৫৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ পাঁচটিকে দিলে মানসম্মত হতো

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

দেশের ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার ৬৯০ কোটি ৪ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে ইউজিসি। বিদায়ী অর্থবছরে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৫৩টি। আর সেই ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১২ হাজার ১৮৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এ বছর আগের বছর থেকে ২টি বিশ্ববিদ্যালয় বাড়া সত্বেও বরাদ্দ কমেছে। শুধু টাকার অংকে কমেনি। 

গতবার ১ ডলারের মূল্য ছিল ৮৩ টাকা আর, এবার সেটা ১২০ টাকা। এর অর্থ গতবারের বরাদ্দ দিয়ে প্রায় ১৪৭ কোটি ডলারের কাছাকাছি কিনতে পারতাম। আর এবারের ১১ হাজার ৬৯০ কোটি ৪ লাখ টাকা দিয়ে প্রায় ৯৮ কোটি ডলারের মতো কিনতে পারব। তাহলে বুঝুন, আমাদের ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ কত কমেছে। এত কমা সত্বেও ইউজিসির চেয়ারম্যান, সদস্য কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বা শিক্ষক নেতাদের কোন চেতবেত দেখি না। 

বরং এ বরাদ্দ নিয়েই এরা খুশিতে গদগদ। এজন্যই সরকার এমন ব্যক্তিদের ইউজিসির চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, প্রো-ভিসি বানায়। তাদের কাজই হলো সরকারের সকল কাজের গুনগান গাওয়া এবং জনগণ কিংবা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে কোনো দাবি-দাওয়া পেশ না করা। শুধু তাই না, কেউ করতে চাইলে তাকে থামিয়ে দেওয়াও তাদের কাজ।

৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হলো, সে বরাদ্দ যদি পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়েও দিত সেটাও কম হতো। তবুও এ ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ পাঁচটি বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে দিলে এগুলোকে মানসম্মত করা যেত। আমাদের সরকারেরা আসলে মানসম্মত লেখাপড়া, মানসম্মত শিক্ষক, মানসম্মত অবকাঠামো ইত্যাদি বোঝে না। তারা শুধু সংখ্যা বুঝে। এজন্যই টাকার অংকে এইবার যে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, এটাই এরা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। 

আরো পড়ুন: লাখো ছেলে-মেয়ের ছাত্র পরিচয়ে অলস সময় পার করা ছাড়া কি লাভ হচ্ছে?

অথচ শিক্ষায় বরাদ্দ মাপার প্রকৃত ইয়ার্ড-স্টিক হলো জিডিপির শতাংশ। জিডিপির শতাংশে গত চার বছর যাবৎ শিক্ষায় বরাদ্দ ক্রমাগতভাবে কমছে। কমতে কমতে এবার জিডিপির ১.৬৯ শতাংশে এসে ঠেকেছে। পৃথিবীতে শিক্ষায় সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয় যেই দেশগুলো সেগুলো হলো সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, মৌরিতানিয়া, হাইতি, লাওস। বরাদ্দের দিক থেকে আমার বাংলাদেশ এখন এদের কাতারে।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)


সর্বশেষ সংবাদ