টিউশন ফি ও ক্লাস-পরীক্ষার জন্য চাপ নয়: ইউজিসি

করোনাকালীন নির্দেশনা জারি

করোনা সংকটের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়ে নির্দেশনা জারি করেছে ইউজিসি। নির্দেশনায় সেশন, টিউশন ফি আদায়ে মানবিক হওয়া এবং বিনামূল্যে অধ্যয়নের সুযোগ বৃদ্ধি করতে জোর দেয়া হয়। করোনাকালীন ক্লাসের লেকচারশিটসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে ই-মেইল ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। আর কোন শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহনে বাধ্য করতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

চলমান করোনা সঙ্কটে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৩ নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জু্রি কমিশন (ইউজিসি)। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সেমিস্টার সম্পন্ন করার বিকল্প দুটি প্রস্তাব, অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চালানো, নতুন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং ১৪টি সাধারণ নির্দেশনাসহ মোট ২৩ নির্দেশনা জারি করেছে ইউজিসি। করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যে আজ বৃহস্পাতিবার দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য এই নির্দেশনা জারি করা হলো।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুযোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশানায় বলা হয়, ক্লাস লেকচার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বা অনলাইন পোর্টালে নিয়মিতভাবে আপলোড করতে হবে। এছাড়া প্রয়ােজনে শিক্ষার্থীদের ই-মেইল বা সােশ্যাল মিডিয়া (হোয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ ইত্যাদি) মাধ্যমে ক্লাস লেকচারসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ অডিও-ভিডিও শিক্ষার্থীদের পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। শিক্ষকদেরকে নিবিড়ভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে যােগাযােগ রাখতে হবে এবং নিয়মিতভাবে কোর্স ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে আলােচনা করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের সেশন ও টিউশন ফি আদায়ে মানবিক হওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বলা হয়, করোনা সংকটের কারণে আর্থিক সংকটে পতিত শিক্ষার্থীদেব ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে সেশন, টিউশন, অন্যান্য ফি মওকুফ, হ্রাস ও ইনস্টলমেন্ট প্রদানের সুযোগ রাখতে হবে। এসময়ে ফি আদায়ে মানসিক চাপ প্রদান সমীচীন নয় উল্লেখ করে তা পরিহার করে শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে বলা হয়। এছাড়াও বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগও অবারিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

এছাড়া কোনো শিক্ষার্থী করোনা সংকটে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ায়, চরম আর্থিক অস্বচ্ছতা বা অন্য কোনাে যৌক্তিক কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে না পারলে/সক্ষম না হলে তাকে পরবর্তীতে অসমাপ্ত কোর্স সম্পন্ন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ দিতে হবে। আর কোনাে শিক্ষার্থী তার গ্রেড (করোনাকালীন প্রাপ্ত) উন্নয়ন করতে চাইলে পরবর্তী সেমিস্টারে তাকে বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে সেই সুযোগ দিতে হবে। উভয় ক্ষেত্রে কোনাে প্রকার অতিরিক্ত ফি নেয়া যাবে না।

তবে শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর যেকোন পরীক্ষা গ্রহণের অন্তত পাঁচ থেকে সাত দিন পূর্বে শিক্ষার্থীদের যথানিয়মে অবহিত করতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সক্ষমতা নেই সেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়ােজনে ইউজিসির বিডিরেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং এটুআইয়ের সহোযোগিতায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার যথেষ্ট সক্ষমতা সৃষ্টি করবে।

এছাড়া করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক/কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি পূর্বের ন্যায় নিয়মিভাবে পরিশােধ করতে নির্দেশ দেয় ইউজিসি।

এর আগে গত ৩০ এপ্রিল অনলাইনে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণে একটি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চলমান অচলাবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি নির্দেশনা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয় ইউজিসিকে। সে আলোকে একটি নির্দেশনা তৈরি করে আজ দুপুরে তা ই-মেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইউজিসির হিসাবে বর্তমানে দেশের ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি ও বাকি ৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।


সর্বশেষ সংবাদ