কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৪তম জন্মদিন আজ

হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ  © সংগৃহীত

আজ রবিবার (১৩ নভেম্বর) নন্দিত কথাসাহিত্যিক, কথার জাদুকর, জ্যোতির্ময় লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৭৪তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দৌলতপুর গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

জন্মদিন উপলক্ষে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর লেখকের ধানমন্ডির ‘দখিন হাওয়া’ ফ্ল্যাটে কেক কাটা হয়েছে। দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে কেক কেটেছেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। অন্যদিকে, রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহাশ পল্লীতে মোমবাতি জ্বালানো হয়। আজ রবিবার ভোরে দুই ছেলেকে নিয়ে হুমায়ূনের স্মৃতিধন্য গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের নূহাশ পল্লীতে যাবেন শাওন। সেখানে লেখকের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবেন এবং কেকও কাটবেন।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। সাহিত্যাঙ্গনের এই কিংবদন্তির বাবা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। খ্যাতিমান কম্পিউটারবিজ্ঞানী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

হুমায়ূন আহমেদ তার কীর্তি রেখেছেন শিল্প-সাহিত্যর বেশিরভাগ শাখাতেই। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। একাধারে নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি ও গীতিকার ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ।

ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্রসহ সব শাখাতেই অসম্ভব সফল এই নন্দিত লেখক। বাংলা সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও গানে পালাবদলের এ কারিগর ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেন। এরপর লিখেছেন শতাধিক গ্রন্থ। টেলিভিশন নাটকেও চমক দেখিয়েছেন তিনি। 

১৯৯০-এর শুরুর দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তার পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’ দর্শকের কাছে দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৩ সালে নির্মাণ করেন ‘চন্দ্রকথা’।

আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক মাসে ৫টি সাইকেল চুরি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমাটি। এটি ২০০৬ সালে ‘সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এ ছাড়াও এটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। এরপর ২০০৬ সালে মুক্তি পায় ‘৯ নম্বর বিপদ সংকেত’। ২০০৮ সালে ‘আমার আছে জল’ চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। তার পরিচালনার সর্বশেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ মুক্তি পায় ২০১২ সালে।

নিজের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

তবে হুমায়ূন আহমেদ সর্বজন প্রিয় হয়ে আছেন হিমু ও মিসির আলী চরিত্রের স্রষ্টা হিসেবে। আজ তার জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে ‘হুমায়ূন মেলা’ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এবারও নানা আয়োজনে উদযাপন হবে দিনটি। জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লীর উদ্যোগে সকালে কেক কাটা ও রাতে এক হাজার চুয়াত্তরটি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদ আমাদের ছেড়ে চলে যান। মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর সেখানেই তিনি মারা যান। ওই বছরের ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ