মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে ভেরিফিকেশন ছাড়াই যোগদান: এনটিআরসিএ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ  © ফাইল ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুপারিশপ্রাপ্তদের ভেরিফিকেশন কার্যক্রম চলমান রেখে অথবা ভেরিফিকেশন ছাড়াই চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়নি।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা এ তথ্য জানায়।

আরও পড়ুন: ভেরিফিকেশনে বছর পার, সুপারিশপ্রাপ্তদের ক্ষোভ বাড়ছে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা জানান, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ভেরিফিকেশন ছাড়া যোগদান করানো যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। অনেকেই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। আবার অনেকে বলেছেন, যাদের ভেরিফিকেশন শেষ হয়েছে তাদের সুপারিশপত্র দিয়ে দেয়ার। তবে বিষয়টি কার্যকর করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রয়োজন।

ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শেষ হতে কত সময় লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে ফোন দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তবে এখন আমাদের হাতে কিছু নেই। মন্ত্রণালয় চাইলে প্রার্থীদের দ্রুত যোগদান সম্ভব। না হলে ভেরিফিকেশন শেষ হলেই সুপারিশপত্র দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: ১৭তম নিবন্ধনের নতুন বিজ্ঞপ্তি জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে

এদিকে চাকরির জন্য প্রাথমিকভাবে সুপারিশ পাওয়া অনেক প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টি ছিল না। পুলিশ ভেরিফিকেশন না থাকায় প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রার্থীরা জানান, তিন বছর অতিবাহিত হলেও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি এনটিআরসিএ। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় হতাশা ও অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন তারা। সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রার্থীরা। এভাবে আর কত অপেক্ষা করতে হবে সেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষে কাছে।

এ প্রসঙ্গে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ পাওয়া প্রার্থী মো. আলী জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএ চাইলে ভেরিফিকেশন চলমান রেখেও সুপারিশপত্র দিতে পারে। তবে সেটি তারা করছে না। কবে সবার ভেরিফিকেশন শেষ হবে আর কবে যোগদান করতে পারবো সেই অনিশ্চয়তা কাটছে না।

আরও পড়ুন: ৩৮ হাজার শিক্ষকের পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ কবে?

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ পেয়ে বেসরকারি এনজিওর চাকরি ছেড়ে দিয়েছি জানিয়ে আরেক প্রার্থী মো. জয়নাল জানান, বেসরকারি একটি এনজিওতে চাকরি করতাম। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ পাওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। ৩ মাসের বেশি সময় হয়ে গেলেও এখনো চূড়ান্ত যোগদানপত্র পাইনি। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টের মাঝে দিন পারতে করতে হচ্ছে।

তথ্যমতে, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১৫ জানুয়ারি।

এদিকে, ২০২১ সালের ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার শূন্যপদের বিপরীতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে বিভিন্ন নিবন্ধনের রিটকারীদের জন্য ২ হাজার ২০০টি পদ সংরক্ষণ করে বাকি পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। আবেদন না পাওয়ায় এবং মহিলা কোটায় যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদ ফাঁকা রেখে ৩৮ হাজার ২৮৬ পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। তবে ৬ হাজার ৩ জন প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণ করে না পাঠানোয় ৩২ হাজার ২৮৩ জনের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ