‘প্রথম সেমিস্টারেই প্রথম হই, তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন’
- সাগর হোসেন, জবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:৫৫ PM , আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:২৯ PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আমি প্রথম সেমিস্টারে প্রথম হয়েছিলাম, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম শিক্ষক হওয়ার। এছাড়াও বিভাগের সিনিয়রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে দেখে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছি। ধীরে ধীরে নিজের এ স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তর করতে কাজও শুরু করে দেই।
এভাবেই দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে নিজের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক অনুষদভুক্ত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য মেধাবী মৌসুমী রানী দে।
মৌসুমী রানী দের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। ঢাকাতেই জন্ম এবং শৈশব কৈশোরও কেটেছে এই রাজধানীর বুকেই। ঢাকার মাতুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও শামসুল হক খান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। উভয় পরীক্ষাতেই ছিল জিপিএ-৫। এরপর তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
আরও পড়ুন: চুয়েট থেকে দীপ্তর ইন্টেলে যাওয়ার গল্প
স্বপ্ন পূরণের এ শুরুটা কীভাবে? রানী বলেন, ২০১৪ সালে এইচএসসি পাশ করে শুধু ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই। আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে টিউশনি করাতাম। ছোটবেলা থেকেই আমার নিজের জানা জিনিস অন্যকে জানাতে ভালো লাগতো। সেখান থেকেই মূলত শিক্ষকতা পেশার প্রতি একটা ঝোঁক ছিল। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম বর্ষের রেজাল্টেই আমি প্রথম স্থান অধিকার করি।
‘‘তখন থেকেই উদ্দীপনাটা বেড়ে যায়। এটাকে ধরে রাখার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। আমার ডিপার্টমেন্টের অনেক সিনিয়র ভাইয়া-আপুকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে দেখে নিজেও এমন একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। এজন্য পরবর্তীতে ভালো সিজিপিএ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। অনার্সে আমার সিজিপিএ ছিল- ৩.৮৩ এবং মাস্টার্সে ছিল ৩.৮৫।
রানীর ভাষায় ‘আমি যখন চুয়েট শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হয়েছি- সংবাদটা জানতে পেরে খুব অবাক হয়েছিলাম। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। এককথায় বললে, ওই সময়ের অনুভূতিটা হয়ত আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অনুভূতি ছিল। সর্বপ্রথম এই খবর আমার বাবা-মাকে জানাই। তারপর অন্যান্য আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের জানাই। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বন্ধু-বান্ধবীরা এটা শুনে এত খুশি হয়েছিল যেন চাকরিটা ওরাই পেয়েছে। অনেক ভালোবাসা তাদের জন্য।’
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চুয়েটের এ শিক্ষক বলেন, আমার এই সাফল্যের জন্য সর্বপ্রথম আমি সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞ। তারপর আমার মা-বাবা ও ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের কথা বলবো। বাবা-মা ও শিক্ষকমণ্ডলী আমাকে সবসময়ই অনুপ্রেরণা দিতেন। সাধারণত মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে আর লেখাপড়াটা সেভাবে হয়ে ওঠে না। আমার আশেপাশের পরিচিত ও কাছের কিছু মেয়েদের দেখেছি, যাদের দ্রুত বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনাটা সেভাবে চালিয়ে যেতে পারেনি।
আরও পড়ুন: সেরাদের সেরা হয়ে তাক লাগাল চুয়েট
তিনি বলেন, আমি একাডেমিক পাড়াশোনায় কিছু জিনিস অনুসরণ করতাম। সাধারণত পরীক্ষা নিকটবর্তী হলে সবাই পড়াশোনায় মন দেয়। কিন্তু আমি একটা সেমিস্টারের শুরু থেকেই নিয়মিত পড়তাম। বই, শিট, নোট, ক্লাস লেকচার সবই শুরু থেকে মনোযোগ সহকারে ফলো করতাম। ফলে, পরীক্ষার সময় আমার তেমন কষ্ট করা লাগতো না।
‘‘পরীক্ষার আগে সবকিছু একবার রিভিশন দিয়ে পরীক্ষা দিতাম। প্রযুক্তি নির্ভর এই সময়ে আমার স্মার্টফোনকেও পড়াশোনার ক্ষেত্রে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করেছি। সবসময় ক্লাস পরীক্ষার আপডেট ফেসবুক বা মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে পেয়েছি। এছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবহার করে শেখার যে প্ল্যাটফর্ম আছে সেগুলোকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়েছি।’’
চুয়েটের শিক্ষক হয়েও নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে ভুলেননি রানী। তিনি বলেন, আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনেকটাই নবীন। ফলে বেশকিছু সীমাবদ্ধ রয়েছে। নানা সমস্যা সত্ত্বেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির প্রতিযোগিতায় যেভাবে সফলতা পাচ্ছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। নতুন ক্যাম্পাস নির্মিত হলে আশাকরি সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।