দিন দিন পা শুকিয়ে যাচ্ছে ইবির রাজের

মোস্তাকিম হোসেন রাজ
মোস্তাকিম হোসেন রাজ  © টিডিসি ফটো

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ভর্তি হয়েছেন অদম্য মোস্তাকিম হোসেন রাজ। লাঠির উপর ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। পড়াশুনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন রাজ। কিন্তু এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। নিজেই পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, রাজ র‌্যাডিকিউলোপ্যাথি রোগে আক্রান্ত। দিন দিন পা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। এ অবস্থায় ভারতে নিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপাচার করার জন্য পরামর্শ দিয়েছন চিকিৎসকরা। তবে টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না তিনি। দ্রুত চিকিৎসা না করতে পারলে পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে হবে তাকে। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অত্যন্ত ৮-১০ লাখ টাকা।

মোস্তাকিম হোসেন রাজ জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কুয়াদপুর গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১১৫ নম্বর কক্ষে থাকেন। রাজের বাবা অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করেন। যা আয় করেন তাতে সংসারই ভালোভাবে চলে না। কৃষক বাবা পড়াশুনার খরচ দিতে পারেননা। তাই রাজ সহপাঠীদের সহযোগিতা ও টিউশনির টাকা দিয়ে পড়াশুনার খরচ চালান।

রাজ বলেন, আমার ১২ বছর বয়স থেকে পায়ের সমস্যা দেখা দেয়। দুই পায়ের শক্তি কমে যাওয়ায় মাঝেমধ্যে লাঠি নিয়ে চলাফেরা করতাম। দশম শ্রেণিতে পড়াকালে চলাচলের শক্তি হারানোর উপক্রম হয়। এ সময় ডাক্তার কাছে গেলে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন রক্ত চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় তার শরীরের নিচের অংশের শিরাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এ সময় চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন: ইবির ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি সাক্ষাৎকার শুরু ১৭ অক্টোবর

তবে অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি রাজ। ওই সময় চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ খেয়ে কিছুদিন ভালো ছিলেন। পরে ২০১৮ সালের দিকে আবারও সমস্যা বাড়ে রাজের।

তিনি বলেন, বর্তমানে লাঠি ছাড়া চলতে পারি না। এখন লাঠির উপর ভর দিয়েই চলছে জীবন। ২০২০ সালে সাভারের পক্ষঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সি আরপি) যেয়ে নতুন করে পরীক্ষা করি। এ সময় চিকিৎসক এমআরই করাতে বললেও টাকার অভাবে করতে পারেনি। দ্রুত দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা না করালে অবস্থার অবনতি হবে বলে সতর্ক করে দেন। 

রাজ বলেন, চিকিৎসকরা কয়েক দফায় আমাকে অস্ত্রোপচার করতে বললেও টাকার অভাবে তা পারিনি। বর্তমানে দিনের পর দিন অবস্থা আরো ভয়াবহ হচ্ছে। পা চিকন হয়ে যাচ্ছে। পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলছি। এরপর হয়ত পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে হবে। আমি আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই। এজন্য সবার কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে ভারতের ভেলর শহরের সিএমসি হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট কনসালট্যান্ট সুভরনসু শেখরের সঙ্গে অনলাইনে চিকিৎসা নেন। তিনি অস্ত্রোপাচার করার জন্য ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে টাকার অভাবে যেতে পারেননি। এজন্য এক মাসের ওষুধ নিয়ে সেটাই খাচ্ছেন।

রাজের বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, রাজের বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করতে বলেছেন। পিতা হয়েও ছেলের জন্য টাকার অভাবে কিছু করতে পারছি না। নিজেকে খুব অসহায় লাগে। এতো টাকা আমার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। সবার কাছে সাহেয্যের আবেদন জানাই।

বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন বলেন, অসুস্থতার কথা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক হল থেকে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তার হলের সকল প্রকার খরচ মওকুফ করা হয়েছে।  আশা করি সকলের সহযোগিতায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে রাজ।

রাজকে মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সাহেয্য পাঠানো যাবে। তাকে সাহেয্য পাঠাতে নগদ ও রকেট (পার্সোনাল) ০১৭৪১-৩২০৮২৫, বিকাশ (পার্সোনাল) ০১৫১৭-১৯২০৪২ এবং অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট নং- ১১৯৩২।


সর্বশেষ সংবাদ