বিইউপিতে বিক্ষোভ

জুলাই আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, ৬ জনকে আর্থিক দণ্ড

আহত দুই শিক্ষার্থী
আহত দুই শিক্ষার্থী  © ফাইল ফটো

কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ-ছাত্রলীগ দ্বারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারসহ একাধিক দাবিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া দুই শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি আরও ৬ শিক্ষার্থীকে আর্থিক দণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছে। শাস্তি পাওয়া ৮ শিক্ষার্থীই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘স্বৈরাচার’ বিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।

শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ১৮ জুলাই পুলিশ-ছাত্রলীগের দ্বারা বিইউপি শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার বিচার, সেমিস্টার ফি কমানো, কোটার যৌক্তিক সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ১ সেপ্টেম্বর বিইউপি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৯ দফা দাবি পেশ করা হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একাধিক শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে ক্লাস-পরীক্ষা থেকে অব্যাহতি দেয় বিইউপি প্রশাসন।

সম্প্রতি বিইউপির শৃঙ্খলা বোর্ডে এ ঘটনায় মিছিল, স্লোগানসহ ক্যাম্পাসে (সেনানিবাসের অভ্যন্তরে) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ হোসেন ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হককে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

পাশাপাশি আইন বিভাগের তাহিদুর রহমান অয়ন, রুমন আহমেদ, লোকপ্রশাসন বিভাগের নাজমুস সাকিব, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মাইনুল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের হামিম আল ফুয়াদ, অর্থনীতি বিভাগের সাব্বির হোসেনকে ১০ হাজার টাকা অর্থ দণ্ড দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পক্ষে প্রক্টর মো. ইকরামুল ইয়াছিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে দণ্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের শৃংখলা বোর্ডের এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

এ বিষয়ে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী আসিফ হোসেন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করার কারণে শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের উপর ক্ষুব্ধ ছিল আন্দোলনে অংশগ্রহণের সময় আমি গুরুতর আহত হই। আমার মাথায় ৬টি সেলাই দিতে হয়। এমন অবস্থাতেই আন্দোলন থেকে সরে আসতে আমার ছাত্রত্ব বাতিলসহ আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিতে থাকে বিইউপি প্রশাসন। বর্তমান ভিসি সরাসরি স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট। এই ভিসির প্রত্যক্ষ মদদেই ১৮ জুলাই মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ-পুলিশ নির্মমভাবে হামলা চালায়। বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পরিবর্তন হলেও কোন এক অজানা কারণে আমাদের ভিসি পরিবর্তন হয়নি।

আরেক শিক্ষার্থী তাহিদুর রহমান অয়ন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করায় ১৬ জুলাই থেকেই আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাঁধা প্রদান করে আসছিল। সে সময় শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয় এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের হলের সিট বাতিলের হুমকি দেয়া হয়। এমনকি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া আমাদের সকলের উপর গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিইউপি সিকিউরিটি সেল থেকে লোকজন এসেও স্ব-শরীরে হুমকি দিচ্ছিল।

এদিকে, বহিষ্কৃত এক শিক্ষার্থীর চিঠি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। তাতে উল্লেখ রয়েছে, গত ১ সেপ্টেম্বর বিইউপিতে মিছিল, স্লোগান এবং বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করা সহ ক্যাম্পাসে (সেনানিবাসের অভ্যন্তরে) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। আপনার এই কার্যকলাপ বিইউপি প্রক্টরিয়াল সিস্টেম বিধিমালা ২০১৩ এর ১২(ক) ও (খ), অনুচ্ছেদ ১৩(খ) এবং অনুচ্ছেদ ১৪(ঙ); বিইউপি শৃঙ্খলা আচরণ বিধিমালা-২০১৩ এর তৃতীয় পরিচ্ছেদ এর অনুচ্ছেদ ১২ (ক) ও (খ) এবং ক্যান্টনমেন্ট আইন ২০১৮ এর অধ্যায় ৮, ধারা ৯৯ এর ১(খ) অনুযায়ী গর্হিত এবং অপরাধমূলক কাজ প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত অপরাধে আপনার সম্পৃক্ততার মাত্রা অনুযায়ী ৬২তম শৃঙ্খলা বোর্ড সভায় উপস্থিত সকল সদস্যদের সম্মতিক্রমে আপনার প্রতি কার্যকর থাকা সাময়িক বহিষ্কার আদেশ তুলে নেয়া পূর্বক আপনাকে এক বছরের জন্য অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হলো। সেটি ২৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইকরামুল ইয়াছিনকে ফোন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনি ক্যাম্পাসে আসেন, তখনই এ বিষয়ে কথা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ