চীনে উচ্চশিক্ষা: জেনে নিন পড়াশোনার খরচ-স্কলারশিপ-আবেদনপদ্ধতিসহ আদ্যোপান্ত

চীনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে বিভিন্ন বিষয়ে  খুঁটিনাটি জেনে আবেদন করতে হবে
চীনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে আবেদন করতে হবে  © সংগৃহীত

বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য চীন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি স্বপ্নের দেশ, যেখানে তুলনামূলকভাবে সহজেই ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব। সাংস্কৃতিকভাবে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে গভীর মিল থাকায় শিক্ষার্থীরা সহজেই মানিয়ে নিতে পারেন। পাশাপাশি অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনে ব্যাংক স্টেটমেন্টের শর্তও অনেক সহজ।

চীনা জনগণের আতিথেয়তা, শিক্ষকদের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ও বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীন শুধু প্রযুক্তি বা ব্যবসায় নয়, বরং শিক্ষার ক্ষেত্রেও অনন্য এক অবস্থানে রয়েছে। 

উচ্চশিক্ষার জন্য চীনে যাওয়ার ধাপসমূহ—

*কোন বিষয়ে পড়তে চান সেটি নির্ধারণ করতে হবে আগে। চীনে ইংরেজি ও চাইনিজ দুটি ভাষাতেই পড়ানো হয়; 

*আপনার নির্ধারণ করা বিষয়টি কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে তার খোঁজ নিতে হবে; 

*বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী নিজের যোগ্যাতা যাচাই করে নিতে হবে; 

*পছন্দ অনুযায়ী ন্যূনতম ৪ থেকে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে;

*প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভার্চুয়াল ইন্টারভিউ দিতে হয়; 
 
*নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার লেটার প্রদান করে থাকে; 

*অফার লেটার পাওয়ার পর স্টুডেন্ট ভিসার (X1 বা X2 ভিসা) জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে চীনা দূতাবাসে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়;

*প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা করার পর অ্যাম্বেসি থেকে ইন্টারভিউয়ের ডেট দেওয়া হয়। সাধারণত আপনাকে যদি রিজেক্ট করে তাহলে আগে থেকে জানিয়ে দেবে আর অ্যাকসেপ্ট করলে পাসপোর্ট কালেক্ট করবে; 

আরও পড়ুন: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিচ্ছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

প্রয়োজনীয় নথিপত্র—

*বৈধ পাসপোর্ট  থাকতে হবে;

*একাডেমিক ডিগ্রির সত্যায়িত ট্রান্সক্রিপ্ট ও সনদ;

*মেডিকেল সনদ অথবা বিদেশি স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফরম (৬ মাস সময়ের মধ্যকার);

*পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত (সিভি);

*দুইটি রিকমেন্ডেশন লেটার;

*স্টাডি প্ল্যান/রিসার্চ প্রপোজাল;

*আইইএলটিএস/টোয়েফল/এইচএসকে/এমওয়াই সার্টিফিকেট;

*পুলিশ ক্লিয়ারেন্স থাকতে হবে;

*ব্যাংক স্টেটমেন্ট;

*কো-কারিকুলার এক্টিভিটিস-এর সনদ;

আরও পড়ুন: বিনা মূল্যে পিএইচডি করুন নিউজিল্যান্ডে, বছরে দেবে ২১ লাখ টাকা

চীন 2

যেসব স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে চীন—

চীন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণত ৩ ধরনের স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। যেমন: 

১. সিএসসি স্কলারশিপ

চীন থেকে প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের অসংখ্য স্কলারশিপ দেয়া হচ্ছে। যার মধ্যে সবচেয়ে সম্মানজনক ও বেশি  সুযোগ-সুবিধাযুক্ত হলো চীনা সরকারি বৃত্তি। যা চীন সরকার চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিলের (সিএসসি) মাধ্যমে দিয়ে থাকে। সিএসসি ২ ধরনের হয়ে থাকে। যা টাইপ-‘এ’ এবং টাইপ-‘বি’। 

সুযোগ-সুবিধা—

*আবেদন ফি ও টিউশন ফি মওকুফ;

*আবাসন ফি মওকুফ;

*স্বাস্থ্যবিমা ফি দেবে;

*প্রথমবার চীনে যেতে ও পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার বিমান টিকিট;

*ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগে না;

*স্নাতকে ২৫০০, স্নাতকোত্তরে ৩০০০ এবং পিএইচডি পর্যায়ে ৩৫০০ ইউয়ান উপবৃত্তি প্রদান করে; 

*টাইপ-এ এবং টাইপ-বি-এর সুযোগ-সুবিধা প্রায় একই রকম। প্রথমটিতে বিমান টিকেট দূতাবাস থেকে পাওয়া যায়, দ্বিতীয়টিতে পাওয়া যায় না;

আরও পড়ুন: ফুল-ফ্রি স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষা নিন দক্ষিণ কোরিয়ায়, স্কলারশিপ ১,৮২০টি

২. প্রাদেশিক সরকারের স্কলারশিপ 

চীনের প্রাদেশিক সরকারের স্কলারশিপ (Provincial Government Scholarships) হলো বিভিন্ন প্রদেশ বা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বৃত্তি, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য চীনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে।

সুযোগ-সুবিধা—

*টিউশন ফি মওকুফ (সম্পূর্ণ বা আংশিক);

*আবাসন সুবিধা (ফ্রি বা ভর্তুকিসহ);

*মাসিক ভাতা (কিছু ক্ষেত্রে);

*স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা দেবে;

আবেদন প্রক্রিয়া— 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মধ্যামে আবেদন করতে হয়। এসব প্রাদেশিক সরকারের স্কলারশিপ নির্বাচন করে দিতে হবে। 

আরও পড়ুন: স্কলারশিপে স্নাতকোত্তর করুন ফ্রান্সে, থাকছে ভ্রমণ ও ভিসা খরচ

৩. বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত স্কলারশিপ

চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ প্রদান করে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। এসব স্কলারশিপ সাধারণত টিউশন ফি মওকুফ, আবাসনসুবিধা, মাসিক ভাতা এবং স্বাস্থ্যবিমার মতো সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।

সাধারণত ১ম বছরের জন্য এই স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। মূল্যায়নের মধ্যমে পরবর্তী বছরের জন্য তা বাড়ানো হয়। এজন্য আবেদনের সময় অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তগুলো ভালো করে জেনে নিতে হবে। 

নিজস্ব খরচে পড়াশুনা—

চীনে নিজস্ব খরচে (Self-financed) পড়াশোনা করা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী, বিশেষ করে ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায়। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করে এবং অনেক ক্ষেত্রে চীনা ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করলে খরচ আরও কমে যায়।

নিজ খরচে যেতে চাইলে টিউশন ফি , জীবনযাত্রার খরচ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। 

চাকরির সুযোগ—

চীনে পড়াশোনা অবস্থায় চাকরি করার সুযোগ নেই। তবে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরির সুযোগ বেশ ভালো। বিশেষ করে প্রযুক্তি, প্রকৌশল, আন্তর্জাতিক ব্যবসা, ও গবেষণার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে একাডেমিক রেজাল্ট ৮৫ শতাংশ থাকতে হয়। পাশাপাশি চীনা ভাষা জানা থাকতে হবে। ভাষা জানা থাকলে ব্যাচেলর শেষেই কাজ পাওয়া যায়।

তবে চীনে কাজ করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা দরকা। যেমন কাজের বাজার, ভিসার ধরন, ও ভাষাগত দক্ষতা।

নাগরিকত্ব—

চীনে নাগরিকত্ব (Citizenship) পাওয়া বেশ কঠিন, কারণ চীন খুব কম সংখ্যক বিদেশিকে নাগরিকত্ব দেয়। চীনের নাগরিকত্ব নীতি বেশ কঠোর এবং সাধারণত বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই এটি পেতে পারেন।

সাধারণত বিশ্ব র‍্যাংকিং-৫০০-এর মধ্যে থাকা চীনের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি শেষে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া চীনে ব্যবসায়ী হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে এবং  চাইনিজ নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ থাকে। 


সর্বশেষ সংবাদ