ঈদে ঢাকা কলেজের ছাত্রনেতাদের নানা কর্মসূচি
- ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫০ AM , আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০১:০৮ PM

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা কলেজের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো নানা ধরনের মানবিক কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে। ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন সংগঠনগুলোর ছাত্রনেতারা। তাদের কেউ ঈদ উপলক্ষে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলছেন, আবার কেউ দলীয় সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরছেন।
বিগত সময়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক আধিপত্যের মাধ্যমে ক্যাম্পাস অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো কার্যক্রম পরিচালনায় বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। সে সময় কলেজ প্রশাসন ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ছাত্র সংগঠনগুলো রমজান মাসজুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। তার ধারাবাহিকতায় ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের ছাত্রসংগনগুলো বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পিয়াল হাসান বলেন, আমি পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে ঈদ করব। তবে বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে যারা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য সামান্য উপহার থাকবে। আমি বিশ্বাস করি উপহার কখনো প্রচার-প্রচারণার অংশ হতে পারে না। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে সহনশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছি এবং অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো করছে। এবার আমরা সবাই ঈদে মিলেমিশে আনন্দঘন মুহূর্ত পার করব। আমরা সাংগঠনিকভাবে দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামে আহত ও নিহত পরিবারের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করব এবং যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তাদের সহযোগিতা করব।
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকিম জানান, তারা ইতোমধ্যে কলেজের কর্মচারীদের নিয়ে ইফতার মাহফিল আয়োজন করেছেন এবং তাদের সহযোগিতার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কলেজের মামাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে কাপড়, খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ যার যেমন চাহিদা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দিয়েছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সজিব উদ্দিন জানান, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় থাকায় এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা আসেনি। কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এনসিপিতে যোগ দেওয়ার পর দল এখনো পুনর্গঠিত হয়নি, তাই আমরা অপেক্ষায় আছি। স্বাধীনতা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনেও কেন্দ্র থেকে কোনো কর্মসূচির নির্দেশনা আসেনি। তবে কয়েকজন নেতা হয়তো ব্যক্তিগতভাবে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়েছেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি নোমান আলম মুন ঈদ উপলক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যে যে এলাকায় অবস্থান করেন না কেন, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে যার যার এলাকায় হতদরিদ্রদের সামাজিক উদ্যোগে সাহায্য-সহযোগিতা করুন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। কোনো অন্যায়-অনিয়ম দেখলে প্রতিবাদ করুন। নিরাপদে থাকুন, সবার ঈদ আনন্দে কাটুক ঈদ মোবারক।
ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি নাহিয়ান রেহমান রাহাত বলেন, আমি বাড়িতে ঈদ উদযাপন করব। ঈদের আগে থেকেই আমরা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কাজ করছিলাম। এই ছুটির পর সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব।
তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরের এই ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক কিছুর আশা থাকলেও বাস্তবে হতাশ হয়েছি। প্রতি বছর ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস আটকে রাখা হয়, ঈদের দিনেও শ্রমিকরা রাস্তায় আন্দোলন করেন, এই দৃশ্য আওয়ামী লীগ আমলে স্বাভাবিক হলেও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের সময়েও আমরা দেখছি পোশাকশ্রমিকরা রাস্তায়। তারা তিন মাসের বেতন পাননি, ঈদের বোনাস পাননি। তারা শ্রম ভবনের সামনে গত এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান করছেন। তাদের আন্দোলনে পুলিশ হামলা করেছে। বেতন না দিয়ে বেতন দিয়ে দেওয়ার মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছে সরকার ও মালিকপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ঢাকা কলেজের ছাত্র সংগঠনগুলোর ঈদ পরিকল্পনা রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। কেউ দলীয় নির্দেশনার অপেক্ষায়, কেউ ঈদ উদযাপনে গ্রামের পথে, আবার কেউ অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে এসেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে প্রথম ঈদ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের আহ্বান জানিয়েছে সব ছাত্রসংগঠন।