বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি না করে কোনও দেশ উন্নত হতে পারেনি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

আগে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি না করে পৃথিবীর কোনও দেশ উন্নত হতে পারেনি। উদাহরণ নেই। সম্ভব না। আমেরিকা সুপার পাওয়ার, কারণ সেখানে হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন, কর্নেল ইত্যাদি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বিশ্বে ইংল্যান্ড এখনো ক্ষমতাবান, কারণ কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড, ইম্পেরিয়াল, ইউসিএল’র মত বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সিঙ্গাপুর এত ছোট দেশ হয়েও এত উন্নত, কারণ সেখানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের মত বিশ্ববিদ্যালয় আছে।

চীন তরতর করে বিশ্বে সুপার পাওয়ার হওয়ার পথে, কারণ তাদের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় তরতর করে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে প্রথম দিকে চলে আসছে। এগুলোর কোনটিতে কি ছাত্র রাজনীতি আছে? অভিবাবক কিংবা বুয়েটের ৯৮ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চায় না, তবুও ছাত্র রাজনীতি তাদের ক্যাম্পাসে চাপিয়ে দিতে দিচ্ছে। এটাতো গণতন্ত্রের সংজ্ঞার মধ্যেও পড়ে না। 

বাংলাদেশে ক্ষমতাকেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতির মতো আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও যদি ডেমোক্রাট ও রিপাবলিকান দলের লেজুড়বৃত্তিক ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি চালু হয়, পৃথিবীর মেধাবী ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য আমেরিকা কি আর এক নম্বর ডেস্টিনেশন থাকবে? 

কেমব্রিজ কিংবা অক্সফোর্ডে যদি লেবার কিংবা কনসারভেটিভ দলের লেজুড়বৃত্তিক ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি চালু হয়, পৃথিবীর মেধাবী ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য ইংল্যান্ড কি আর এক নম্বর ডেস্টিনেশন থাকবে? চীনের Tsinghua কিংবা Peking বিশ্ববিদ্যালয়ে, সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরে, ভারতের ২৩টি IIT কিংবা IISc যদি ছাত্র রাজনীতি চলে, সেগুলোতে কি আর লেখাপড়া ও গবেষণার মান বলতে কিছু থাকবে?

আরো পড়ুন: মৌখিক পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া হতে পারে না

যা বিশ্বের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই বা থাকলে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না, তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করতে আমরা এত মরিয়া কেন? আমরা আমাদের ছাত্র রাজনীতির আমলনামা কি জানি না? আমাদের ছাত্রনেতা কি করে, সেই আমলনামা জানতে শুধু গত ৩০ বছরের পত্রিকা ঘাটেন না? 

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, এটাই হলো আসল ছাত্র রাজনীতি। ধর্মান্ধ রাজনীতি ঠেকানোর জন্যও তাদের এ একই রকম আন্দোলন করা উচিত।

আমি অনেক শিক্ষিত মানুষ চিনি, যারা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চান, কারণ তারা নিজেরাও ছাত্র রাজনীতি করেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো- তারা কিন্তু তাদের সন্তানরা ছাত্র রাজনীতি করুক মিটিং মিছিলে যাক, আন্দোলন করুক  তা একদম চায় না। এরকম মানুষ বিশ্বে খুব কম আছে, যারা অন্যের সন্তানের জন্য একরকম চায় আর নিজের সন্তানের জন্য আরেক রকম। সত্যিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই বাংলাদেশ এবং তার মানুষ।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)


সর্বশেষ সংবাদ