গুচ্ছে চূড়ান্তভাবে থাকছে না ৩ বিশ্ববিদ্যালয়, বের হওয়ার পথে আরও চারটি
- আহমেদ ইউসুফ
- প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৭ PM , আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০২ PM
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এরইমধ্যে চূড়ান্তভাবে বেরিয়ে গেছে তিনটি উচ্চশিক্ষালয়। একই পথ অনুসরণ করছে আরও চারটি। বের হয়ে যাওয়া তিন উচ্চশিক্ষালয় হচ্ছে-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। একই পথ অনুসরণ করা চার বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মত, গুচ্ছে থাকতে হলে সবাইকে থাকতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে বাকিরাও গুচ্ছে থাকতে আগ্রহী নয়। এর কারণে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই চার বিশ্ববিদ্যালয়।
ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তির ঘোষণা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যোগ্য শিক্ষার্থী না পাওয়া, সেশনজট বৃদ্ধি, আসন ফাঁকা থাকা এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মান হারাচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্বতা হারানোর অভিযোগও রয়েছে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায়।
গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৯টায় ভার্চুয়ালি শুরু হওয়া এ সভা শেষ হয় সাড়ে ১১টারও পর। তবে এ সভাতেও গুচ্ছে কে থাকবে কে থাকবে না এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটেনি।
বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মতামত দিলেও চারটি বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন সভায়। এরমধ্যে রয়েছে, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী জানান, আমরা উপাচার্যদের মিটিংয়ে গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। তবে আমরা আহ্বান জানিয়েছি, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইতোমধ্যে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গেছ, সরকার যদি তাদের যুক্ত করতে পারে তাহলে আমরাও থাকব। তবে আমি মনে করি, এ অবস্থায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। দু-একদিনের মধ্যে আমাদের ভর্তি সার্কুলারও যাবে।
এদিকে গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় থাকতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের দফায় দফায় চিঠি ও নির্দেশনা দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমনকি শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বাক্ষরিত একটি আধা সরকারি পত্রও প্রেরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয় থেকে গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে একটি জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সুষ্ঠু উন্নয়ন ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের সরকারি সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নিতে সকল ভিসিদেরকে পুনরায় অনুরোধ জানানো হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও মানসিক চাপ কমানো, ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় সাশ্রয় করা এবং মেধাভিত্তিক, স্বচ্ছ ও সমন্বিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন নিশ্চিত করা।
নিজেদের অবস্থান জানিয়ে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, আমাদের কথা হলো স্বাধীনভাবে পরীক্ষা নেয়ার জন্য বশেমুরবিপ্রবি সক্ষম। কিন্তু ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু গুচ্ছ বেরিয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে আমি মনে করি এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। যে-সব বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে গেছে, তাদের যে সমস্য রয়েছে একই সমস্যো আমাদের এখানেও আছে। তারা না থাকলে বশেমুরবিপ্রবিও গুচ্ছে থাকবে না। উপাচার্যদের মিটিংয়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছি।
গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তর কথা জানান হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সরকার যদি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে রাখতে পারে সেক্ষেত্রে আমরাও সিদ্ধান্ত করতে পারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমরা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি। সরকার যদি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে সেক্ষেত্রে আমাদেরও অংশ নিতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু একরে পর এক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষার ঘোষণা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গুচ্ছে থাকার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও গুচ্ছে থাকার পক্ষে নয়। সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারলে আমরাও গুচ্ছে থাকব না।
এসব প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমরা চাই, গুচ্ছ থাকুক এবং সব বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিক। এটা শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর হবে।