জগন্নাথের বেদখলে থাকা আবাসিক হলগুলো যেমন আছে

বেদখলে থাকা জবির বিভিন্ন আবাসিক হল
বেদখলে থাকা জবির বিভিন্ন আবাসিক হল  © টিডিসি ফটো

২০০৫ সোলে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা হয়। কলেজ থাকাকালীন সময়ে জগন্নাথে হল ছিল ১২টি। কিন্তু ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে হলগুলো বেদখল হয়। শিক্ষার্থীদের বৃহৎ দুই আন্দোলনের পরও এসব হল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের দাপটে তিন যুগের বেশি সময়ের পরও সরকারও কোনো কার্যকর সুরাহা দিতে পারেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর গত ২০ অক্টোবর ছাত্রীহল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে অনাবাসিক তকমামুক্ত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী বিলুপ্ত কলেজের সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে মুসিহ মুহিত অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেদখলে থাকার কারণে ১২টি হল বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়কে। ২০০৯ সালে প্রথম হলের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক মাসের মধ্যে ১২টি হল ও বেদখল হওয়া অন্যান্য সম্পত্তি উদ্ধারে সুপারিশ করতে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। তবুও বেদখলে থাকা হল ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

আবাসিক সংকট নিয়ে চলতে চলতে ২০১৪ ও ২০১৬ সালে  আবারো বড় দুইটি  হল অন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পুলিশের টিয়ার গ্যাস-রাবার বুলেটের নির্যাতন সহ্য করেও সফল হতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, হলগুলো প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের অবৈধ দখলে রয়েছে।

তিব্বত হল:
পাটুয়াটুলী ওয়াইজঘাট এলাকার ৮ ও ৯নং জিএ ল পার্থ লেনের ৮.৮৮৯ কাঠার হলটিও দখলের অভিযোগ রয়েছে সাংসদ হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে। ২০০১ সালে হলটির স্থানে স্ত্রীর নামে গুলশান আরা সিটি মার্কেট নির্মাণ করেন তিনি। প্রতিবাদে কয়েক দফা আন্দোলনেও নামে শিক্ষার্থীরা। তবে তিনি জায়গাটি তার নিজস্ব বলে দাবি করেছেন।

সাইদুর রহমান হল ও রউফমজুমদার হল: 
হিন্দুদের দানকৃত হল দুটির বর্তমানে অস্তিত্ব নেই। মৌখিকভাবে দান করা সম্পত্তিটি জনৈক আইনজীবী ইব্রাহিম জাল দলিল করে বিক্রি করে দেন বলে জানা যায়। ১৫, ১৭ ও ২০ যদুনাথ বসাক লেন, টিপু সুলতান রোডের সাইদুর রহমান হলে হার্ডওয়ারের দোকান তৈরি হয়েছে। পাশের রউফ মজুমদার হল জাল দলিলের মাধ্যমে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা বিক্রি করে দিয়েছে।

আবদুর রহমান হল:
আরমানিটোলা বটতলার ৬, এসি রায় রোডের হলটিতে বাস করছেন পুলিশ সদস্যরা। ঢাকা আঞ্জুমান সংস্থা হলটি দখলের চেষ্টা করছে বলে জানা যায়। ১৯৯৬ সালে সংস্থাটি মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করে। মালিকানার রায় পেলেও মামলা পরিচালনায় ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করায় সংস্থাটির সভাপতি কেএম আকবরের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। ভবনটির মূল ফটকে এখনও হলের সাইনবোর্ড রয়েছে। অক্ষত আছে অবকাঠামো।

শহীদ আনোয়ার শফিক হল:
আরমানিটোলা মাহুতটুলির ১, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী রোডের ৪০ কাঠার হলটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করে টিন, হার্ডওয়ার ও ফার্নিচারের গোডাউন তৈরি করেছেন তারা। এদের অনেকেই ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিমের আশীর্বাদপুষ্ট বলে জানিয়েছে গোডাউনের কর্মচারীরা। ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে হলটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন শিক্ষার্থীরা।

বজলুর রহমান হল:
বংশালের ২৬, মালিটোলার হলটিতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় বানানো হয়েছে। কিছু অংশ স্থানীয় ভূমিদস্যুরা দখল করেছে। ১৯৮৫ সালে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ছাত্ররা হলটি ছাড়তে বাধ্য হন।

নজরুল ইসলাম হল:
গোপীমোহন বসাক লেনের ৫/১,২,৩,৪ ও ৬নং টিপু সুলতান রোডের হলটির ২০ কাঠা জায়গায় গড়ে উঠেছে জামেয়া শরীয়াবাগ জান্নাত মাদ্রাসা ও এতিমখানা। সাবেক কমিশনার আওলাদ হোসেন দিলীপ এর তত্ত্বাবধান করছেন। হলটির একাংশ দখল করে ভবন নির্মাণ করেছেন বিটিভির সাবেক ক্যামেরাম্যান গোলামুন্নবী। তার আত্মীয়রা সেখানে অবস্থান করছেন।

শহীদ শাহাবুদ্দিন হল:
তাঁতীবাজার ৮২, ঝুলনবাড়ী লেনের হলটি দুই যুগেরও বেশি সময় পুলিশের দখলে ছিল। ২০০৯ সালের জুনে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক এর দখল নেন।

কর্মচারী আবাস:
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আবাসস্থল ছিলো। ২৬, পাটুয়াটুলীর কর্মচারী আবাসে ছয়তলা বিশিষ্ট ক্রাউন মার্কেট তৈরি হয়েছে। জনৈক ওবায়দুল্লাহ এর মালিকানা দাবি করছেন বলে জানা যায়।

বাণী ভবন:
১নং ঈশ্বরচন্দ্র দাস লেনের ৩৫ ও ৩৬ প্যারিদাস রোডের ১০ কাঠার বাণী ভবন ২০১৬ সালে  শিক্ষার্থীরা দখল মুক্ত করে । বর্তমানে উক্ত ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সহায়ক কর্মচারীরা বসবাস করে । কিন্তু এখনো ভবনের সম্পূর্ণ অংশীদারিত্ব পায়নি জবি প্রশাসন।


সর্বশেষ সংবাদ