উন্নয়নে সব পেশার জায়গা হলেও সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকগণ তিমিরেই

সালাউদ্দিন
সালাউদ্দিন  © টিডিসি ফটো

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দুইটি শাখা। যথা: কলেজে শাখা এবং বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখা। কলেজ শাসিত মাউশির কলেজ শাখার আন্তঃক্যাডার বৈষম্য ছাড়া তেমন একটা বঞ্চনা না থাকলেও বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তাদের ইতিহাস খুবই শোষণ-বঞ্চনার। এ যেন স্বাধীন দেশেই আরেক উপনিবেশবাদের গল্প। মাধ্যমিক যেন কলেজ শাখার কলোনীতে পরিণত হয়েছে। শোষণ-বঞ্চনার বলছি এজন্য যে এখানে কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তাগণ অপ্রাপ্তির নানা ধরনের হতাশায় নিমজ্জিত। 

ব্যানবেইজ পরিসংখ্যান ২০২২ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ২০ হাজার ৩৫৩টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং ৪ হাজার ৭৪৭টি কলেজ রয়েছে। তবে কলেজে শাখার সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সংখ্যায় কম হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (শিক্ষা ভবনের) ৯৫ ভাগের বেশি পদে কলেজ শিক্ষকগণ (শিক্ষা ক্যাডার) বসে আছেন! সংগত কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৮১% (মাউশি’র অধীনে মোট প্রতিষ্ঠানের) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের গতি মন্থর হয়ে রয়েছে।

তাছাড়া মাউশিতে কর্মরত প্রায় সকল কর্মকর্তা (প্রকৃত অর্থে মাত্র ৩টি পদ ব্যতীত) কলেজ শিক্ষক (সা. শিক্ষা ক্যাডার) হওয়ায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকগণ অধিদপ্তরে তাঁদের দাপ্তরিক কাজের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সুবিধা পান না। উলটো অনেক ক্ষেত্রেই নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হন। এ শাখায় কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তাদের চাকুরি শুরু হয় দশম গ্রেডে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এবং এ পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রবেশ পদের প্রাথমিক যোগ্যতার সমান। অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষায় ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকার কথা রয়েছে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের চেয়েও অতিরিক্ত যোগ্যতা নিয়ে প্রবেশ করলেও শোষণ-বঞ্চনার পরিমাণও কিন্তু অতিরিক্তই রয়েছে। নিম্নে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি পাওয়ার  বিদ্যমান সোপান এবং না পাওয়ার কারণ প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে সৃষ্ট বৈষম্য ও পরিসংখ্যানগত বৈষম্য শিরোনামে তুলে ধরা হলো।

বিদ্যমান সোপানে উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে সৃষ্ট বৈষম্য: 

১. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়/উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে সহকারী শিক্ষক বা শিক্ষিকা/সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নন ক্যাডার ১০ম গ্রেডভুক্ত পদটি বিষয়ভিত্তিক চার বছর মেয়াদি স্নাতক বা তিন বছর মেয়াদি স্নাতক পাসসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকার সাপেক্ষে নিয়োগযোগ্য। এছাড়াও শিক্ষায় এক বছর মেয়াদি ব্যাচেলর ডিগ্রি (বি এড) থাকা বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োজন। সাত বছর চাকরি করার পরে পরবর্তী ধাপে পদোন্নতিযোগ্য। তবে সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদটি বর্তমানে মাউশি-তে কর্মরত কর্মচারীদের থেকে পদোন্নতি দিয়ে পূরণ করা হয়।

২. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়/উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক/উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নন ক্যাডার ৯ম গ্রেডভুক্ত পদটি ২০১৫ সালে সৃষ্ট, তবে ২০০৩ সালের ১লা ডিসেম্বর পদটি ক্যাডার পদ হিসেবে সৃষ্টির উদ্যোগ ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। সহকারী শিক্ষক বা শিক্ষিকা/ সমমান পদোন্নতি দিয়ে এ পদ পূরণ করা হয়। স্বপ্ন দেখানো হয় পরবর্তী ধাপে পদোন্নতি হবে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০০৯ সালের ১৫ই অক্টোবরে জারীকৃত স্মারক নং সম/সওবা/প-২২/০৩ (সি.স্কে.গ্রে.)/(অংশ-১৮)/১-২৫৮-এর ক্রমিক ‘গ’ এ পরিপত্র অনুযায়ী সম গ্রেডে পদোন্নতি বিধিসম্মত নয়। তাই সিনিয়র শিক্ষক/সমমান (নন ক্যাডার ৯ম গ্রেড) এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক/সমমান (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ৯ম গ্রেড) দুইটি পদই নবম গ্রেডে হবার কারণে পরবর্তী ধাপে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এবং এই বিধিমালা সংশোধনেরও কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে মাধ্যমিকের বন্ধ্যাকরণ প্রক্রিয়া কার্যত এখান থেকেই শুরু হয়েছে।

৩. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়/জেলা শিক্ষা অফিসার কার্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকা/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ৯ম গ্রেডভুক্ত একটি পদ। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন 'বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪ প্রণয়নের পূর্বে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত নবম গ্রেডের সহকারী প্রধান শিক্ষক/সহকারী প্রধান শিক্ষিকা/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদে নিয়োগের জন্য এই তিনটি পদের নাম বিসিএস পরীক্ষা বিধিমালায় সংযোজনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে পত্র মারফত জানতে চায়। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের সদুত্তর না দেওয়ায় ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪’ -এর তফসিল-১ -এর ১৩ নং ক্রমে কলেজ শাখার দুটি প্রবেশ পদের পর (গ) সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার (ঘ) সহকারী প্রধান শিক্ষক (ঙ) সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নামের পদগুলো সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্মারকের চিঠির কোনো জবাব না দেওয়ায় বিসিএস নিয়োগ বিধিতে পদটি যুক্ত করা হয়নি। 

ফলে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ আছে। এই ধাপ থেকে পরবর্তী উচ্চতর ধাপ ষষ্ঠ গ্রেড প্রধান শিক্ষক/জেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতিতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু বিধিগত জটিলতার কারণে নিচের দিক থেকে পদোন্নতি দিয়ে এই ধাপে কাউকে আনা যাচ্ছে না বা নতুন করে কাউকে নিয়োগ করা যাচ্ছে না। ফলে উপরের দিকে শূন্যতা তৈরি হচ্ছে।

৪. উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক/পরিদর্শিকা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৮ম গ্রেডভুক্ত একটি পদ। পদটি ক্যারিয়ার পাথ বহির্ভূত। সহকারী প্রধান শিক্ষক/সমমান পদ হিসেবে দুই বছর চাকরি করার পরে এখানে পদায়ন করা হতো। কিন্তু ক্যারিয়ার পাথ বহির্ভূত হওয়ার কারণে এখানে আর পদায়ন করা হয় না। বর্তমানে ক্যাডার পদে নবম গ্রেড থেকে পরবর্তী ধাপে পদোন্নতিযোগ্য অষ্টম গ্রেডে কোনো পদ নেই। 

পূর্বের পদ সোপানে পদটি ছিল কিন্তু বারবার পদটিকে আপডেট করার কথা বলা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো কথাই কানে তোলেননি। ফলে শিক্ষা প্রশাসনের নজরদারির অন্যতম পদটি  কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ পদের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় শিক্ষা নীতি- ২০১০ এ শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য প্রধান শিক্ষা পরিদর্শকের কার্যালয় স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।এ ছাড়াও কারিকুলাম বাস্তবায়েনে তদারকের দায়িত্ব এই পদটির উপরে ।

৫. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়/জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়/উপপরিচালকের কার্যালয়/মাউশি প্রধান কার্যালয়ে প্রধান শিক্ষক/জেলা শিক্ষা অফিসার/সহকারী পরিচালক/বিদ্যালয় পরিদর্শক/পরিদর্শিকা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ষষ্ঠ গ্রেডভুক্ত একটি পদ। এই ধাপ থেকে পরবর্তী ধাপে পদোন্নতি প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ আছে। ফলে মাউশি প্রধান কার্যালয়সহ অন্যান্য আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপরের পদটি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চালানো হচ্ছে।

৬. উপ-পরিচালকের কার্যালয়/মাউশি প্রধান কার্যালয়ে উপ-পরিচালক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৫ম গ্রেডভুক্ত একটি পদ। পূর্ববর্তী ধাপ থেকে এই ধাপে পদোন্নতি প্রক্রিয়া, দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ আছে। ফলে মাউশি প্রধান কার্যালয়সহ অন্যান্য আঞ্চলিক কার্যালয় পদটি ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে।

৭. মাউশি প্রধান কার্যালয়ে পরিচালক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৪র্থ গ্রেডভুক্ত একটি পদ। ‘ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট, ১৯৮১’ মোতাবেক বিদ্যালয়  পরিদর্শক/পরিদর্শিকা পদ হতে পদোন্নতি পেয়ে উপ-পরিচালক হওয়ার সুযোগ থাকলেও ১৯৮৯ সালের সংশোধনীতে উপপরিচালক পদ হতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ফিডার পদ হিসেবে বিদ্যালয়  পরিদর্শক/বিদ্যালয় পরিদর্শিকা পদের সাথে কলেজ শাখার সহযোগী অধ্যাপক ও টিটি কলেজের উপাধ্যক্ষের একটি সমন্বিত গ্রেডেশন লিস্ট তৈরি করে পদোন্নতি বিধান চালু করা হয়।  ফলে মাধ্যমিক থেকে এ পদে পদোন্নতির পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এখন পদটি শিক্ষা ক্যাডার থেকে পূরণ করা হচ্ছে।

পরিসংখ্যানগত বৈষম্য:   

১. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনের বর্তমানে কোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদে কেউ কর্মরত নেই। ৫০০টি সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা সমমান ও ৬৪টি সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদ শূন্য রয়েছে।

২. উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের প্রায় দুইশতটি পদ শূন্য রয়েছে। আরো অনেকগুলো শূন্য হবার পথে। 

৩. এই বছরে ই প্রায় সকল পুরোনো সরকারি হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক ও প্রায় সকল জেলা শিক্ষা অফিসারের পদ শূন্য হয়ে যাবে। মোট সরকারি হাইস্কুল ৬৯১টি তন্মধ্যে ৩১৯টি পুরোনো।

৪. শিক্ষা প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ উপ-পরিচালক আঞ্চলিক কার্যালয় এবং বিদ্যালয় পরিদর্শক পদগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে। উপ-পরিচালক পদগুলো জেলা শিক্ষা অফিসার/প্রধান শিক্ষকদের দিয়ে ভারপ্রাপ্ত করে কোনো মতো কাজ চালানো হচ্ছে। কিন্তু সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক ও বিদ্যালয় পরিদর্শক পদগুলো ভারপ্রাপ্ত হয়েও বর্তমানে কর্মরত কেউ নেই। ফলে ১০ অঞ্চলে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক ১০ জন এবং বিদ্যালয় পরিদর্শক ১০ জন সম্পূর্ণরূপে শূন্য রয়েছে।

৫. সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সহকারী জেলার শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি না হওয়ার কারণে প্রধান শিক্ষক বা জেলা শিক্ষা অফিসার পদ এবং এর পরবর্তী উচ্চতর ধাপের পদসহ শিক্ষা প্রশাসনের সব গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো আগামী কয়েক বছর যাবৎ শূন্য থাকবে এবং বিধি সংশোধন না হলে এটা যুগ যুগ এরকমই চলতে থাকবে।

৬. প্রায় ১৯ বছর চাকরি করেও প্রাপ্য টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পাননি প্রায় ৬ হাজার শিক্ষক।

৭. ডিজিটাল তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে আইসিটি বিষয়টি বাধ্যতামূলকভাবে চালু করেছে। এরই ধারাবাহিকাতায় সকল এমপিওভুক্ত স্কুলগুলোর জন্য ১৯৯৪ সাল থেকেই আইসিটি বিষয়ে শিক্ষকের পদ সৃজন ও নিয়োগ করা হলেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ বিষয়ে কোনো পদ সৃজনই এখন পর্যন্ত হয়নি। 

এছাড়াও লিডিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হলেও এখানে কোনো ল্যাব সহকারী নিয়োগ করা হয় নাই। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ল্যাবগুলো কার্যত অচল হয়ে পরে আছে অথচ এমপিওভুক্ত স্কুলগুলোতে ল্যাব সহকারী নিয়োগ করা হচ্ছে।

৮. সরকারি মাধ্যমিকে ১৯৯৮ সালে প্রধান শিক্ষক (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে পরবর্তী উচ্চতর ধাপে পদোন্নতি না পেয়ে এ বছরে প্রায় সকল প্রধান শিক্ষকই অবসরে চলে যাচ্ছেন বা ইতোমধ্যে অনেকেই চলে গেছেন।

৯. সহকারী শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষক পদকে ক্যাডার মর্যাদা প্রদানসহ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক/শিক্ষিকাদের পদ-সোপানে ক্যাডার মর্যাদায় আরও নতুন অ্যাকাডেমিক ধাপ সংযোজন করে তাদের পদোন্নতির সুযোগ না বাড়ালে শিক্ষক/শিক্ষিকাদের অনেকে আগামী ৩/৪ বছরের মধ্যে তাঁদের স্ব স্ব ভোগরত স্কেলের সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে যাবেন। ফলে আগামী ৩/৪ বছরের মধ্যে তাদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন। ফলে এ খাতে কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে এবং এখানে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে মাধ্যমিক নিয়ে কাজ করা বিদগ্ধজন মনে করেন।

উপরে বর্ণিত বিদ্যমান সোপানে উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে সৃষ্ট বৈষম্য শিরোনাম অংশে বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখা কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তাদের বর্তমান পদ এবং পরবর্তী ধাপে পদোন্নতিতে বিধিবিধানগত জটিলতা থাকার কারণে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনের প্রায় সকল পদ ভারপ্রাপ্ত বা অনেক জায়গায় পদশূন্য অবস্থায় চলছে। এতে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসন এবং মাধ্যমিক শিক্ষার আইডল খ্যাত জিলা স্কুল/সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন ভোঁতা হতে চলেছে।

এছাড়াও দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে একই পদে অবস্থান করে শিক্ষক/কর্মকর্তাগণ হতাশার মধ্য দিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন এবং নতুন মেধাবীরাও এখানে চাকরি নিয়ে এসে বেশিদিন থাকছেন না বা অনেকেই এ শাখায় চাকরি নিতে চান না। ফলে দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে এবং সরকার আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

তাছাড়া ২০২৩ সাল থেকে চালু নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নও হুমকিতে পড়বে শিক্ষা প্রশাসনের এ হীন অবস্থার কারণে। কারণ বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখাকে দুর্বল করে এ কারিকুলাম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন অসম্ভব। সরকার ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের দক্ষিণ এশিয়ার সুইজারল্যান্ড খ্যাত সোনার বাংলা বিনির্মাণের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা কার্যত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না যদি না মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনের এই জটিলতা নিরসন করা না হয়। কেন না হতাশায় নিমজ্জিত কোনো জনশক্তি দিয়ে ভালো ফলাফল আশা করার চাইতে না করাই শ্রেয় বলে সুস্পষ্ট ভাবে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বর্ণিত রয়েছে।

মুক্তির উপায়: 
আর পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে একটি সুসামঞ্জস্য পদ সোপান প্রণয়ন করা অতীব জরুরি। বিভিন্ন বিধি-বিধান অধ্যয়ন করে এবং অন্যান্য দপ্তরের পদ সোপান দেখে এটা স্পষ্ট যে সরকারি মাধ্যমিকের প্রবেশ পদ এবং পরবর্তী ধাপ সিনিয়র শিক্ষক পদ মিলিয়ে নিচের এই দুইটি পদকে ক্যাডার ভুক্ত করলে খুব সহজেই এই জটিলতা নিরসন করা সম্ভব। অন্যথায় বিদ্যমান পদ সোপানে ধাপগত যে জটিলতা রয়েছে তা সহজে নিরসন করে একটি সুসামঞ্জস্য পদ সোপান প্রণয়ন বেশ দুরূহ এবং অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয় বলে মাধ্যমিক নিয়ে কাজ করা বিদগ্ধজন মনে করেন।

সমস্যা সমাধানে বিকল্প প্রস্তাব
১. একটি সুসামঞ্জস্য পদ সোপান প্রণয়ন ও
২. স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের প্রয়োজনীয়তা

লেখক: সহকারী শিক্ষক, ডুমুরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা


সর্বশেষ সংবাদ