ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য গ্রহ রেখে যাওয়া সকলের দায়িত্ব: ইউজিসি চেয়্যারম্যান

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর  © টিডিসি ফটো

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য গ্রহ রেখে যাওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস মিলনায়তনে পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (ইএসডিএম) বিভাগ কর্তৃক প্রথমবারের মতো আয়োজিত  আন্তর্জাতিক ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সাসটেনেবলিটি (আইএসসিসিইএস) ২০২৪’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন। 

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো নিয়ে গবেষক ও পরিবেশকর্মীসহ অংশীজনরা নানা আশঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিল। এখন আমরা সে ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাবক গ্রিনহাউজ গ্যাস ও কার্বন নির্গমন বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দায়ী দেশগুলোর তালিকায় না থেকেও বাংলাদেশ ভয়াবহভাবে এর ক্ষতিকর প্রভাবের মুখোমুখি। বৈশ্বিকভাবে এসব বিষয়ে নানা আলোচনা হলেও এর ফলপ্রসূ কোনো দিক পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ক্ষমতাধর দেশগুলোতে গ্রিনহাউজ গ্যাস ও কার্বন নির্গমন কমানো হচ্ছে না।

ইউজিসির চেয়ারম্যান আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের মতো দেশগুলোকে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্ভাবন ও গবেষণায় অগ্রাধিকার দিয়ে টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিস্থিতি ও টেকসই পরিবেশ উন্নয়নের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আজকের এ সেমিনার খুবই প্রাসঙ্গিক আয়োজন। আয়োজকদের ধন্যবাদ ও সেমিনারের সফলতা কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

এসময় সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম। ইএসডিএম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সেমিনারের আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আতিকুর রহমান ভূঞা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সেমিনারের সদস্যসচিব ও ইএসডিএম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জয়ন্ত কুমার বসাক।  

সেমিনারে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অধ্যাপক হেইউন তে কিম এবং তার দল অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও নোয়াখালীর বাহিরে ব্র্যাক, কুয়েটসহ বাংলাদেশের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন।  

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, গত কয়েক দশক ধরে প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে, এখন তার ফলাফল আমাদের সামনে ভয়াবহভাবে উপস্থিত। অনাবৃষ্টিপ্রবণ এলাকায় বন্যা হচ্ছে। বৃষ্টিপ্রবণ এলাকায় তীব্র তাপদাহ ও খরা। এগুলো মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিকভাবেই পরিবেশের নানা সংকট দেখা দিচ্ছে। এরমধ্যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে তীব্র তাপদাহ অনুভূত হচ্ছে। মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইএসডিএম বিভাগের আজকের এ সেমিনার সময়োপযোগী একটি আয়োজন। আয়োজকসহ ও দেশবিদেশের আগত অতিথিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশে নানা পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। এসব পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকগুলো কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যাবে, সেগুলো নিয়ে গবেষণা ও গবেষণাধর্মী আলোচনার প্রয়োজন। আজকের এ সেমিনার তেমনই একটি আয়োজন। অনুষ্ঠানের সফলতা কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।  

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, বাংলাদেশের মতো বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলে আমরা তীব্র তাপদাহ অনুভব করছি। আবার মধ্যপ্রাচ্যে মরু অঞ্চলের দেশে বন্যা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই এমনটি ঘটছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বৃক্ষরোপণে জোর দিয়েছেন। নোবিপ্রবির ইএসডিএম বিভাগ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। পাশাপাশি আজকের এ সেমিনার খুবই প্রশংসীয় একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে গবেষকদের মতবিনিময়ের সুযোগ হবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

প্রসঙ্গত, সেমিনার উদ্বোধনের পর দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ে নোবিপ্রবি ও গিয়ংসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রিপাবলিক অব কোরিয়ার মাঝে সমঝোতা (এমওইউ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম এবং গিয়ংসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে অধ্যাপক হেইউন তে কিম স্বাক্ষর করেন।

উক্ত এমওইউর ফলে নোবিপ্রবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ইকোলজি ও কৃষিসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা সহায়তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা সহজতর হবে। এছাড়া এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে অনুষদভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময়সহ যৌথ গবেষণা এবং ল্যাব সুবিধা আরো বৃদ্ধি পাবে।

 

সর্বশেষ সংবাদ