বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ৯৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকা

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট  © টিডিসি ফটো

২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষায় ৯৪ হাজার ৭০১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট উপস্থাপনকালে এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাব করেছেন তিনি। যা ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ছিলো ৪২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরে এই বাজেট ছিলো ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। 

এছাড়াও ২০২৪- ২৫ অর্থ বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরে এই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিলো ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা
বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির হার ৭১.৮২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিজ্ঞান ভিত্তিক যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে। এজন্যে প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ সৃজনের লক্ষ্যে দেশের ১৬০টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে।

মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান সরঞ্জামাদি এবং ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় পরিচালিত সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির মাধ্যমে গত ৩ বছরে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯ জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত স্নাতক পর্যায়ের মোট ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬২ জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, স্নাতক পর্যায়ে যে সকল শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশ নারী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা
বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিগত কয়েক বছরে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সালে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ১৮.১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৩টি নতুন মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে এবং ৪৯৫টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এর জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা।

প্রাথমিক শিক্ষা
বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান ও অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত বছরের তুলনায় আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪ হাজার ৯৭ কোটি বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৮ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছর এ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে আরও বলেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। সে হিসেবে আসন্ন অর্থবছরে ৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বেড়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৭৯ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে এবং সহকারী শিক্ষকের ২৬ হাজার ৩৬৬টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। শিক্ষার প্রধান উপকরণ বই যাতে শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতেই পায় সে লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর প্রাথমিক স্তরের শিশুদের ১ জানুয়ারি ‘বই উৎসব’ এর মাধ্যমে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে শিশুদের ঝরে পড়া রোধ করতে শতভাগ শিক্ষার্থীকে ইএফটি’র মাধ্যমে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের সুচিন্তিত নীতির ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় নিট ভর্তির হার ২০০৯ সালের ৯০.৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ৯৭.৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য হুইল চেয়ার, ক্রাচ, শ্রবণযন্ত্র ইত্যাদি ক্রয় ও বিতরণ করা হচ্ছে এবং তাদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের সুবিধার্থে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে র‍্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ