লোকবল সংকটে এনটিআরসিএর কার্যক্রমে ধীরগতি

লোগো
লোগো  © ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন ধরে লোকবল সংকটে ভুগছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এর ফলে গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্তদের ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন নিবন্ধনের কার্যক্রমের জট কাটছে না। বিষয়টি সমাধানে বারবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হলেও এ বিষয়ে কর্ণপাত না করার অভিযোগ উঠেছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে, পরীক্ষা গ্রহণ ও নিয়োগ সুপারিশ করে থাকে এনটিআরসিএ। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে তিনটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করেছে। যদিও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্তদের ভেরিফিকেশন কার্যক্রম চলছে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রমের ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপারিশপ্রাপ্ত ৩৮ হাজারের বেশি শিক্ষক। এর আগে এই গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের সময় নিয়েও কালক্ষেপনের অভিযোগ ছিল এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে। এছাড়া ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফল প্রকাশ এবং ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন কার্যক্রমের ধীরগতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় একই ব্যক্তিকে একাধিক কাজ করতে হচ্ছে। এর ফলে সব কাজেই কিছুটা ধীরগতি এসেছে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চান তারা।

আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষা সচিব আবু বকর ছিদ্দীকের যোগদান

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনটিআরসিএর জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিতে একজন চেয়ারম্যান এবং তিনজন সদস্য থাকার কথা। তবে দীর্ঘদিন ধরে একজন সদস্যের পদ শূন্য রয়েছে। নিয়োগ কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় এই পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তবে বারবার তাগাদা দেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তা পূরণে উদ্যোগ নেয়নি মন্ত্রণালয়। ।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে ফলাফল প্রস্তুতের কাজ করার জন্য একজন স্থায়ী সিস্টেম এনালিস্টও নেই। সম্প্রতি ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফল প্রস্তুত করতে অন্য আরেকটি সংস্থা থেকে একজন সহকারী সিস্টেম এনালিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পদ ফাঁকা থাকার ফলেই মূলত এনটিআরসিএ কোনো কাজই সঠিক সময়ে শেষ করতে পারছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও এই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন কমছে ১ হাজার

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএ’র এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বেসরকারি শিক্ষকদের ভেরিফিকেশনসহ নিবন্ধন পরীক্ষার কাজ আটকে আছে দুইটি পদ শূন্য থাকায়। একটি হচ্ছে আমাদের একজন সদস্য নেই। আরেকটি হচ্ছে স্থায়ী সিস্টেম এনালিস্টের অভাব। সদস্যের যে পদটি শূন্য সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ওই শাখা থেকেই নিয়োগের সব বিষয় দেখা হয়।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের কাজ যে প্রতিষ্ঠানটি করে থাকে সেই প্রতিষ্ঠানে একজন স্থায়ী সিস্টেম এনালিস্ট নেই। প্রার্থীরা শুধু এনটিআরসিএকে দোষারোপ করে। তবে আমাদের হাত বাধা। মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো সমাধান না করা হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধীরগতি কাটবে না।

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্বে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটিতে জনবল সংকটের বিষয়ে জানেই না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের দাবি এনটিআরসিএ যে লোকবল সনংকটে ভুগছে সে বিষয়টি তাদেরকে জানানো হয়নি। লিখিত পেলে শূন্যপদ পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন: পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগের দাবি

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) ফৌজিয়া জাফরীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এনটিআরসিএ আমাদেরকে শূন্য পদের বিষয়ে কিছু জানায়নি। মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে বলা হলে তিনি বলেন, মৌখিক কোনো কিছু গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানাতে হবে। চিঠি পেলে আমরা দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠাবো।

এদিকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বদলীর বিষয়টি দেখভাল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি দপ্তরের শূন্যপদ পূরণে আন্তরিক। তারা বলছেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে জনবলের যে সংকট রয়েছে সেগুলোর তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পাঠালে এই পদগুলো দ্রুত পূরণ করা হবে।

আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি ঢাবি শিক্ষক সমিতি

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এনটিআরসিএ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। এই মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটির শূন্য পদ পূরণে চাহিদা দেয়া হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলির মাধ্যমে ওই পদ পূরণ করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীককে ফোন করা হলে নতুন যোগ দেয়ায় তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


সর্বশেষ সংবাদ