৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জয় উদযাপনের পর ৩৬তম জন্মদিনে মেসি
- আফরিন সুলতানা শোভা
- প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ০৯:০০ AM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩, ০৯:০০ AM
বিশ্বজয়ী হওয়ার পর আজ ফুটবল জাদুকর মেসির প্রথম জন্মদিন। এবারের জন্মদিনটা শুধু মেসির কাছেই নয়, বিশ্ব জুড়ে ফ্যানেদের কাছে স্পেশাল। ৩৬ বছর পর আলবেসিলিস্তেদের বিশ্বকাপ জেতানো তারকা পা রাখলেন ছত্রিশে। তাই স্পেশালভাবেই বিশ্বজুড়ে চলে সেলিব্রেশন। জন্মদিনের রাত থেকেই শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছেন লিও মেসি। এভাবেই মেসির পায়ের জাদু দেখে যেতে চান তাঁর ফ্যানেরা।
আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবল তারকা। জীবনের ৩৫টি জন্মদিন পেছনে ফেলে এসেছেন ফুটবলের এই বরপুত্র। বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি কাজ করতেন রোজারিওর একটি স্টিল কারখানায়। আর মা সেলিনা মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন পার্ট-টাইম ক্লিনার।
চার ভাইবোনের মধ্যে মেসি তৃতীয়। তার বড় দুই ভাই রদ্রিগো ও মাতিয়াস। ছোট বোন মারিয়া সল। ছোটবেলা থেকেই তাদের পরিবার ছিল ফুটবলপ্রেমী। বড় দুই ভাই ও দুই মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে ফুটবল খেলেই বাল্যকাল কেটেছে তার। লিওনেল মেসি মাত্র ১৩ বছর বয়সে আর্জেন্টিনা থেকে স্পেনের বার্সেলোনায় চলে আসেন।
১১ বছর পর্যন্ত তিনি আর্জেন্টিনার কোলেজিও জেনারেল লাস হেরাস স্কুলে পড়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালে মেসিকে সম্মাননা জানায়। স্কুলে মেসি আর দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতোই পড়ালেখা করেছেন। স্পেনে থিতু হওয়ার পর বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের ইয়ুথ একাডেমি লা মাসিয়াতে তাঁর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এই একাডেমির শিক্ষার্থী হিসেবে একটি এলিমেন্টারি স্কুলে মেসি পড়াশোনা করেছেন বলে জানা যায়। মেসির ভাষা স্পানিশ। তিনি ইংরেজি ভাষা জানেন না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮ এর খবরে মেসির পড়াশোনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, পড়াশোনায় মেসি একজন মাঝারি ধরনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সবসময় একটি বল নিয়ে স্কুলে যেতেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করার পর, তার পরিবার ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনায় স্থানান্তরিত হয়। তিনি বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়াতে যোগ দেন, ফুটবলের অন্যতম সেরা প্রশিক্ষণ সুবিধা পেতে। সেখানেই মেসি ১৩তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। কলেজ পর্যন্ত যাওয়ারও সুযোগ হয়নি তার।
১১ বছর বয়সে মেসির শরীরে গ্রোথ হরমোন জনিত জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু তার বাবা মায়ের সেটার চিকিৎসা করার মত সামর্থ্য ছিল না। এই চিকিৎসার খরচ ছিল প্রতিমাসে প্রায় ৯০০ ডলার। সেই চিকিৎসার জন্যই বার্সেলোনায় গিয়েছিলেন মেসি ও তাঁর পরিবার। মেসিরা ২০০০ সালে কাতালান শহরটিতে যান। যুব দল পেরিয়ে ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে নাম লেখান বার্সেলোনার সিনিয়র দলে।
বার্সেলোনার জার্সিতে লিওনেল মেসির অভিষেক হয় ১৬ অক্টেবর ২০০৪ সালে। মেসির বয়স তখন ১৭ বছর ৩ মাস ২২ দিন। অভিষেকের সাত মাস পর ২০০৫ সালের ১ মে ক্লাবের জার্সিতে প্রথম গোল পান এই ক্ষুদে জাদুকর। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা এই আর্জেন্টাইন ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়ে কাতালুনিয়ার দলটিকে দিয়েছেন মুঠোভরে, দিয়ে যাচ্ছেন এখনও। বিশ্বসেরা এই তারকার ফুটবলের আঙিনায় যত প্রাপ্তি।
বার্সেলোনায় যোগদানের পর টানা ২ দশক ধরে পুরো ফুটবল বিশ্বকে নিজের জাদুতে মাতিয়ে রাখেন এই আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা। নিজের ক্লাব ফুটবল কেরিয়ারে বার্সেলোনার হয়ে ৭৭৮টি ম্যাচে ৬৭২ গোল আর পিএসজির হয়ে ৭৫ ম্যাচে ৩২ গোল করেছেন মেসি।
অপরদিকে, আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে ১৭৫ ম্যাচে পর্যন্ত ১০৩ গোল করেছেন। ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিলিয়ে ১০২৮ ম্যাচে এখনও ৮০৭ গোল করেছেন মেসি। বার্সেলোনার হয়ে মেসি ক্লাবের ইতিহাসে সর্বাধিক ৩৫টি ট্রফি জিতেছেন। তার মধ্যে ১০টি লা লিগা, ৮ স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৭টি কোপা দেল রে, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩টি ক্লাব বিশ্বকাপ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ ৩টি। পিএসজির হয়ে ফরাসি লিগ ওয়ান সহ ৩টি ট্রফি জিতেছেন মেসি।
ক্লাব ফুটবলে কোনো শিরোপাই তার বাকি ছিল না। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে ছিল না কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে জয়। একাধিকবার খুব কাছে গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। অবশেষে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথমবার কোনো শিরোপা জয় হয় মেসির।
এরপর ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপ জিতে নিজের সবথেকে বড় স্বপ্নটা পূরণ করেন তিনি। বিশ্বজয়ী হওয়ার পর প্রথম জন্মদিন পালন করছেন মেসি। এবারের জন্মদিনটা মেসির কাছে তাই খুব স্পেশাল। এর পাশাপাশি টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার হিসেবে গোল্ডেন বল জিতে নেন মেসি। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে পেয়েছেন ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি।