নববর্ষের আনন্দ শুভাযাত্রায় দেখা গেল পালকি

পালকি
পালকি  © টিডিসি ফটো

চৈত্রের শেষ বিকেলে যখন গোধূলির আলো ধীরে ধীরে মাটি ছুঁয়ে যায়, তখন এক নতুন ভোরের অপেক্ষায় বুক বাঁধে বাংলার হৃদয়। বৈশাখ আসে ঢাকের তালে,আলপনার রেখায়, হাসিমুখে পরম আশায়। আর সেই উৎসবের ভিড়ে মানুষের উচ্ছ্বাসের মাঝেও নিঃশব্দে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে এক পুরোনো প্রতীক—পালকি।

আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এক আনন্দ শোভাযাত্রা বের হলে আবহমান বাংলার এই প্রতিকী চিত্র দেখা যায়।

পালকি শুধু এক সময়ের বাহন নয়, এটি এক আবেগ, এক স্মৃতি ও এক অনুভব। এটি সেই দিনগুলোর গল্প বলে যখন বউয়ের প্রথম যাত্রা হত এই ছায়াঘেরা বাহনে। এটি দিয়ে কখনো কখনো রাজপথে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলত কোনো জমিদারের শোভাযাত্রা। পালকির দরজার ফাঁক দিয়ে জগতকে দেখা হত আড়াল থেকে। কিন্তু সেই আড়ালে ছিল এক মায়াবী দৃষ্টি, এক নরম হৃদয়।

নববর্ষে যখন পালকি দেখা যায়—মাটির পথ নয়, শোভাযাত্রার রঙিন রাস্তায়—তখন তা যেন সময়ের রেখা ভেদ করে আসে অতীতের কোলে বসে থাকা সেই সোনালি সকাল। ফুলে ফুলে সাজানো, রঙে রাঙানো সেই প্রতীকটি বলে—‘আমি তোমার ইতিহাস, আমি তোমার সংস্কৃতি, আমি সেই মায়া যা হারিয়ে যায়নি, শুধু একটু নীরব হয়ে গেছি।’

এখনও যখন ছোট্ট শিশু মায়ের হাত ধরে শোভাযাত্রায় পালকি দেখে, তখন তার চোখে জ্বলে ওঠে বিস্ময়ের আলো।হয়তো সে জানে না ইতিহাস, বোঝে না ঐতিহ্য, কিন্তু অনুভব করে—এতে কিছু আছে।যা মন ছুঁয়ে যায়।এভাবেই পালকি আজও হয়ে থাকে আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি, অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধন।

বাংলা নববর্ষে পালকি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আনন্দ মানে শুধু নাচ-গান নয়, আনন্দ মানে স্মৃতি, শিকড় আর সেইসব গল্প যেগুলো শুনে বড় হয় একেকটা জাতি।


সর্বশেষ সংবাদ