ক্যাম্পাসেই মারধর ও ছিনতাইয়ের শিকার রাবি শিক্ষার্থী, প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

নিজ ক্যাম্পাসেই মারধর ও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. আরিফ হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ভোর পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলের সামনের রাস্তায় ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি।

ক্যাম্পাসে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও তা প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা নেই বলছেন শিক্ষার্থীরা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, গত শুক্রবার ঢাকা থেকে এক বন্ধু রাজশাহীতে আসে। তাকে রিসিভ করে  ক্যাম্পাসের সুইমিংপুল সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে শাহ্ মখদুম হলের সামনে আসার সময় একটা বাইকে তিন ব্যক্তির বড় রেঞ্জ ও ছুরি প্রদর্শন করে। তারা আমাকে শারীরিক আঘাত করে এবং  আমার কাছে থাকা সব জিনিস বের করতে বলে। আমি তাতে রাজী না হওয়ায় আমাকে ও আমার বন্ধুকে টেনে হিঁচড়ে জিমনেসিয়ামের রাস্তার দিকে নিয়ে যায়। এরপর আমার কাছে থাকা একটি স্বর্ণের চেইন, ১৫০০০ টাকা, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ও এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয় তারা।

তিনি বলেন, ঘটনার শেষদিকে যখন আমি চিৎকার করতে থাকি তখন বিনোদপুর দিক থেকে দুজন ছেলে দৌড়ে আসে এবং ঐ তিনজন তখনও আমাকে মারতে থাকে। ছিনতাইকারীরা চলে যাওয়ার পরে সেই দুজন ছেলে জানায় যে সে ঐ তিন ছিনতাইকারীর দুজনের নাম জানে এবং একজনের সাথে সে ফেসবুকে এ্যাড ও আছে। তিনজনের মধ্যে দুজনের নাম রুমি ও রাব্বি; আর তাদের সাথে থাকা বাকী একজনের নাম সে জানেনা বলে জানায়। সে আরও জানায় তিনজন ছিনতাইকারীর বাসা বুধপাড়া। পরবর্তীতে গতকাল বড় ভাইদের সহযোগিতায় ছিনতাইকারীদের সকল তথ্য জোগাড় করে থানায় দিই এবং তাদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করি।

রবিবার সন্ধ্যায় যখন আমি থানায় অবস্থান করি ছিনতাইকারী রুমির মা ও মামাতো ভাই থানায় এসে পুলিশের সাথে আলোচনা করে আমার সাথে এসে মীমাংসার কথা বলে। তবে আমি কোনো মিমাংসায় যাইনি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

অভিযুক্ত তিন ছিনতাইকারী হলেন, মকবুল হোসেনের ছেলে রুমি, সিরাজুলের ছেলে রাজু এবং রাব্বি। তাদের তিন জনের বাসা নতুন বুধপাড়া এলাকায়।

বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রক্টরিয়াল বডি ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে ক্যাম্পাস দিন দিন দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা, পুলিশ টিম মোতায়েন রয়েছে। তারপরও অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সত্যিই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ক্যাম্পাসের মধ্যে এমন ঘটনা দুঃখজনক; আমাদের ক্যাম্পাসের অনেকগুলো গেট হওয়ার কারণে পুরো ক্যম্পাস আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এছাড়া আমাদের সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। এ ধরণের ঘটনা যেন ক্যাম্পাসে আর না ঘটে সে জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ছিনতাইয়ের শিকার শিক্ষার্থীকে সব ধরণের সহায়তা আমরা দিচ্ছি।

এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি; এখন আমরা এটি অভিযোগ হিসেবেই নিয়েছি। সব কিছু জেনে আমরা এর বিরুদ্ধে একটা পদক্ষেপ নিতে পারব।


সর্বশেষ সংবাদ