বদলির সুযোগ নেই, নানা ভোগান্তিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি বন্ধ রয়েছে। বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ ও সমপর্যায়ের মাদ্রাসার শিক্ষকদের ভোগান্তিরও শেষ নেই। নিজেদের নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে দ্রুত বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করার দাবি জানিয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন কমিটি নামে একটি সংগঠন।

শুক্রবার (০৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

সিরাজগঞ্জের অধিবাসী লক্ষ্মীপুরের একটি কলেজের শিক্ষক সৈয়দ এ আজম বলেন, হয়তো অনেকেই জানেন না, দেশের অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে বদলির ব্যবস্থা থাকলেও একমাত্র এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কোনো বদলির ব্যবস্থা নেই। বদলির ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের জীবনটা অনেকটাই যাযাবরের মতো। 

‘গত পাঁচ বছরে ধরে আমি চাকরি করছি। আমার বাবা-মা সিরাজগঞ্জের গ্রামে থাকেন। তারা অসুস্থ, বৃদ্ধ। আমি দূর থেকে তাদের আত্মচিৎকার উপলব্ধি করতে পারি, কিন্তু কিছুই করার থাকে না। এটা যে কত কষ্টের, যারা বাইরে আছেন, বিভিন্ন জেলায় চাকরি করছেন, তারাই বলতে পারবেন।’

বদলির ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে এই শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, এই চাকরিতে বদলির ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় শিক্ষকরা অনেক সময় সিন্ডিকেট তৈরি করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষকদের নির্যাতন করে। সিন্ডিকেটের আওতায় শিক্ষকরা পড়লে তাদেরকে মানুষও মনে করা হয় না অনেক সময়।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বিবিয়ানা মডেল কলেজে শিক্ষকতা করেন নীলফামারীর ডোমরা উপজেলার অধিবাসী মো. ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে সরকার বদলির নীতি কার্যকর করার কথা বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা এলক্ষ্যে সরকারের বিশেষ কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের দাবি, ২০২০ সালের মধ্যেই সরকার এই আইন কার্যকর করুক। কিন্তু এর আগে আমাদেরকে আশস্ত করতে এলক্ষ্যে গেজেট প্রকাশ করা হোক।

ফরহাদ হোসেন আরও জানান, তার মা নেই, বাবা আছেন। দূরে চাকরি করার কারণে ঠিক মতো বাবার খোঁজখবর রাখতে পারছেন না। অন্যদিকে তার বেতনের ১৬ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজারই চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়। স্বল্প বেতন ও দূরে কর্মস্থল হওয়ায় বিয়ে করারও সাহস পাচ্ছেন না। এই বেতনে গ্রামের বাড়িতে থেকে চাকরি করতে পারলে তার সমস্যার সমাধান হবে। তার মতো আরও অনেকেই এমন সমস্যায় রয়েছেন। বদলির ব্যবস্থা থাকলে অনেকেই এতে উপকৃত হবেন।

বক্তারা বলেন, এমপিও নীতিমালা ২০১০ ও ২০১৮-তে উল্লেখ আছে সরকার চাইলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু করতে পারবে। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে জানা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি ব্যবস্থা চালু হবে।

কিন্তু বদলির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা বা প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। তাই আমাদের সবার দাবি, আমাদের নিজ নিজ এলাকায় বদলি করে শিক্ষা প্রদানের ধারাকে আরও উন্নত করার কাজে সহায়তা করুক সরকার।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সদস্য সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, দিলীপ সরকার, রবিউল ইসলাম, আবুল হোসেন, মতিউর রহমান দুলাল, আবুল বাশার নাদিম, কায়েদে আজম জয়, অপু ইসলাম প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ