গণহারে এমপিও ফাইল রিজেক্ট, শিক্ষকদের ক্ষোভ

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর  © ফাইল ফটো

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সদ্য যোগ দেয়া শিক্ষকরা ‘এমপিও ফাইল রিজেক্ট’ নিয়ে চরম হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। গণহারে ফাইল রিজেক্ট হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

ভুক্তভোগী শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৪ হাজার ৭৩ জনকে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। সুপারিশ পাওয়ার পর থেকেই পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। প্রতিষ্ঠান প্রধান, ম্যানেজিং কমিটির পর উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা কোন কারণ ছাড়াই তাদের এমপিও ফাইল আটকে রাখছেন। ঘুষ না দিলে ফাইল ছাড়ছেন না তারা।

সুপারিশপ্রাপ্তদের অভিযোগ, এমপিও পেতে যত ধরনের কাগজ লাগে সবগুলো সঠিকভাবে জমা দিচ্ছেন তারা। তবে কেবলমাত্র ঘুষ না দেয়ার কারণে তাদের সেই ফাইলগুলো ছাড়া হচ্ছে না। কোনোভাবে ‘ম্যানেজ’ করে এমপিওর জন্য ফাইল সাবমিট করা হলেও সেই ফাইল কোন কারণ ছাড়াই রিজেক্ট করছে মাদ্রাসা অধিদপ্তর। এমনকি নির্ধারিত কাগজ জমা দেওয়া হলেও ফাইল রিজেক্টে বলা হচ্ছে ফাইল জমা দেওয়া হয়নি। এতে চরম হতাশায় ভুগছেন তারা।

আরও পড়ুন: শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক করবে এনটিআরসিএ, আলোচনায় চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি

মোয়াজ্জেম হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী জানান, আমার এমপিও ফাইল রিজেক্ট করে বলা হয়েছে আমি এনটিআরসিএর সুপারিশপত্র জমা দেইনি। অথচ সুপারিশপত্র পিডিএফ আকারে জমা দিয়েছি। তার স্ক্রিন শটও আছে আমার কাছে। যোগদানের শুরু থেকেই পদে পদে আমাদের এভাবে হয়রানি করার কোনো মানে হয় না।

সালেহীন শিমুল নামে আরেক প্রার্থী জানান, আমাদের যোগদানে হয়রানির শেষ নেই। এমপিও আবেদনে পদে পদে ঘুষের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। আমাদের বলা হয়ে থাকে দেশ গড়ার কারিগর। অথচ যেভাবে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীদের কি শেখাতে পারবো সেটি বুঝতে পারছি না। এভাবে ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের কবলে পড়তে হবে তা ভাবিনি।

আনোয়ার হোসেন নামে আরেক প্রার্থী জানান, খুব হতাশ হলাম, আমার এমপিও ফাইল রিজেক্ট করা হয়েছে। বাড়ির পাশে হলে তাও না খেয়ে কোনোভাবে থাকা যেত। তবে অন্য জেলায় সুপারিশ পাওয়ায় সামনের মাসের রুমভাড়া, খাবার খরচ কিভাবে দেব ভেবে পাচ্ছি না। এই ঘুষ বাণিজ্য বন্ধে সরকারের একটা ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

আরও পড়ুন: প্যানেলের দাবিতে ৬৪ জেলায় মানববন্ধন করবে নিবন্ধনধারীরা

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রুহুল আমিন, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু নঈমকে ফোন দেয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজারের বেশি পদে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গত বছরের ১৫ জুলাই তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। তবে প্রার্থী না থাকায় এবং মহিলা কোটা পূরণ না হওয়ায় ৩৮ হাজার ২৮৩ জনকে নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়। সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪ হাজারের বেশি প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করে না পাঠানোয় ৩৪ হাজার ৭৩ জন নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয় এনটিআরসিএ।

গত মাসের ২১ জানুয়ারির পর থেকেই সুপারিশপ্রাপ্তরা যোগদান করা শুরু করে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে গত ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের বড় একটি অংশ এমপিওর জন্য আবেদন করেন। তবে কোন কারণ ছাড়াই একে একে আবেদনকৃতদের ফাইল রিজেক্ট হতে থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ