যোগদানের আড়াই মাসেও বেতন পাননি প্রাথমিকের ৩৭ হাজার শিক্ষক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০১:০৬ AM , আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০১:০৬ AM
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের প্রায় আড়াই মাস পার হলেও এখনো কোনো ধরনের বেতন-ভাতা পাননি নিয়োগপ্রাপ্তরা। চলতি বছরে দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সার্কুলারে একেবারে প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু বেতন না, নিয়োগের পর থেকে এখন পর্যন্ত এই শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা ও ঈদ ভাতাও মেলেনি। ঈদের আগে এসব শিক্ষকরা বেতন-বোনাস পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
মো. রাকিব মিয়া গত জানুয়ারিতে রাজস্ব খাতে সহকারী শিক্ষক হসেবে যোগ দিয়েছেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ১৪৪ নং ওমর বেপারী কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু যোগদানের আড়াই মাস পার হলেও তিনি কোন ধরনের বেতন ভাতা পাননি।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পদসংখ্যা চূড়ান্ত হবে চলতি সপ্তাহে
চলতি বছরে শুরুতে দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সার্কুলারে একেবারে প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। বিপুলসংখ্যক এই শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদান করেছেন জানুয়ারিতে। নিয়োগ পাওয়া সাড়ে ৩৭ হাজার শিক্ষকের মধ্যে প্রায় সাত হাজার শিক্ষক সরাসরি রাজস্ব খাতভুক্ত। বাকি শিক্ষকরা চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) আওতায় সাব-কম্পোনেন্ট ‘প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা’র আওতায়।
এই শিক্ষকদের জানুয়ারি থেকে জুন মাসের বেতন ছাড় করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। মোট ছাড়কৃত অর্থের পরিমাণ দুইশ’ ৫৯ কোটি ৫৭ লাখ ১১ হাজার দুইশ’ ৫০ টাকা। চলতি বছরের ২২ মার্চ জারি করা হয় এই বিজ্ঞপ্তি। ছাড়কৃত অর্থ ৯টি খাতে ব্যবহার করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়।
এরমধ্যে মূল বেতন প্রায় ১৪০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, বাড়ি ভাড়া প্রায় ৬৩ কোটি ৫১ লাখ, চিকিৎসা ভাতা প্রায় ১৯ কোটি ১৯ লাখ, উৎসব ভাতা প্রায় ২৬ কোটি ৫৬ লাখ, নববর্ষ ভাতা প্রায় পাঁচ কোটি ৩১ লাখ, টিফিন ভাতা প্রায় দুই কোটি ৫৫ লাখ, শিক্ষা ভাতা প্রায় ৭৩ লাখ, যাতায়াত ভাতা প্রায় সাত লাখ ৬৬ হাজার ও হাওর/দ্বীপ/চর ভাতা ৮৫ লাখ টাকা।
নতুন করে যোগ দেয়া শিক্ষকরা বেতন ভাতা না পেয়ে অসহায় দিন যাপন করছেন। আকাশ মজুমদার নামে এক শিক্ষক বলেন, চাকরিতে যোগ দিলাম আড়াই মাস। এখন পর্যন্ত নিজের আয়ের টাকা দেখতে কেমন তাই জানলাম না। এখন ঈদের সময়েও যদি টাকাটা না পাই খুবই খারাপ হবে।
আরও পড়ুন: অপারেটররা হবেন প্রশিক্ষক, আন্দোলনের হুশিয়ারি ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের
জেলা ও উপজেলা একাধিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তারা বলছেন, অর্থ ছাড় হয়েছে। কিন্তু কবে শিক্ষকরা বেতন পাবেন তারা জানেন না। নতুন যোগদান করা শিক্ষকরাও একাধিকবার ফোন করে তাদের বেতনের তথ্য জানতে চাচ্ছেন কিন্তু তারা কোনো নির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারছে না।
জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডিপিই ও অর্থ মন্ত্রণালয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আগামী রোববার। ৯ এপ্রিলের এই বৈঠকে ঈদের আগে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে ডিপিইর এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের আগে শিক্ষকদের বেতন প্রদানের সম্ভাবনা কম। তবে ডিপিই চেষ্টা করছে ঈদের আগেই এই ভাতা প্রদানের। তিনি বলেন, কবে ঈদের আগে বেতন ভাতা না পেলেও সমস্যা নেই। এই অর্থ ভবিষ্যতে তারা পেয়ে যাবেন।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নার্গিস আক্তার জানান, তার উপজেলায় রাজস্বখাতের শিক্ষকদের বেতন বোনাস দেয়া হলেও প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন দেয়া যায়নি। আইবাস প্লাস প্লাসে বরাদ্দের টাকা আসলেও কোড সংক্রান্ত জটিলতায় প্রাক্ প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন দেয়া যায়নি।