ফাঁসির আদেশের পর কেন কলমের নিব ভেঙে ফেলেন বিচারক

রায় লিখছেন বিচারক
রায় লিখছেন বিচারক  © ফাইল ছবি

সিনেমায়, সিরিয়ালে অথবা বাস্তবে প্রায় আমরা দেখি, মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর বিচারক তাঁর কলমের নিব ভেঙে ফেলছেন। বাস্তব জীবনে তো মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া এমন দৃশ্য দেখা হয়ে ওঠে না অনেকেরই। তবে বাস্তবেও কিন্তু ঠিক ওই একই কাজ করেন সকল বিচারপতি। মূলত এ নিব ভেঙে ফেলাটা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা একটা কাস্টমস বা রেওয়াজ, যেটি মূলত একটি প্রতীকী বিষয়।

আমাদের ধারণা হতে পারে এটি হয়তো কোনো আইনে আছে বা কোনো ড্রামাটিক এক্সপ্রেশন। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে ফাঁসির সাজা ঘোষণার পর বিচারকরা কলমের নিব ভেঙে ফেলেন কেন? এর পিছনে কারণটা কী? কারণটা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। কারণ একটি নয়, একাধিক। এ বিষয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও দার্শনিকরা নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জেনে নেয়া যাক সেই ব্যাখ্যাগুলো।

১। প্রথম ব্যাখ্যা হলো ওই একবার কোন মানুষের মৃত্যুদণ্ডের সাজা লিখে ফেলার পর, বিচারক যেন ভবিষ্যতে আর কারো জীবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন সে জন্য কলমের নিব ভেঙে ফেলা হয়। ওই কলমটিকে (মূলত নিবটি যা দিয়ে লেখা হয়) 'অশুচি' বলে মনে করা হয়। আসলে কারও জীবন কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে অশুভ ভাবা হয়। কোনও একটি কলম দিয়ে একবার মৃত্যুদণ্ডের সাজা লিখে ফেলার পর বিচারকরা ওই কলম দিয়ে ভবিষ্যতে আর কোনও বিচারের কাজ করতে চান না। 

আরও পড়ুন: ঢাবির প্রশ্নে সারাহ ইসলাম।

২। দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি বেশ চমৎকার। বলা হয়ে থাকে, বিচারককেও তাঁর রায়ের বিষণ্ণতা ছুঁয়ে যায়। এতে তিনিও ব্যথিত হন। আবার এরকমও মনে করা হয় যে, বিচারক 'অপরাধ বোধ' থেকে পেনের নিব ভেঙে ফেলেন। কারণ, প্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা শুধু সৃষ্টিকর্তার আছে বলে মনে করা হয়। তাই বিচারক পেনের নিব ভাঙার মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দেন যে তিনি শুধু তাঁর পেশাদারি দায়বদ্ধতাটুকুই সারলেন।

৩। তৃতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয়, মন খারাপের অনুভূতি থেকে বা অপরাধবোধ হতে বিচারক তাঁর প্রদত্ত দণ্ড ফিরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন। কিন্তু তিনি যেন তা না করতে পারেন, তার জন্যই কলমের এ নিব ভেঙে ফেলা। একবার ফাঁসির সাজা ঘোষিত হলে সেই রায়কে আর চ্যালেঞ্জ করা যায় না। তার প্রতীক হিসাবে ওই রায় লেখা হয়েছে যে কলম (পেনের নিব) দিয়ে তাকে ভেঙে ফেলে ওই রায়কেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। একমাত্র উচ্চতর আদালত (নিম্নতর আদালত যদি রায় দিয়ে থাকে) কেবল সেই রায়কে পুনর্বিচার করতে পারে।

৪। চতুর্থ বা সর্বশেষ ব্যাখ্যায় বলা হয়, যেকোনো মৃত্যুই দুঃখ দেয়, কম বা বেশি, যদিও কখনো কখনো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের মতো সর্বোচ্চ শাস্তিরও প্রয়োজন হয়। তার পরও কলমের নিব ভেঙে ফেলার মাধ্যমে বোঝানো হয়, মৃত্যু একটি দুঃখজনক বিষয়।


সর্বশেষ সংবাদ