যোগদানে ভোগান্তি, ব্যবস্থা নিতে তিন অধিদপ্তরে চিঠি দেবে এনটিআরসিএ

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও এনটিআরসিএ লোগো
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও এনটিআরসিএ লোগো  © ফাইল ছবি

বিভিন্ন ধাপ উতরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ পান শিক্ষকেরা। নিয়ম অনুযায়ী এসব শিক্ষকের সরাসরি স্কুল কলেজে যোগ দেয়ার কথা। তবে ম্যানেজিং কমিটি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের কারণে যোগ্যতা ও সরকারের নির্দেশনার পরও কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে পারছেন না শিক্ষকরা। এ অবস্থায় যোগদানে বাধা দেওয়া প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে এনটিআরসিএ।

এ বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহিল আজম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষকদের যোগদানের ক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগ পুরোনো। যোগদানের ক্ষেত্রে যেন কেউ ভোগান্তিতে না পড়েন, সেজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠাব।

জানা গেছে, সুপারিশপত্র থাকার পরও নানা অজুহাতে শিক্ষকদের কাছে টাকা দাবি করা হয়। দাবিকৃত অর্থ না দেওয়া যোগদানের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়। যোগদান করতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকাও দাবি করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ অর্থ ২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। নানা দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। 

সুপারিশপত্র থাকার পরও নানা অজুহাতে শিক্ষকদের কাছে টাকা দাবি করা হয়। দাবিকৃত অর্থ না দেওয়া যোগদানের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়। যোগদান করতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকাও দাবি করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ অর্থ ২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। নানা দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার একজন শিক্ষক বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পর স্কুলে যোগদানের জন্য গেলে আমাকে যোগদানে বাধা দেওয়া হয়। পরে আরেক শিক্ষকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নামে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। আমি ২০ হাজার টাকা দিলে সে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বাধ্য হয়ে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি।

বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার এক ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান বলেন, যোগদান করতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। অভিযোগ করতেও ভয় লাগে। নিজ বাড়ি থেকে এত দূরের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। প্রতিষ্ঠান প্রধান আর ম্যানেজিং কমিটি অনেক শক্তিশালী। ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা জলে থেকে কখনো কুমিরের সঙ্গে লড়াই করা যায় না। সেজন্য সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করেই যোগদান করেছি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা প্রক্রিয়ার পর যোগ্যতাসম্পন্নদের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া হলেও দুর্নীতি কমছে না। যোগদানের পর উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ে এমপিওভুক্তির জন্য টাকা দিতে হয়। এসব বন্ধে দুর্নীতি দমন কমশিন, শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। প্রয়োজনে এসব জায়গায় অভিযোগ দিতে হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই ভুক্তভোগীদের ভোগান্তি কমে আসবে।

আরও পড়ুন: ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় জানালেন এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান

জানা যায়, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থীদের সনদ দিতে ২০০৫ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে এনটিআরসিএ। এ সনদ নিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য স্কুল কলেজে আবেদন করতেন প্রার্থীরা। এরপর ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিয়োগ পেতেন শিক্ষকরা। কিন্তু এতে বড় ধরনের দুর্নীতি ও অদক্ষ লোকরা শিক্ষকতা পেশায় ঢুকতেন। এ জটিলতা নিরসনে ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতায় পরিবর্তন করে এনটিআরসিএকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু দায়িত্ব দেয়ার পর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া গতি হারিয়েছে। অন্যদিকে নিয়োগ পেতে শিক্ষকদের ঘুষও দিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যারা এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে সুপারিশ পান তাদের যোগদানের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা তৈরি করা যাবে না। এ বিষয়ে আমরা কঠোর। কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুৃক্তির বিষয়ে আমরা অটোমেশন পদ্ধতি চালুর চিন্তাভাবনা করছি। এটি বাস্তবায়ন হলে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমবে। শিক্ষকরা নিজেরাই ঘরে বসে এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারবেন।


সর্বশেষ সংবাদ