যুক্তরাষ্ট্র দলে নেই কোনো নিজস্ব ক্রিকেটার, খেলছেন বিভিন্ন দেশের বাদপড়ারা

যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দল
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দল  © সংগৃহীত

আগামী ২ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসছে টি-২০ বিশ্বকাপের নবম আসর। প্রথমবার ২০ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চার-ছক্কার এই টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টের জন্য ঘরের মাঠে ভিনদেশীদের নিয়ে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। ভিন্ন ভিন্ন দেশের ১৫ ক্রিকেটার নিয়ে গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র দল। অবাক করার বিষয় এই স্কোয়াডের কেউই যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ক্রিকেটার নন। 

প্রায় দুশো বছর আগে ক্রিকেটের চর্চা শুরু হলেও কোনো দিনই ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হয়ে উঠতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। অভিবাসীদের হাত ধরে দেশটিতে ক্রিকেটের যে নবযাত্রা, তারও খুব একটা প্রসার ঘটেনি। আইসিসি ক্রিকেটের বিশ্বায়নের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশকে যুক্ত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে যৌথভাবে টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ দিয়ে। 

১৫ ক্রিকেটার নিয়ে গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র দল। এই স্কোয়াডে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ভারতের আটজন। এছাড়াও, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, বারবাডোজ ও কানাডা থেকেও ক্রিকেটার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপ দলে। পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার আছেন দুইজন। বারবাডোজ, জ্যামাইকা ও কানাডার আছেন একজন করে। কেউ জন্মসুত্রে, কেউ বংশভূত, কেউবা প্রবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে এসে হয়ে গেছেন ক্রিকেটার। 

অ্যান্ডারসন-হারমিতের অবিচ্ছিন্ন ৬২ রানের জুটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারায় মার্কিনিরা। অ্যান্ডারসন ২৫ বলে ৩৪ ও হারমিত মাত্র ১৩ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন হারমিত। মজার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাওয়া ঐতিহাসিক এই জয়ে যে দুজন বড় ভূমিকা রেখেছেন তাদের কেউ জন্মগতভাবে আমেরিকান নন।

ক্রিকেট বিশ্বে কোরি অ্যান্ডারসন বেশ পরিচিত মুখ। খেলেছেন নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে। কিউইদের জার্সিতে ওয়ানডেতে ৩৬ বলে দ্রুতগতির সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে তার। তবে ইনজুরির কারণে ছিটকে যান নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড থেকে। এরপর আর বিবেচিত হননি কিউইদের দলে। এ বছর সুযোগ পান যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলে।

ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা হারমিত সিংয়ের গল্পটা প্রায় একই। তিনি ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। খেলেছেন ভারতের বি দলে। তবে ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে। যদিও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) তদন্তে মুক্ত হন তিনি। আইপিএলে রাজস্থানের হয়ে খেলা হারমিত এখন পুরোপুরি আমেরিকান ক্রিকেটার বনে গেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক মোনাক প্যাটেল ভারতের গুজরাটে জন্ম নিলেও পরিবারের সাথে চলে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। জেসি সিং ভারতীয় বংশভূত হলেও তিন বছর বয়স থেকে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৫ সালে এই দলের হয়েই অভিষেক হয়েছিল তার। মিলিনদ কুমার আইপিএলে খেলেছেন অনেক বছর। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে তার অভিষেক ২০২১ সালে। 

বাঁহাতি স্পিনার নিসর্গ প্যাটেলও ভারতীয়, ৩৬ বছর বয়সে তিনি দলের বয়স্ক ক্রিকেটার। নশ প্রদীপ আটালান্টায় জন্ম নিলেও খেলেছেন ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে। পরে সেখানে গতি করতে না পেরে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। লোকেশ রাহুলের সাথে ২০১০ যুবা বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলেছিলেন সৌরভ নেত্রাভালকার। পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এখন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলছেন নিয়মিতই। নিতিশ কুমার জন্মসুত্রে ভারতীয় না হলেও তার পূর্বপুরুষ ভারতীয়, তার জন্ম কানাডায়। তিনি কানাডা জাতীয় দলের অধিনায়কত্বও করেছেন।

অ্যারন জোনস এসেছেন বারবাডোজ থেকে। আলি খান ও শায়ান জাহাঙ্গির পাকিস্তানের। আলি খানের জন্ম পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। পরিবারের সঙ্গে ১৮ বছর বয়সে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আনেন তিনি। এ ছাড়া একাদশে থাকা আরেক ক্রিকেটার আন্দ্রিস গাউসের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। প্রোটিয়াদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন তিনি। কাগজে কলমে এই স্কোয়াডে একজনই যুক্তরাষ্ট্রের। তিনি স্টিভ টেলর। তবে তিনিও আদতে জ্যামাইকান বংশভূত।

অর্থাৎ বাংলাদেশ এমন একটি দলের কাছে হারল, যে দলে খাঁটি আমেরিকান একজনও নেই। মূলত বিভিন্ন দেশের অনেকটা উপেক্ষিত ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া যুক্তরাষ্ট্র দলটি। 

যুক্তরাষ্ট্রের স্কোয়াড:
মোনাঙ্ক প্যাটেল (অধিনায়ক), অ্যারন জোন্স (সহ-অধিনায়ক), অ্যান্ড্রিস গাউস, কোরি অ্যান্ডারসন, আলি খান, হারমিত সিং, জেসি সিং, মিলিন্দ কুমার, নিসর্গ প্যাটেল, নিতিশ কুমার, নশতুশ কেনজিগে, সৌরভ নেথ্রালভাকার, শ্যাডলি ফন শ্যালকউইক, স্টিভেন টেইলর ও শায়ান জাহাঙ্গীর।

রিজার্ভ খেলোয়াড়: গজানন্দ সিং, হুয়ানয় ড্রাইসডেল ও ইয়াসির মোহাম্মদ।

 

সর্বশেষ সংবাদ