লক্ষ্যে স্থির থেকে ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষার সুযোগ যেভাবে পেলেন মাদ্রাসাপড়ুয়া রাশিদুল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩৭ PM , আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৮:১০ PM

”যখনই আমি বিদেশে পড়তে যাওয়ার কথা বললাম। তখন কিছু মানুষ বলেছিল ‘বিদেশে পড়তে অনেক টাকা দরকার, যা তোমার ফ্যামিলি বহন করতে পারবে না, তাই এসব চিন্তা না করাই ভালো।" তখনই লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিলাম স্কলারশিপ নিয়েই ফ্রি-তে বাইরের দেশে পড়তে যাব।”
এভাবেই নিজের উচ্চশিক্ষার গল্প দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানাচ্ছিলেন মালয়েশিয়ার আলবুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (AIU) ব্যাচেলর ইন কম্পিউটার সাইন্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মো. রাশিদুল ইসলাম। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার ফেলনা গ্রামের মো. জহিরুল ইসলাম ও মোসা. পারভীন বেগমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি।
রাশিদুল ইসলাম কুমিল্লা জেলার মোগলটুলি আফতাব উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮৯ এবং গাজীপুর জেলার তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
রাশিদুল বলেন, আমি যখন অস্টম শ্রেণিতে ছিলাম তখন এক বন্ধু ও প্রতিবেশী এক আন্টির মাধ্যমে জানতে পারি যে বিদেশে নাকি স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করা যায়। তখন থেকেই বলা চলে আমি কিছুটা কিউরিয়াস অ্যান্ড ইন্টারেস্টেড হয়ে যাই বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়ার জন্য। তারপর অস্টম শ্রেণিতে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে কুমিল্লার মোগলটুলি আফতাব উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে সায়েন্সে ভর্তি হলাম। নবম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলাম। আর মাঝে মাঝে আইটি সেক্টর নিয়ে ঘাটাঘাটি করতাম।
দাখিল/এসএসসির পর ভর্তি হলাম বাংলাদেশের টপ একটা মাদরাসায়, যেটা টঙ্গীর তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা। যে প্রতিষ্ঠানে পড়া বলতে গেলে আমার ছোটবেলা থেকেই ড্রিম ছিল। সেখানে যাওয়ার পর রেগুলার ক্লাস আর পড়াশোনা করতাম। তারপর মিজানুর রহমান রনি নামের এক ক্লাসমেটের কাছে একদিন একটা বই দেখেছিলাম, যেটার নাম ‘রোড টু হায়ার স্টাডি’। বইটার মধ্যে বিভিন্ন দেশের অ্যাপ্লিকেশন প্রসিডিউর, রিকোয়ারমেন্ট, স্টুডেন্টদের এক্সপেরিয়েন্স—সবই ছিল। তখন তার থেকে বইটা নিয়ে আমি আর রবিউল আউয়াল (বন্ধু) একসঙ্গে বইটা পড়া শেষ করি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হায়ার স্টাডি নিয়ে মোটামুটি বেসিক আইডিয়া হয়ে যায় এই বইটা পড়ার পর।
তিনি আরও বলেন, এরপর থেকে যখনই সময় পেতাম তখনই অনলাইন থেকে বিভিন্ন দেশের স্টাডিবিষয়ক ইনফরমেশন কালেক্ট করতাম। ফেসবুকে বিদেশে হায়ার স্টাডির যত গ্রুপ সবগুলোতে অ্যাড হলাম। গ্রুপে যারা অ্যাডমিশন অ্যান্ড ভিসা পেত তাদের পোস্ট দেখতাম আর মনে মনে ভাবতাম আমি কবে এমন একটা পোস্ট দিতে পারব। পরবর্তীতে আলিম/এইচএইসসি পরীক্ষা দিলাম। এরপর ভাবছিলাম IELTS-র প্রিপারেশন নিবো, কিন্তু বাড়ির সবাই বলেছিল অ্যাডমিশন টেস্টের প্রিপারেশন নিতে। উদ্ভাসের ফার্মগেট শাখায় ভর্তি হলাম অ্যাডমিশন কোচিং করতে। খুব ভালো প্রিপারেশন নিয়েছিলাম মেডিকেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, কিন্তু দুঃখজনকভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানেই চান্স হলো না। তখন কিছুটা হতাশ হয়ে যাই।
পাশাপাশি আবার বিভিন্ন দেশে যেখানে IELTS ছাড়া ফুল-ফ্রি স্কলারশিপে অ্যাপ্লাই করা যায় সেখানে অ্যাপ্লাই করতে থাকি। মোটামুটি ১৫ টির ওপরে স্কলারশিপে নিজে নিজে অ্যাপ্লাই করি, কিন্তু ওগুলো থেকে কোনো সাড়া পাইনি। তখন SOP (Statement of Purpose), Reference Letter কীভাবে ভালো করে লিখতে হয় তা-ও জানতাম না আমি। আমার এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস ভালো ছিল। সবশেষে ২০২২ সালের শেষের দিকে অনেকটা হতাশ হয়ে যাই। কারণ কিছুই ক্র্যাক করতে পারলাম না, দেশের টপ ইউনিভার্সিটি না বিদেশের। কিন্তু আমি ছিলাম নাছোড়বান্দা—হাল ছেড়ে দিইনি। কারণ, আমার নিজের ওপর যথেষ্ট বিশ্বাস ছিল।
রাশিদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু IELTS প্রতিটা স্কলারশিপের রিকোয়ারমেন্টে ছিল, তাই পরবর্তীতে IELTS-র প্রিপারেশন শুরু করি। মোটামুটি একটা রিজনেবল স্কোর তুলতে সক্ষম হই। ২০২৩ সালে আবার স্কলারশিপে অ্যাপ্লাই করা শুরু করি। এবার অবশ্য SOP (Statement of Purpose) খুব ভালোভাবে লিখে সিনিয়রদের থেকে রিভিউ করে নিয়েছিলাম। কারণ, এ ডকুমেন্টটা স্কলারশিপ পেতে খুব ভালো ভূমিকা রাখে। মোটামুটি ২০-এর অধিক স্কলারশিপে অ্যাপ্লাই করেছি। তার মধ্যে ৫টা স্কলারশিপ থেকে সাড়া পাই এবং ইন্টারভিউ দিয়েছি। কিন্তু এসবের মধ্যে মালয়েশিয়ার আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং কয়েকটা ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইনাল স্কলারশিপ অফার পাই। সবকিছু বিবেচনা করে আমি Albukhari International University-র অফার অ্যাকসেপ্ট করি। ভিসা প্রসেসিং করে চলে আসি মালয়েশিয়ায়।
বিশ্বের এত নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে কেন আলবুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকেই (AIU) বেছে নিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্নাতক পর্যায়ে ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ পেতে দুর্লভ সুযোগ। AIU ফুল-ফান্ড অফার করে, যেখানে টিউশন ফি, হোস্টেল, মাসিক স্টাইপেন্ডসহ অন্যান্য সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ইসলামি সংস্কৃতির ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের থ্রি-জিরো কনসেপ্টের ভিত্তিতে পরিচালিত, যিনি ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এসএসসি এবং এইচএসসিতে ভালো ফলাফল অর্জন করা এবং স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP) ভালোভাবে লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।