প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুতই চালু হবে ‘স্কুল ফিডিং প্রোগাম’

জাতীয় শিক্ষা সংলাপে অতিথিরা
জাতীয় শিক্ষা সংলাপে অতিথিরা  © টিডিসি ফটো

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেছেন, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দ্রুতই স্কুল ফিডিং প্রোগাম চালু করা হবে। বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীতে জাতীয় শিক্ষা সংলাপের আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় প্রাথমিক ‘শিক্ষার্থীদের শিখন স্তরের বর্তমান অবস্থা ও শিক্ষার গুণগত মান অর্জন’ নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশনসহ চারটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণা তথ্য প্রকাশ করা হয়।

শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, সরকার দেশের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে আন্তরিক এবং শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছে। করোনাসহ নানা সংকটে আমাদের শিখন ঘাটতি হয়েছে এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সকলের মতামত নিয়ে কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার ধরে রাখতে হবে এবং একই সাথে এখন আমাদের গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে।

জাতীয় শিক্ষা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা

সরকারের অন্যকোন সংস্থা না থাকায় শিক্ষকদের পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার শিক্ষক নিয়োগ নিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং একই সাথে শিক্ষকদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। দেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩৪ এবং মোট চার লাখের মতো শিক্ষক পাঠদানে যুক্ত রয়েছেন—জানান শাহ রেজওয়ান হায়াত।

অন্যদিকে গবেষণা ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গণিত বিষয় নিয়ে। গণিতের ভাগ অংশের অংক করতে পারেন না ৯৫ শতাংশের বেশি শিশু। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীরা ৯৫.৮৫ শতাংশ এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ৯৭.২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভাগ করতে পারেন না। জরিপে ৫-১৬ বছর বয়সী রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলের ১৫৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। জরিপে তাদের খুব সাধারণ কিছু বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। যা তারা বিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিখন কালে চর্চা করে থাকে।

গবেষণা ফলাফলে জানানো হয়েছে, গণিতের একক অংক শনাক্ত করতে পারেনি তাদের ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিয়োগ অংক করতে পেরেছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।

অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী এবং ৮২ দশমিক ৮৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী ইংরেজিতে গল্প পড়তে পারেন না। এছাড়া ইংরেজি বর্ণ পড়তে পারেনি ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছেলে এবং ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে, ইংরেজি শব্দ চিহ্নিত করতে পেরেছেন ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ ছেলে এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী—উঠে এসেছে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে।

এছাড়াও অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছেলে এবং ৫৩ দশমিক ১৪ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী বাংলায় গল্প পড়তে পারেননি জানিয়ে গবেষণায় আরও দেখানো হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলা বর্ণ পড়তে পারেননি ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ ছেলে এবং ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী। তবে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলায় শব্দ চিহ্নিত করতে পেরেছেন ২১ দশমিক ০৯ শতাংশ ছেলে এবং ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।

গবেষণার ভিত্তিতে প্রাপ্ত এ ফলাফল উপস্থাপনকালে সমস্যার সমাধানে চারটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জানানো হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো, বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন, শ্রেণির পড়া শ্রেণিতেই শেষ করা এবং শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করার প্রস্তাবও জানানো হয়েছে জাতীয় শিক্ষা সংলাপে।

অক্সফ্যাম আইবিআইএস এবং স্ট্রিট চাইল্ড-ইউকে এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ‘এডুকেশন আউট লাউড (ইওএল)’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নাগরিক সমাজের সংগঠন ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এ প্রকল্পের অন্যতম কর্মসূচি হিসাবে ‘নাগরিক কর্তৃক পরিচালিত মূল্যায়ন’ নামক একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। এই জরিপের মাধ্যমে করোনা পরবর্তী শিক্ষার্থীদের শিখন স্তরের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। এ দিন জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে আয়োজিত সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ সকলের সামনে তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। সংলাপে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। প্রকল্প ও জরিপ ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রকল্পের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক লিপি আমেনা ও প্রকল্প কর্মকর্তা তুলিকা সরকার। উপস্থাপনার ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস. এম. জুলফিকার আলী।

এছাড়াও শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (আইন শাখা) মো. আতাউর রহমান, স্ট্রিট চাইল্ড, ইউকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইমতিয়াজ হৃদয় বক্তব্য রাখেন। জাতীয় এই সংলাপের সমাপনী বক্তব্য এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নাসিফা আলী, উপ-নির্বাহী পরিচালক, ওয়েভ ফাউন্ডেশন। উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও সঞ্চালনা করেন কানিজ ফাতেমা, উপ-পরিচালক, ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এছাড়া নাগরিক সমাজ, যুব ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য অতিথিরা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ