বাছাই করা মেধাবীদের মাস্টার্সে ভর্তির প্রস্তাব ইউজিসির

লোগো
লোগো  © ফাইল ছবি

মাস্টার্সে ঢালাওভাবে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগের বদলে শুধুমাত্র বাছাই করা মেধাবীদের সুযোগ দেওয়া উচিৎ বলে মনে করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এই প্রস্তাবসহ আরও ২০টি প্রস্তাব তুলে ধরেছে। গত বৃহস্পতিবার ইউজিসির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতির হাতে এ প্রতিবেদন তুলে দেওয়া হয়।

ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে উচ্চশিক্ষাস্তরে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রিকে প্রান্তিক ডিগ্রি হিসেবে গণ্য করা হয়। মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম বাছাই করা মেধাবী স্নাতকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠোমোগত সুযোগ-সুবিধা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকলেও সেখানে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: লাল তালিকায় আসছে উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়

ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সরাসরি মাস্টার্স ডিগ্রিতে ভর্তির সুযোগ না রেখে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করা দরকার। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর গবেষণা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্কলারশিপ/টিচিং অ্যাসিস্টেন্টশিপ/ফেলোশিপের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গুচ্ছে ‘সেকেন্ড টাইম’ রাখার পক্ষে ইউজিসি সদস্য ড. আলমগীর

সুপারিশে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি সফটওয়্যার প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণে ইচ্ছে মতো আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান আর্থিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে। ইউজিসিতে এ ধরনের প্রমাণ মিলেছে। একটি সমন্বিত আর্থিক নীতিমালা ও ম্যানুয়েল প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।

সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, দেশে উচ্চশিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র ০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা যেকোনো বিচারে অপ্রতুল।

আরও পড়ুন: অভিযোগ উঠলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা: ইউজিসি

কাজেই জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষায় খাতওয়ারী বরাদ্দ চিহ্নিত করে ইউজিসিকে ২০২২ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে জাতীয় কাজের ২ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব, উচ্চশিক্ষার মানবৃদ্ধিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন, সুপরিচিত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসে সীমিত আকারে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, এমফিল-পিএইচডি করার অনুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বন্ধে একটি নীতিমালা প্রণয়ন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্স বন্ধ করে ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স, ভোকেশনাল ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালুসহ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ইউজিসি বার্ষিক প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেছে। দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে যেসব বিষয় বাধা হিসেবে কাজ করছে, সেসব সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। ইউজিসির দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দেশে উচ্চশিক্ষার মানবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। দেশের স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি বড় ভূমিকা পালন করবে।


সর্বশেষ সংবাদ