বেরোবিতে সমাবর্তন না হওয়ায় মূল সনদ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

বেরোবি
বেরোবি  © টিডিসি ফটো

শিক্ষাজীবন শেষ করার পর সমাবর্তনের মাধ্যমে গ্রাজুয়েটদের মধ্যে মূল সনদ বিতরণ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মূল সনদ থেকে বঞ্চিত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন সমাবর্তন আয়োজন করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনকি সমাবর্তন আয়োজন করতে কোন উদ্যোগও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না উচ্চশিক্ষার এই বিদ্যাপীঠে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হচ্ছেন আচার্য। আচার্য অথবা আচার্যের প্রতিনিধির সভাপতিত্বে সমাবর্তনের মাধ্যমে গ্রাজুয়েট তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সনদ বিতরণ করা হয়। কিন্তু পাঠদান শুরু করার পর কোনো সমাবর্তন আয়োজন না করায় সাময়িক সনদপত্র নিয়েই ক্যাম্পাস ছাড়তে হচ্ছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এতে নানা ধরনের ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

আরও পড়ুন: ইবি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে তদন্তে নামছে ইউজিসি

জানা গেছে, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিদাতারা মূল সনদকে গুরুত্ব দেন। আর চাকরি ছাড়াও কোন শিক্ষার্থী যদি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চান, স্কলারশিপ পাওয়ার পর মূল সনদ জমা দিতে হয় বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু মূল সনদ না পাওয়ায় প্রায়শই জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় বেরোবি শিক্ষার্থীদের। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্নাতকোত্তর শেষ করে বের হয়ে গেছেন প্রায় সব বিভাগের অন্তত নয়টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। দশম ব্যাচেরও অধিকাংশ বিভাগ শেষ করেছে স্নাতক ডিগ্রী। এদিকে করোনা পরবর্তী সংকট কাটাতে এক বছরে তিন সেমিস্টারের পরীক্ষা নেওয়ায় সেশনজট এখন শূন্যের কোঠায়। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। একসঙ্গে এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর সমাবর্তন আয়োজন করা অনেক কঠিন কাজ, যা হয়তো ভবিষ্যতে সম্ভব নাও হতে পারে। ফলে বেরোবি’র সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার প্রহর ক্রমশ বাড়ছে।

সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সমাবর্তনের ঘোষণা দিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীরা বলেন, সমাবর্তনের গাউন আর টুপি পড়া ছবি দেখে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন লালন করি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সে স্বপ্ন আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা কে বলতে পারে।

মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘বেরোবিতে সমাবর্তন চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাব এবং মূর্তি কোনটাই নষ্ট করবেন না।’ সাইদুর জামান বাপ্পী নামে আরেক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সমাবর্তন দেখে যাওয়ার খুব ইচ্ছা।’

সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা ২০১৬-২০১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর সমাবর্তন আয়োজনের কথা থাকলেও বেরোবিতে ১৫ বছরেও একটি সমাবর্তন করতে পারেনি। এটা নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চরম ব্যর্থতা।

এবিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বেরোবিসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম বকুল বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও সমাবর্তন হয়নি, এটি মেনে নেওয়া কষ্টকর। সমাবর্তন না করার পেছনে আসলে সীমাবদ্ধতা নাকি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দায়ী, সে বিষয়ে আমরা সন্দিহান। একটি সম্মানজনক ও আনন্দঘন বিদায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য। প্রশাসনেরও অবশ্যই সেটা দেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন লিটু বলেন, প্রতিষ্ঠার দেড় দশক পেরিয়ে গেলেও প্রথম সমাবর্তন না হওয়া দুঃখজনক ও হতাশার। যত দ্রুত সম্ভব সমাবর্তন আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষকে আহবান জানাই।

সমাবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আনন্দের ও সম্মানের বিষয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে কেনো সমাবর্তন আয়োজন হয়নি সেটা জানি না, তবে আমি চেষ্টা করবো সমাবর্তন আয়োজন করার।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল সার্টিফিকেট দিতে গেলে অবশ্যই সমাবর্তন করতে হবে। এ ব্যাপারে ভিসিকে বলা হবে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলেও করোনা মহামারির কারণে তা আয়োজন করতে সক্ষম হননি। তবে ড. কলিমউল্লাহ ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বোধনী সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নতুন শিক্ষার্থীদের বরণ করেছিলেন, যা সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence