ঢাবি উপাচার্য-প্রক্টরের ওপর ছাত্রদল-শিবিরের হামলার খবরটি গুজব
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৬ AM , আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৩ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের হামলায় উপাচার্য ও প্রক্টর আহত হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে, তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। এসব পোস্টে শতাধিক আহত হওয়ার যে দাবি করা হয়েছে, তা গুজব। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিগত দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য-প্রক্টরকে ক্রিয়াশীল কোনো ছাত্রসংগঠন হামলা করেনি কিংবা আহত করেনি। খোঁজ নিয়ে দেখুন, আজকে রাতে কি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লাল স্বাধীনতা।’ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন রানা পোস্ট করেন, ‘ডাকসু বিতর্কে ছাত্রদল-শিবিরের হামলায় ভিসি-প্রক্টরসহ শতাধিক আহত!’
আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ এ আরাফাত লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের হামলায় ভিসি প্রক্টরসহ অনেকেই আহত! খবরটা কি সত্য?’ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সোহান খান ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ডাকসু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। প্রক্টর শিক্ষকসহ আহত শতাধিক শুনতে পাচ্ছি!’ একই ধরনের পোস্ট দেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাহবুব খান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি। কোনও গণমাধ্যমেও এমন তথ্য আসেনি। বিক্ষোভ ও তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটলেও কেউ আহত হয়নি। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এসব তথ্য গুজব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খবরে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সামনে সিন্ডিকেট সভায় আওয়ামীপন্থী তিন সদস্যের নিমন্ত্রণ ও সিন্ডিকেটে ডাকসু নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ খানের সঙ্গে ছাত্রদলের হট্টগোলের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এমন ঘটনার অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন একদল শিক্ষার্থী।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। তবে হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে শুরু হয়ে সূর্যসেন হল ও মুহসিন হল হয়ে ভিসি চত্বরে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগের আমলে পাতানো নির্বাচনের পরেও শিক্ষার্থীরা গণরুম-গেস্টরুম থেকে সাময়িক স্বস্তি পেয়েছিল। শিক্ষার্থীরা সাময়িকভাবে হলেও গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছিল। আমরা যখন বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি, তখন অন্য একদল আমাদেরকে সেই গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে আবার সেই গণরুম-গেস্ট রুম ফিরিয়ে আনার জন্য।
সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, উপাচার্য শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। তাকে অপমান করার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের অপমান করেছে। বর্তমান প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে কথা বলার পর থেকেই ছাত্রদল এবং অন্যান্য যারা ষড়যন্ত্রকারী আছে, তারা কথা বলা শুরু করেছে। তারা দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান।
পরে ছাত্রদল বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ডাকসু ইস্যু নিয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালানো হয়েছে। মধ্যরাতে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ডাকসু নির্বাচনে বাধা দেওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ানোর অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এরপরই ছাত্রদল বিবৃতি দিয়ে এটিকে অপপ্রচার বলে দাবি করে।
আরো পড়ুন: ডাকসু নিয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে, ঢাবিতে বিক্ষোভের পর বিবৃতি
ঢাবি ছাত্রদল আলোচনার মাধ্যমে ডাকসুর উপযুক্ত সংস্কার ও নিয়মিত নির্বাচন চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করছে। এমন দাবি করে সংগঠনটি বলছে, এরপরও ছাত্রদল ডাকসু চায় না বলে বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও মনগড়া শিরোনামে সংবাদ প্রচার করা নিতান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হীন একটি চক্রান্তের অংশ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
ছাত্রদল বা শিবিরের নেতা-কর্মীরা হামলা বা অন্য কোনো ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা জানতে চাইলে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এগুলো ফালতু কথা, আজগুবি কথা। ওরা (আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ) ১৫ বছর এমন করেছে, এখনও করছে। এটা অবাস্তব।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নানান দাবি-দাওয়া তো থাকেই। গতকাল ওরা (ছাত্রদল) ভেবেছিল যে, সিন্ডিকেটে হয়তো ডাকসু নিয়ে এজেন্ডা আছে। বলছিল যে, সিন্ডিকেটে যেন ডাকসু নিয়ে আলোচনা না হয়। কিন্তু আমরা ওদেরকে বোঝাচ্ছিলাম যে, সিন্ডিকেটে ডাকসু নিয়ে কোনো আলোচনার এজেন্ডা নেই। মূলত ঘটনা এটাই।’