‘গাফ্ফার চৌধুরীর লেখনীতে অন্ধকার থেকে আলোর নির্দেশনা ছিল’

গাফফার চৌধুরী ও আরেফিন সিদ্দিক
গাফফার চৌধুরী ও আরেফিন সিদ্দিক  © সংগৃহীত

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রয়াত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছেন, তিনি কিংবদন্তি গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারি’র জন্য চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন।

ভাষাসৈনিক,  রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক ও কবি গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে আজ শুক্রবার এক শোক বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন বলেন, বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্মরণে সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটি লেখা ছড়া আর কিছু যদি নাও করতেন, তবুও শুধু অমর একুশের কিংবদন্তি গানটি লেখা জন্যই গাফফার চৌধুরী অমর হয়ে থাকতেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে তার বলিষ্ঠ, সাহসী ও বস্তুুনিষ্ঠ মতামত দিয়ে জাতির সেবা করেছেন যা দেশের সাংবাদিকতার অঙ্গনে বিরাট অবদান বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, এই প্রবীণ সাংবাদিক এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে অবিরাম যোগাযোগ তৈরিতে তার কলাম, প্রবন্ধ এবং প্রতিবেদনগুলো পাঠ্য হিসাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আরেফিন বলেন, ‘যদিও গাফফার চৌধুরীর মতো একজন সাহসী, নিবেদিতপ্রাণ এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক হওয়া খুব কঠিন, তবুও আমি আশা করি নতুন প্রজন্ম জাতির সেবা করার এই কঠিন কাজে নিজেদের নিয়োজিত করবে।

আরও পড়ুন: ছাত্রজীবনে আর্থিক অনটনে ছিলেন গাফ্‌ফার চৌধুরী, কর্মজীবন শুরু ৭০ টাকায়

গাফফার চৌধুরীর মৃত্যু সত্যিকার অর্থে জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি এবং এই ক্ষতি কখনো পূরণ হওয়ার নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার মৃত্যুতে দেশের সাংবাদিকতার অঙ্গনের একটি বটবৃক্ষের বিদায় হলো।

তিনি বলেন, ‘আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে, গাফ্ফার চৌধুরী সর্বদা বস্তুনিষ্ঠ কলাম লিখতেন যাতে জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা থাকতো। আমরা এখন এই কলামগুলো থেকে বঞ্চিত হব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি পাকিস্তান আমলে এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে যখন জাতি অন্ধকারে ছিল তখন কিভাবে তিনি তার উদ্দেশ্যমূলক কলামের মাধ্যমে জনগণকে উজ্জীবিত ও আশাবাদী রেখেছিলেন।’

গাফফার চৌধুরী আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, চৌধুরী কলাম, সম্পাদকীয় বা অপ-এড লেখার সময় সাংবাদিকতার মৌলিনীতির বাইরে যাননি।

তার লেখায় সর্বদা খুব সহজ ভাষায় সত্য তথ্য দিয়েছন। কারও প্রতিক্রিয়ার তেয়াক্কা না করে সাহসিকতার পরিচয় দিযয়েছেন এবং সহজ ভাষায় অনেক কঠিন বিষয় বর্ণনা করেছেন।
তিনি স্মরণ করেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় আসে, তখন একটি শোচনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়।
তিনি উল্লেখ করেন যে, সে সময় গাফফার চৌধুরীর কলাম জাতিকে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।

এমনকি আওয়াামী লীগ যখন ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে, তখনও তিনি তার কলামের মাধ্যমে সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন যাতে জনগণের কল্যাণে সরকার পরিচালনা করা হয়।

অধ্যাপক আরেফিন মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী গতকাল সকালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ