উইকেটে নামেন নিজেদের থিতু করার উদ্দেশ্যে। বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিং জুটিতে সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ স্ট্রাইকরেট বাংলাদেশের। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে বাংলাদেশ হয়তো প্রত্যাশিত জয় পাবে, কিন্তু প্রথম ম্যাচের হার যে প্রশ্ন তুলে দিল, তার উত্তর হয়তো সে দুই ম্যাচেও মিলবে না।

প্রায় দুশো বছর আগে ক্রিকেটের চর্চা শুরু হলেও কোনো দিনই ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হয়ে উঠতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। অভিবাসীদের হাত ধরে দেশটিতে ক্রিকেটের যে নবযাত্রা, তারও খুব একটা প্রসার ঘটেনি। আইসিসি ক্রিকেটের বিশ্বায়নের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশকে যুক্ত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যৌথভাবে টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ দিয়ে। 

 

সর্বশেষ সংবাদ