আত্মহত্যার ট্রেন্ড: মনোঃসামাজিক অস্থিতিশীলতার বহিঃপ্রকাশ

লেখক তাহমিদ তাজওয়ার 
লেখক তাহমিদ তাজওয়ার   © সংগৃহীত

করোনা এবং করোনা পরবর্তী সময়ে আত্মহত্যার মতন ঘৃণিত ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে এ ধরনের ঘটনার খবর ব্যাপক হারে শোনা যাচ্ছে। যা একইভাবে প্রকাশ করছে সামাজিক অস্থিতিশীল এবং তরুণ প্রজন্মের মানসিকভাবে ভঙ্গুর অবস্থা। 

এক্ষেত্রে সমাজব্যবস্থা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী মানসিক দীনতা। ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, পারিবারিক জটিল অবস্থা, অর্থনৈতিক দূর্বলতা  ব্যক্তিজীবনে সৃষ্টি করে হতাশা, দূর্বলতা এবং পাহাড়সম চাপ। পরিস্থিতি সামাল দেবার মতো যথাযথ যোগ্যতা এবং পাশে থাকবার মতন ভরসার কেও না থাকলে যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষকে প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে।

পাশাপাশি ভোগবাদী মানসিকতা এবং সামর্থ্যের সীমানাকে অতিক্রম করার মতন ক্যারিয়ার গড়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা ব্যক্তিজীবনে সুখকে হওয়ায় মিলিয়ে দিচ্ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যাকারীর মাঝে ৪৪৬ জন ছিল শিক্ষার্থী। ২০২১ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজারের বেশি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। বিবিএসের সূত্রমতে, প্রতি লাখে ৮ দশমিক ৪ জন লোক আত্মহত্যায় প্রাণ হারাচ্ছে।

২০২০ সালে সর্বমোট ১৩ হাজার ৮১৪ জন মানুষ সারা দেশে আত্মহত্যা করে। ২০১৯ সালে ১২ হাজার ৯৫৮ জন আত্মহনন করে। পুরো বিশ্বে আত্মহত্যায় মৃত্যু হওয়া লোকদের ২.০৬% বাংলাদেশি। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় সামাজিক সমস্যা। যদিও সরকার ২০৩০ সালের মাঝে এটিকে ২ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।

এ সমস্যা উত্তরণের জন্য সমাধান রয়েছে। দরকার হচ্ছে তার যথাযথ ব্যবহার। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্যে এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। কেননা অধিকাংশই আবেগের সাথে বাস্তবতাকে মেলাতে ব্যর্থ হয়। আর কৈশোরের নির্ঝঞ্ঝাট এবং চাপমুক্ত জীবন পাড়ি দেবার পর হুট করে দায়িত্ব নেওয়ার মতন মানসিক চাপ অনেকেই নিতে পারে না।

পারিবারিক কাউন্সিলিং, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং এন্টি-সুইসাইড ক্যাম্পেইন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহমর্মিতার চর্চা সামাজিক ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

ব্যক্তি পর্যায়ে ধর্মীয়, নৈতিক মূল্যবোধ চর্চা এবং সুস্থ সামাজিক মেলবন্ধনই পারে কোনো একজন হতাশাগ্রস্থের মানসিক পীড়াকে প্রশমিত করতে। সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ যুব উন্নয়ন অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে যুগোপযোগী উদ্যোগ নেওয়া এ সমস্যা সমাধানে সময়ের দাবি।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ