সমস্যায় জর্জরিত কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল
- নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ PM , আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ PM
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। ভবনের নিচতলায় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে চলছে প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণির কার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষে ফ্যান, লাইট ঠিক নেই, নেই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থাও। মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যে একটি স্কুল রয়েছে, সেটিও জানেন না অনেকেই।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনুমোদন থাকলেও ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ১৭তম সভার সুপারিশ এবং ৫০তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ‘কিন্ডার গার্টেন’ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ‘কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল’ স্থাপনের অনুমোদন দেয়। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত স্কুলটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫তলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবনের নিচতলায় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে চলছে প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণির কার্যক্রম। ছোট ছোট ১০-১১টি কক্ষ থাকলেও কোনো শ্রেণিকক্ষে ফ্যান, লাইট ঠিক নেই, নেই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থাও। একটি মাত্র ওয়াশরুম তার অবস্থাও নাজেহাল। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাই মিলে একমাত্র ওয়াশরুমটি ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যালয়ের সময় ৫ ঘণ্টা করার দাবি প্রাথমিকের শিক্ষকদের
মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যে একটি স্কুল রয়েছে, সেটিও জানেন না অনেকেই। এ ছাড়া সন্তানদের মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা অবস্থান করছেন ময়মনসিংহ শহরে, যার প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমেও।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. লুপা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই নাজুক। পরিবর্তন হওয়াটা এখন জরুরি। একটা বোর্ড পর্যন্ত ঠিক নেই। স্কুলের একটা টেবিল সেটাও নিচে ইট দিয়ে কোনো রকম চালিয়ে নেওয়ার মতো করে রাখা হয়েছে। স্কুলের পরিচালনার জন্য যে কমিটি আছে, গত উপাচার্যের সময় একটা মিটিংও হয়নি।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স) বলেন, ‘স্কুলের ব্যাপারে আমরা হতাশ। স্কুলের প্রয়োজনীয়তা যে সময়ে অনুভব করেছে, সে জায়গা থেকে উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানাই। উদ্যোগটি মহৎ ছিল, হয়তো প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা আমাদের কমিটির মিটিং শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের পুরোনো এবং নতুন দুটো ভবনেই ভিজিট করব। তারপর মিটিংয়ে বসব। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বরাবর শিক্ষক নিয়োগসহ যাবতীয় বিষয়ে আবেদন জানাব এবং স্কুলের চাহিদা অনুযায়ী পরামর্শ চাইবো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন যে পরামর্শ দিবে সে অনুযায়ী কাজ করবো।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি
বর্তমানে স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্কুল অ্যান্ড কলেজের যে কমিটি রয়েছে, ওই কমিটিতে দ্রুত একটি সভার আয়োজন করব। সভায় স্কুল অ্যান্ড কলেজ-সংক্রান্ত সব বিষয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বরাবর আবেদন জানাব।’
এ বিষয়ে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ কাজ চলমান। আগামী জুন মাসে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অর্গানোগামে স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের অনুমোদন রয়েছে। ইউজিসি ২০১৭ সালে ছোট পরিসরে শুরু করার অনুমোদন দেয় এখন বৃহত্তর পরিসরে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা একই সঙ্গে কলেজের অনুমোদন এবং স্কুলের এক্সটেনশনের জন্য চেষ্টা করছি।’