ইডেনের বকুল গাছের তলায় কেটে যাচ্ছে চর্মকারের তিন প্রজন্ম
- সানজিদা চৌধুরী রজনী
- প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২২, ১০:১০ PM , আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪৯ PM
দাদা থেকে বাবা, পরে বাবা থেকে ছেলে—তাদের চর্মকারের এ পেশা ইডেন মহিলা কলেজের বকুল গাছের তলায় কেটে যাচ্ছে তিন প্রজন্ম। গল্পটা লিটনের। শুরুটা ছিল তার দাদা রবিদাস ঠাকুরের হাত ধরে। তার দাদার (রবিদাস ঠাকুর) মৃত্যুর পর স্মৃতি হিসেবে এ পেশার হাল ধরেন রবিদাস ঠাকুরের ছেলে বাবলুর রবি দাস। এখন বাবা-ছেলে মিলে টেনে নিচ্ছেন লিটনের দাদার এ পেশা।
জানা গেছে, ইডেন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কলেজটির বকুল গাছের তলায় বাবলুর রবি দাসের বাবা রবিদাস ঠাকুর এই পেশা শুরু করেন। তার বাবা মারা যাওয়ার পর বাবলুর রবি তার বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে এই পেশাটিকে বেছে নেন। সেখান থেকেই শুরু, আজ ৭৫ বছর বয়সেও চলছে তার কাজ। তিনি বৃদ্ধ হওয়ায় তার ছেলে লিটন বিশ বছর বয়স থেকে এই কাজে যোগ দেন।
আর বাবলুর রবি দাসের চর্মকারের এ কাজের বয়স ৬০ বছর। তার বর্তমান বয়স ৭৫ বছর। আর লিটনের বর্তমান বয়স বত্রিশ বছর। তার গ্রামের বাড়ি রাজধানীর লালবাগ কেল্লা। স্থানীয়দের হাতে তাদের বাড়িটি দখলে নিয়ে নেওয়ায় বর্তমানে তারা মিরপুর-১১ নম্বরের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন।
বাবলুর রবি দাস বলেন, আমার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে করোনাভাইরাসের লকডাউনে মারা গেছেন। সে ছেলের বউ-বাচ্চা মিলে ৫ জন সবাইকে আমাদের দেখাশুনা করতে হয়। আর আমার মেজো ছেলে আমার সাথে কাজ করে। তারও দুইটি সন্তান রয়েছে। আর ছোট ছেলে এক্সসিডেন্ট করে ১ বছর ধরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আর এক মেয়ে অসুস্থ। আমাদের বাবা-ছেলের এই পেশা থেকে কোনো মাসে বার হাজার, কোনো মাসে পনের বা সতের হাজারের মত আয় হয়। এই আয় থেকেই বাসা ভাড়া প্রতি মাসে ৪,৫০০ হাজার দিতে হয় এবং পরিবারের সবার বরন-পোষণ, খাওয়া-দাওয়া সব মিলিয়ে কঠিন জীবন-যাপন আমাদের।
আরও পড়ুন: বাইরে বের হলেই ইডেন ছাত্রীদের দিকে ধেয়ে আসছে তির্যক মন্তব্য
ইডেন কলেজের বকুল গাছের তলায় বাবলুর রবি দাস ও তার ছেলে লিটনের কাজ নিয়ে কলেজটির মাস্টার্স অধ্যায়নরত আঞ্জুমা আক্তার মিলি বলেন, আমি ২০১৬ সাল থেকে এই কলেজে আছি। সেই থেকেই উনাদের দেখছি এখানে কাজ করছেন। কখনো ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি। বরং আমাদের সাথে বিনয়ী আচরণ এবং সবসময় আমাদের শ্রদ্ধা করেন।
লিয়া নামের আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমি বিগত সাত বছর ধরে হলে আছি। তাদের পাশ দিয়ে যাওয়া-আসার সময় উনাদের চোখে পড়ে। উনারা দুই জন খুবই আন্তরিক এবং কলেজের টিচার থেকে শুরু করে সবাইকে অনেক সম্মান দিয়ে কথা বলেন। এতো দিনে উনারা আমাদের অনেক কাছের মানুষও হয়ে উঠেছেন। উনাদের হাতের কাজও বেশ চমৎকার।
বাবলুর রবি দাসের ছেলে লিটন বলেন, ইডেন কলেজের ছাত্রীরা কখনোই আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। এখানে কাজ করে আমাদের খুবই ভালো লাগছে। শিক্ষার্থীরাও আমাদের সাথে যথেষ্ঠ আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলেন। শুধু একটাই কষ্ট, সেটা হলো আমাদের যে আয় হয় এ আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
বাবলুর রবি এবং তার ছেলে লিটনকে কোনোভাবে সহায়তা করা যায় কিনা- জানতে চাইলে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, অফিসিয়ালি আসলে উনাদের সাহায্য করার কোনো সুযোগ নেই। তবে করোনাকালীন সময়ে আমরা আমাদের বেসরকারি সকল কর্মচারীদের সাহায্য করেছি। সেই সময়ে উনাদের ও সাহায্য করা হয়েছিলো। তবে তারা আমাদের নজরে রয়েছেন।