রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপের সুযোগ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:১৩ AM , আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:১৩ AM
স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের অন্যতম সদস্য রাশিয়া। রুশ ভাষা রাশিয়া বা রুশ প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা। এটিতে রাশিয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ লোক কথা বলে। এছাড়াও রাশিয়াতে আরও প্রায় ৮০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত। তুলনামূলক কম খরচে উন্নত শিক্ষার সুব্যবস্থা রয়েছে রাশিয়ায়। এদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং এর শীর্ষ সারিতে অবস্থান করছে। মস্কোর ‘হায়ার স্কুল অব ইকোনমিক্স’এর অবস্থান কিউ এস ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং ১৫০ এর ভিতরে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিক ক্লাসরুম, সুপরিসর ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি, উন্নত হোস্টেল ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণা উপযোগী সুন্দর পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই আকর্ষণীয়।
রাশিয়ার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো, হাইয়ার স্কুল অব ইকোনমিক্স (Higher School of Economics), লমনোসোভ মস্কো স্টেইট ইউনিভার্সিটি (Lomonosov Moscow State University), নভোসিবিরিস্ক স্টেইট ইউনিভার্সিটি (Novosibirsk State University), টোমস্ক স্টেইট ইউনিভার্সিটি (Tomsk State University), ও সেইন্ট-পেটেরসবার্গ স্টেইট ইউনিভার্সিটি (Saint-Petersburg State University)
মার্কেটিং, ফার্মাসি, অ্যাকাউন্টিং, সাইকোলজি, ল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্যুরিজম, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ডিজাইন, জার্নালিজম, ফিনান্স, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রিসন, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এইচআরএম, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, কেমেস্ট্রি, ফিজিক্স সহ আরো অনেক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা: সেপ্টেম্বরের শুরুতে রাশিয়ায় শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। রাশিয়ার ৮৩টি রাজ্যে মোট ৭৬৬টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৬৫৭টি বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরণের শর্ট কোর্স ও ডিপ্লোমা কোর্স।
এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাশিয়ান ও ইংরেজি উভয় ভাষার কোর্স রয়েছে। তবে বেশিরভাগ কোর্স রাশিয়ান ভাষায় পড়ানো হয়। ইংরেজি কোর্সে পড়াশোনা করতে চাইলে আইএলটিএস কোর্স ৬.৫ থাকতে হবে বা সমমানের টোফেল। রাশিয়ান ভাষায় পড়তে চাইলে প্রথমে প্রস্তুতিমূলক কোর্স সম্পন্ন করতে হয় এক বছর। এ কোর্সে আপনাকে রাশিয়ান ভাষা, রাশিয়ান ভাষায় পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করবে।
জীবনযাত্রা ও পড়াশোনার খরচ কম: রাশিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফি বিশ্ববিদ্যালয়, বিষয় ও শহরভেদে ভিন্ন। স্নাতক পর্যায়ে বাৎসরিক টিউশন ফি ৮৯,০০০ রুবল ($১,৫০০) হয়ে থাকে। রেটিং এজেন্সি এক্সপার্টের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বোচ্চ টিউশন ফি ৫,৩০,৭০০ রুবল ($৮,৮০০) হতে পারে। আপনি চাইলে টিউশন ফি রাশিয়ায় এসেও দিতে পারেন অথবা টিউশন ফি’র কিছু অংশ প্রদান করে আসতে পারেন। কোনো প্রকার ব্যাংক ব্যালেন্স, ব্লক অ্যাকাউন্ট দেখাতে হয় না। বছরে চার ধাপে ফি দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
এছাড়া এদেশে জীবনযাত্রার খরচও কম। হিসেব করে চললে, মাসে পাঁচ হাজার টাকায় ভালোভাবে জীবনযাপন করা যায়। মস্কোর মতো বড় শহরগুলোতে টিউশন ফি ও থাকা খাওয়ার খরচ একটু বেশি তবে অন্যান্য শহরগুলোতে খরচ তুলনামূলকভাবে আরো কম। রাশিয়ায় একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পাবেন। গণ পরিবহন, লাইব্রেরি, এবং বিভিন্ন বিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান, যেমন: থিয়েটার, জাদুঘর, অপেরা হাউজ, কনসার্ট হল, পার্ক ও সিনেপ্লেক্সে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখিয়ে বিশেষ ছাড় উপভোগ করতে পারবেন।
আবাসন সুবিধা: রাশিয়ার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নামমাত্র মূল্যে শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নত ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আবাস প্রদান করে থাকে। এদেশে একজন মেয়ে শিক্ষার্থীকে অধিক নিরাপত্তা, অগ্রাধিকার ও সম্মান প্রদান করা হয়ে থাকে।
স্কলারশিপের সুযোগ: প্রতি বছর রাশিয়ান সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে বিপুল পরিমাণ বৃত্তি দিয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘রাশিয়ান গভনর্মেন্ট স্কলারশিপ’। স্কলারশিপ পেলে বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। সেইসাথে পাবেন রাশিয়ার সরকারের কাছ থেকে মাসিক কিছু ভাতা। আপনি যদি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আপনাকে ঢাকাস্থ রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র থেকে স্কলারশিপে আবেদনের জন্য নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করতে হবে।
স্কলারশিপে পড়তে গেলে আপনাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে, কারণ স্কলারশিপের ছাত্র হিসেবে আপনি যদি পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করেন, তাহলে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভালো রেজাল্ট করার পাশাপাশি চেষ্টা করবেন শিক্ষকদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার, যেন আপনি তাদের অধীনে ভালো গবেষণা করার সুযোগ পান। মাস্টার্সে ভালো ফল ও গবেষণাপত্র থাকলে আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন সেখানেই আবার পিএইচডি করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।