সংস্কারের মতামত এখনো জানায়নি বিএনপি জামায়াত এনসিপি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৫ AM , আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ PM

পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের বিষয়ে এখনো মতামত জানায়নি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ২৩টি দল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত জানিয়েছে ১৫টি দল। বিএনপি আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত চেয়েছে। জামায়াত এবং এনসিপি আরও কয়েক দিন সময় চেয়েছে।
বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, কমিশনের সুপারিশ নয়, দলীয় ৩১ দফার আলোকেই মতামত জানানো হবে। নির্বাচন দেরিতে হতে পারে, এমন শঙ্কায় গণপরিষদ, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও প্রাদেশিক ব্যবস্থায় রাজি নয় দলটি। তবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো চায়, শুধু নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করবে; বাকিটুকু করবে নির্বাচিত সরকার।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চায়। গণপরিষদে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তোলা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দলীয় মতামতে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ এবং আগে গণপরিষদ নির্বাচনের মতামত থাকবে।
বড় দল বিএনপি মতামত না জানালেও বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দিন এলডিপির সঙ্গে হবে আলোচনা।
কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানান, আগে ১৩টি দল মতামত জানিয়েছিল। মঙ্গলবার জেএসডি ও গণফ্রন্ট জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। বিএনপি ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছিল; কমিশন ১৮ মার্চের মধ্যে দিতে অনুরোধ করে। তবে দলগুলো মৌখিকভাবে আরও কিছুদিন সময় চেয়েছে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সময় চাওয়ার বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে। সরকারপ্রধানের কাছ থেকে জবাব এসেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই যেহেতু সংস্কার করা হবে, তাই তাদের জন্য অপেক্ষা করা হবে। কিন্তু কাজ এগিয়ে রাখতে যেসব দল মতামত জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে অসুবিধা নেই।
সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুদক এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মত এক করার লক্ষ্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ২২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ১৫ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের সুপারিশের বিষয়ে আলাদা মতামত জানাবে। কতটুকু সংস্কার, কীভাবে হবে, এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হবে দলগুলোর মতামতে। প্রথমে দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে এবং পরে একসঙ্গে বৈঠক হবে। যেসব বিষয়ে একমত হবে, তা বাস্তবায়নে হবে জুলাই সনদ। এর মাধ্যমে দলগুলো অঙ্গীকার করবে, নির্বাচনে যে দলই জয়ী হোক; জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কার হবে।
বাকি পাঁচ কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হলেও পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাহী ক্ষমতায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার করা হবে। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় পুলিশকে। প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত হতে পুলিশ চায় স্বাধীন কমিশন।
রাজনৈতিক দলগুলোর পাঠানো ‘স্প্রেডশিটে’ প্রতিটি সুপারিশের সঙ্গে ‘একমত’, ‘আংশিক একমত’ ও ‘ভিন্নমত’– এ তিনটি অপশন রয়েছে। ভিন্নমত থাকলে মন্তব্যের কলামে বিস্তারিত জানানোর সুযোগ রয়েছে।
সংস্কার বাস্তবায়নে ছয়টি বিকল্প দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো, ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যে কোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মত দিতে বলা হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার সংসদে চায় বিএনপি
বিএনপি তাদের ঘোষিত ৩১ দফার আলোকে ‘স্প্রেডশিট’ও পূরণ করবে। যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর মতো যেন অভিন্ন হয়, তা নিশ্চিতে কথা বলছে বিএনপি। দলটির সূত্র জানিয়েছে, আলোচনার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক তিনটি দল ঐকমত্য কমিশনে মতামত জানিয়েছে। আগামী সপ্তাহে বিএনপিসহ বাকি মিত্ররা মতামত জানাবে। এর মাধ্যমে সংস্কার প্রশ্নে অভিন্ন মতামত দিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দিতে চায় তারা। ‘রাষ্ট্র সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ’– এ অবস্থানের ভিত্তিতে মতামত তৈরি করছে তারা।
বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, সংবিধান না থাকলে গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে শপথ নিয়েছে। নতুন সংবিধানের যেহেতু দরকার নেই, তাই গণপরিষদের প্রস্তাব অপ্রয়োজনীয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার প্রস্তাবে আপত্তি জানাবে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ টানা দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধের প্রস্তাব করবে দলটি। তবে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের প্রস্তাবে বিএনপি রাজি নয়। সংসদের মেয়াদ শেষে নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করবে– এ প্রস্তাবেও রাজি নয় বিএনপি। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ৯০ দিনে সীমাবদ্ধের প্রস্তাবে ইতিবাচক দলটি। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ, দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্টীকরণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নেও একমত।
জামায়াত, এনসিপির যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পদ দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত জামায়াত। দ্বিকক্ষের বদলে বিদ্যমান পদ্ধতির সংসদ চায় দলটি। তবে জামায়াতের প্রস্তাব হবে, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিল করে আরও ১০ বছর বহাল রাখার পক্ষে জামায়াত।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, গণপরিষদে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিতেই রয়েছে। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, দলীয় নেতারা মতামত নিয়ে কাজ করছেন। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।
মতামত জমা দেওয়া বাকি ১৩টি দল হলো– এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), আমজনতার দল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি এবং নাগরিক ঐক্য।