ইবি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে তদন্তে নামছে ইউজিসি

লোগো
লোগো  © ফাইল ছবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকর্তার বেতন বৃদ্ধিতে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।   গতকাল বুধবার এই কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর দিল আফরোজা বেগমকে। এছাড়া কমিটিতে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের এবং ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান সদস্য হিসেবে রয়েছেন। অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শিগগিরই ইবিতে যাবে তদন্ত দল।

জানা গেছে, ইবি কর্মকর্তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বেতন স্কেল বৃদ্ধি করা হয়। যদিও এই বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ইউজিসির অডিট আপত্তি জানানো হয়েছিল। এরপরও গত ৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫৫ তম সিন্ডিকেট সভায় শর্তসাপেক্ষে কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি করা হয়।

ইউজিসি বলছে, একসাথে সকল কর্মকর্তার বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি আইন অনুযায়ী ঠিক আছে কিনা কিংবা এর পেছনে অসৎ কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা সেই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত কমিটি সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ইউজিসির দাবি, ইবি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ‘স্কেল জাম্পিং’ করা হয়ে থাকতে পারে। যাদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে তাদের কারো বেতন স্কেল অনুযায়ী ৪৩ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। তবে তাদের ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। স্কেল জাম্পিংয়ের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইবি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধির আইনগত বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তাদের কাছে কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। এই কাগজপত্রগুলো যাচাই করে দেখা হবে। এছাড়া সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ইবি কর্মকর্তারা সহকারী রেজিস্ট্রার পদে ৩৫ হাজার ৫০০ ও উপ-রেজিস্ট্রার বা সমমান পদে ৫০ হাজার টাকা বেতন স্কেলের দাবি করে আসছিলেন। কর্মকর্তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ২৪৭তম সিন্ডিকেট সভায় শর্ত সাপেক্ষে তাদের দাবি মেনে নেয় তৎকালীন প্রশাসন। এতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ফলাফল ও চাকরির সময়ের উপরে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়।

এতে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত অনুযায়ী, এই বেতন স্কেল থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৫৪তম সিন্ডিকেট সভায় সবার জন্য একই স্কেল নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ২৫৫তম সিন্ডিকেটে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। 

সিন্ডিকেটে পাসের পর উপ-রেজিস্ট্রার ও সমমানের কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল চতুর্থ গ্রেডে ৫০ হাজার এবং সহকারী রেজিস্ট্রার ও সমমানের কর্মকর্তাদের জন্য ষষ্ঠ গ্রেডে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়। তবে এই বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে অডিট আপত্তি জানায় ইউজিসি। ইউজিসির অডিট আপত্তি থাকায় সত্ত্বেও সিন্ডিকেট সভায় এটি পাস করা হয়। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে ইউজিসি।

তবে তদন্ত কমিটির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন ইবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অর্থ খরচের  হিসাবের বিষয়ে জানতে ইউজিসি থেকে পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে। বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানা আমার জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে যে যে বিশ্ববিদ্যালয়  কর্মকর্তাদের এই ধরনের বেতন স্কেল বৃদ্ধির নীতিমালা করেছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ইউজিসি আপত্তি জানিয়েছে। বেতন স্কেলের বিষয়ে শুধুমাত্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো তথ্য চাওো হয়েছে কিনা বা ইউজিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পরিদর্শন করা হবে কিনা এটা জানা নেই। 

সার্বিক বিষয়ে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে, নিয়ম অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি করা হলে সেটি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে অভিযোগ রয়েছে ইবিতে স্কেল জাম্পিং করা হয়েছে। যার যে স্কেলে বেতন পাওয়ার কথা তারা তার চেয়ে বেশি বেতন পাচ্ছেন। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ